মনুস্মৃতি

মনুস্মৃতি 

আনুমানিক ৩৪০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে একদল আক্রমণকারী উত্তর পশ্চিম সীমান্ত থেকে এসে এ দেশ জয় করে নেয় । তারা শুধু যে অধিবাসীদের আধিভৌতিক জীবনকেই নিজেদের অধীনে নিয়ে । আসে তা নয় , সংস্কৃতির ক্ষেত্রেও তারা আক্রমণ চালাতে চায় । এমনকি বেদ - এর উপরেই তারা ব্যাপকভাবে প্রভাব বিস্তার করতে চায় । বেদ ধর্মীয় ক্ষেত্রে , ব্যক্তিগত সম্পর্কের ক্ষেত্রে , সামাজিক আচার - আচরণে জীবন যাত্রার পথে আলােকসম্পাত করে ভারতীয়দের পথ প্রদর্শন করত এবং একেশ্বরবাদী ছিল । বলপূর্বক তাকে পারসিক সূর্য এবং ইন্দ্র - উপাসনা এবং বলিদানের ধর্মীয় রীতির সঙ্গে মিশ্রিত করে দেওয়া হয় । মুনি - ঋষিরা অনেকে দক্ষিণ ভারতে পলায়ন করেন , হিমালয়ের গুহাকরে আশ্রয় গ্রহণ করেন । পারস্য এবং এশিয়া মাইনর থেকে আগত শাসকগণ সমাজকে বিভক্ত করে তাকে দুর্বল এবং পদানত করে নিজেদের রাজকার্যে ব্যবহার করতে চায় । 

পরে আনুমানিক ৩২৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে মনু ( অনেকের দৃঢ় বিশ্বাস  তিনি জার্মান বংশােদ্ভূত ছিলেন ) সামাজিক কর্ম - বিভাগের এক কঠোর বিধানের প্রবর্তন করেন এবং তার নাম দেন মনুস্মৃতি । মনু | নিজে এক প্রতিভাশালী ব্যক্তি ছিলেন এবং দক্ষ গণিতজ্ঞ এবং আইন বিষয়ে পণ্ডিত ছিলেন । প্রকৃতপক্ষে বেদই সনাতন ধর্ম  ( অর্থাৎ হিন্দুধর্ম ) , মনুস্মৃতির উদ্দেশ্য ছিল বিদেশীর শাসনকে সাহায্য করা । হিন্দুদের উপলব্ধি করা উচিত , মনুসষ্ট সামাজিক ভেদ তাদের কীভাবে বিভ্রান্ত করেছে , তবে , গণিতে মনুর অবদান অত্যুজ্জ্বল এবং বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে মূল্যবান । 

মনু আইন সম্পর্কে একটি মূল্যবান গ্রন্থের রচয়িতা , তার নাম মনুস্মৃতি । মনু শব্দের অর্থ ' মানুষ ' , আর কিছু নয় । ' মনু ' - তে সম্ভবত একটি সুপ্রাচীন ইন্দো - ইউরােপীয় ধারার প্রতিফলন আছে , যদিও এমনও সম্ভব যে ' মনু ' শব্দটি স্বতন্ত্রভাবে সমান্তরাল পদ্ধতিতে গঠিত হয়েছে , যেমন হিশব্দ ' Adam ' ( তারও অর্থ মানুষ ) । বেদোত্তর যুগের এক গুরুত্বপূর্ণ ধর্মগ্রন্থ ‘ শতপথ ব্রাহ্মণ ’ - এ বর্ণিত আছে যে একটি মৎস্য , মনু যার একটি উপকার করেছিলেন , কীভাবে মনুকে এই বলে সাবধান করে দেন যে , একটি বন্যায় মানবজাতির এক বিশাল অংশ বিনষ্ট হবে । তাই মনু মৎস্যটির পরামর্শ অনুযায়ী এক নৌকা নির্মাণ করেন এবং যখন বন্যা এল , তিনি নৌকাটি মৎস্যটির শৃঙ্গের সঙ্গে বেঁধে দিলেন এবং নিরাপদে এক পর্বতের শিখরে গিয়ে আশ্রয় গ্রহণ করলেন । পুরাণে কথিত আছে মৎস্যটি বিষ্ণুর এক অবতার । 

পরবর্তী কালের হিন্দুধর্মে পুরাণাদিতে এবং মনুস্মৃতিতেও বিশ্বসৃষ্টি সংক্রান্ত জল্পনা - কল্পনার আগ্রহে বলা হয়েছিল , চতুর্দশজন মনু ছিলেন , ৪ , ৩২০ , ০০০ , ০০০ বৎসরের কল্পের অন্তর্গত ১৪টি যুগের প্রত্যেকটির জন্যে একটি করে মনু । মন্বন্তর অর্থাৎ আমাদের বর্তমান যুগ বর্তমান কল্পের সপ্তম যুগ । চতুর্দশ মনুর পরে সমগ্র পৃথিবী তার বিধিলিপি অনুযায়ী ধ্বংস প্রাপ্ত হবে । তারপরে আসবে নতুন সৃষ্টি , সৃষ্টি ও বিনাশের এক অন্তহীন চক্রে । তবে ব্রহ্মাণ্ড অনাদি অনন্তকাল বিদ্যমান । 

মনুস্মৃতি ( মনুর আইন কিংবা আচার - সংহিতা ) যার যথাবিহিত নাম মানবধর্মশাস্ত্র , আইন এবং তৎসংশ্লিষ্ট বিষয় সংক্রান্ত একটি গ্রন্থ । এতে জোর দেওয়া হয়েছে রাজা কর্তৃক স্বচ্ছ ও পরিচ্ছন্ন রাজ্য পরিচালনার উপর । দেওয়ানি ও ফৌজদারি আইনের একটি রূপরেখা ছাড়া এতে আছে জীবনের চারটি পর্বের কথা । ছাত্রজীবন , গার্হস্থ্য জীবন , বানপ্রস্থ এবং সন্ন্যাস । বিদেশীরা কর্মবিভাগের অনুচিত প্রয়ােগ করেছিল জাতিকে বিভক্ত ও দুর্বল করার উদ্দেশ্যে । বৃত্তির বিভাজন সামাজিক বিভাজনে রূপান্তরিত হয় এবং তার বিকৃত রূপ সামাজিক শ্রেণী ( বর্ণ ) , বর্ণবিভেদের এক ঐতিহাসিক ভিত্তি । অতএব ভারতের রাজনৈতিক ও সামাজিক ব্যবস্থার ইতিহাস সম্পর্কে তথ্যের একটি মূল্যবান সূত্র মনুস্মৃতি । মনুস্মৃতি হিন্দুদের হীনবল করেছে , মনুস্মৃতিকে বেদ অপেক্ষা অধিকতর গুরুত্ব দানের শাস্তিস্বরূপ ভারত বিদেশীদের পদানত হয়েছে । বিশুদ্ধ বৈদিক ধর্ম ও গীতার শিক্ষা অনুযায়ী বর্ণভেদ এক অন্যায় ও অপরাধ । কখনও কখনও নিজেদের অজ্ঞাতসারেই লােকে বর্ণভেদ পালন করে । অনেক রাজনীতিক এখনও নিজেদের দলগত স্বার্থের জন্যে মনুস্মৃতির ব্যবহার করেন , দেশকে বিভক্ত ও দুর্বল করে রাখবার জন্যে । তারা সকলেই ঈশ্বরের শত্রু ।

মন্তব্যসমূহ

Unknown বলেছেন…
কোন বানচোদ এটা লিখেছিস তর আদেও মনুস্মৃতি সম্পর্কে জ্ঞান আছে।।

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

বিষ্ণু দশ অবতারের পরিচয়

বেদের চনৎকার কিছু শ্লোক।

হিন্দুদের দৈনিক প্রার্থনার মন্ত্র