বিষ্ণু দশ অবতারের পরিচয়

বিষ্ণু দশ অবতারের পরিচয় 
ভগবান বিষ্ণু বিভিন্ন যুগে দশটি অবতারে নিজেকে প্রকাশ করেছেন । যেমন - মৎস্য , কূর্ম , বরাহ , নৃসিংহ , বামন , পরশুরাম , রাম , বলরাম , বুদ্ধ এবং কল্কি । লক্ষণীয় , দশ অবতারের মধ্যে শ্রীকৃষ্ণের উল্লেখ নেই । এর কারণ হচ্ছে , অন্যান্য অবতার ভগবানের অংশবিশেষ । শ্রীমদ্ভাগবতপুরাণে বলা হয়েছে কৃষ্ণস্তু ভগবান্ স্বয়ম্ । অর্থাৎ শ্রীকৃষ্ণ নিজেই ভগবান । তাই দশ অবতারের মধ্যে শ্রীকৃষ্ণের উল্লেখ নেই । 

এখানে সংক্ষেপে ভগবান বিষ্ণুর দশ অবতারে পরিচয় দিচ্ছি : 

১ । মৎস্য অবতার 

হাজার - হাজার বছর আগে সত্যব্রত নামে এক ধার্মিক রাজা ছিলেন । তাঁর রাজত্বকালে হঠাৎ পৃথিবীতে নানারূপ অন্যায় - অত্যাচার দেখা দেয় । রাজা তখন জগতের কল্যাণের জন্য ঈশ্বরের করুণা কামনা করেন । একদিন জলাশয়ে স্নানের সময় রাজা সত্যব্রতের নিকট একটি পুটি মাছ এসে প্রাণ ভিক্ষা চায় । রাজা কমণ্ডলুতে করে মাছটিকে বাড়ি নিয়ে এলেন । মাছটির আকার ভীষণভাবে বাড়তে থাকে । তাকে পুকুর , সরােবর , নদী , যেখানেই রাখা হয় , সেখানেই আর ধরে না । রাজা ভাবলেন , ইনি নিশ্চয়ই নারায়ণ । নারায়ণ বিষ্ণুর আরেক নাম । রাজা তখন মাছটির | স্তব - স্তুতি তে লাগলেন । তারপর মৎসরূপী নারায়ণ রাজাকে বললেন , সাতদিনের মধ্যেই জগতের প্রলয় হবে । সে সময় তােমার ঘাটে এসে একটি স্বর্ণতরী ভিড়বে । তুমি বেল , সব রকমের জীবদম্পতি , খাদ্য - শস্য ও বৃক্ষবীজ সংগ্রহ করে তাদের নিয়ে সেই নৌকায় উঠবে । আমি তখন শৃঙ্গধারী মৎস্যরূপে আবির্ভূত হবাে । তুমি তােমার নৌকাটি আমার শৃঙ্গের সঙ্গে বেঁধে রাখবে । তারপর মৎস্যরুপ নারায়ণ রাজাকে বললেন , সাতদিনের মধ্যেই জগতের প্রলয় হবে সে সময় তােমার ঘাটে এসে একটি স্বর্ণতরী ডিড়বে । তুমি যেন , সব রকমের জীবদম্পতি , খাদ্য শস্য ও বৃক্ষবীজ সহ করে তাদের নিয়ে সেই নৌকায় উঠবে । আমি তখন । শৃঙ্গধারী মৎসল্লপে আবির্ভূত হবাে । তুমি তােমার নৌকাটি আমার শৃঙ্গের সঙ্গে বেঁধে রাখবে । মহাপ্রলয় শুরু হলাে । রাজা মৎসরূপী ভগবান শ্রীবিষ্ণুর নির্দেশ মতাে কাজ করলেন । ধ্বংস থেকে অক্ষা পেল ইর নৌকা । প্রলয় শেষে রাজা সময় কিছু নিয়ে এলেন । এভাবেই মৎস্য অবতাররূপে ভগবান । শ্রীবিষ্ণু সৃষ্টিতে রক্ষা করলেন । বেদ ও । সংরক্ষিত হলাে । 

২ । কুর্ম অবতার 

পাতালবাসী অসুরেরা একবার দেবতাদের পরাজিত করে স্বর্গরাজ্য দখল করে । তখন ব্রহ্ম ও ইন্দ্র নিপীড়িত দেবতাদের সঙ্গে নিয়ে শ্রীবিষ্ণুর কাছে গেলেন । অসুরদের অত্যাচারের কথা বললেন । শ্রীবিষ্ণু দেবতাদেরকে অসুরদের সঙ্গে নিয়ে ক্ষিরােদ সাগর মন্থনের পরামর্শ দিলেন । তিনি বললেন , সাগর মন্থনের ফলে যে অমৃত উঠে আসবে , তা পান করে দেবতাগণ অসুরদের পরাজিত করার শক্তি ফিরে পাবেন ।

 ৩ । বরাহ অবতার 

একবার পৃথিবী সাগরে ডুবে যেতে থাকে । তখন শ্রীবিষ্ণু বহরূপে আবির্ভূত হয়ে পৃথিবীকে উদ্ধার করেন । তার বিশাল দাত দিয়ে তিনি পৃথিবীকে জলের উপর তুলে ধরলেন । পৃথিবী রক্ষা । পেল । এছাড়া বরাহরূপী শ্রীবিষ্ণু দৈত্যরাজ হিরণ্যাক্ষকে হত্যা করে পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠা করেন । 

৪ । নৃসিংহ অবতার 


শ্রীবিষ্ণু হিরণ্যাক্ষকে বধ । করেছেন জেনে তার ভাই হিরণ্যকশিপু খুব কুদ্ধ হলেন । তিনি প্রচণ্ড বিষ্ণুবিরােধী হয়ে উঠলেন । কিন্তু তার একমাত্র পুত্র প্রহ্লাদ ছিল বিষ্ণুভক্ত । বিষ্ণুভক্ত পুত্রের আচরণে হিরণ্যকশিপু রেগে গেলেন । পুত্রকে হত্যা করার চেষ্টা করলেন । কিন্তু ভগবান বিষ্ণু প্রহ্লাদকে রক্ষা করলেন । একদিন কুদ্ধ হিরণ্যকশিপু প্রহ্লাদকে জিজ্ঞেস করলেন , ‘ তাের বিষ্ণু কোথায় থাকে ? প্রহ্লাদ উত্তর দিল , “ ভগবান বিষ্ণু সর্বত্রই আছেন । ' হিরণ্যকশিপু : তাের বিষ্ণু কি এই স্তম্ভের ভিতরেও আছে ? প্রহ্লাদি । হ্যা বাবা , তিনি এখানেও আছেন । হিরণ্যকশিপু পদাঘাতে সে স্তম্ভ ভেঙে ফেলেন । সঙ্গে - সঙ্গে সেই স্তম্ভের মধ্য থেকে ভগবান বিষ্ণু নৃসিংহরূপে আবির্ভূত হন । নৃ ' মানে মানুষ । নৃসিংহ হচ্ছে মানুষ ও সিংহের মিলিত রূপ । মাথাটা সিংহের মতাে । শরীরটা । মানুষের মতো । আবার নখগুলাে সিংহের মতাে । । নৃসিং তাঁর ভয়ঙ্কর নখ দিয়ে হিরণ্যকশিপুর বক্ষ বিদীর্ণ করেন । হিরণ্যকশিপু নিহত হন । | বিষ্ণুর ভরা দৈত্যদের অত্যাচার থেকে রক্ষা পান । 

৫ । বামন অবতার 

বলি নামে অসুরদের এক রাজা ছিলেন । বলি । দেবতাদের কাছ থেকে স্বর্গরাজ্য কেড়ে নেন । দেবতারা স্বর্গ হারিয়ে বিপদে পড়েন । তখন দেবতাদের রক্ষায় বিষ্ণু বামন রূপ ধারণ করলেন । বলি ছিলেন একজন বড় দাত । একদিন বামন গিয়ে ত্রিপাদ ভূমি চাইলেন বলি তা দিতে রাজি হলেন । সঙ্গে সঙ্গে বামন বিশাল আকার ধারণ করলেন । তিনি তার এক | পা স্বর্গে এবং আর এক পা মর্ত্যে রাখেন । তৃতীয় পা রাখার জায়গা না থাকায় বলি তার মাথার উপর রাখতে বললেন । বামনরূপী ভগবান বিষ্ণু তখন বলির মাথায় পা রেখে তাকে পাতালে নামিয়ে দিলেন । এভাবেই ভগবান বিষ্ণু একজন অহংকারী রাজাকে দমন করলেন । দেবতারাও তাদের হারানাে স্বর্গরাজ্য ফিরে পেলেন ।

৬ । পরশুরাম অবতার 

ত্রেতা যুগে এক সময়ে রাজা কার্তবীর্যের নেতৃত্বে ক্ষত্রিয়েরা খুব অত্যাচারী হয়ে ওঠে । তখন সমাজে ধর্মভাব জাগাতে মহর্ষি ঋচীক তপস্যা করেন । তপস্যায় তুষ্ট হয়ে ভগবান বিষ্ণু ঋচীকের পৌত্র এবং জমদগ্নির পুত্ররূপে জন্মগ্রহণ করেন । তাঁর নাম ছিল ভগুরাম । ভৃগুরাম ছিলেন মহাদেবের উপাসক । মহাদেব তুষ্ট হয়ে তাঁকে দিলেন একটি পরশু । পরশু মানে কুঠার । এই পরশু হলাে তার অস্ত্র । পশু হাতে থাকায় তার নাম হলাে প্রশুরাম । পরশু হাতে থাকলে কেউ ৩াকে পরাজিত করতে পারে না । একদা ক্ষত্রিয় রাজা কার্তবীর্যের সঙ্গে পরশুরামের পিতা জমদগ্নির বিবাদ বেঁধে যায় । কার্তবীর্য ধ্যানমগ্ন জমদগ্নিকে হত্যা করেন । পরশুরাম পিতৃহত্যার প্রতিশােধ নিতে ভুটে যান । কুঠারের আঘাতে তিনি কার্তবীর্যকে হত্যা করেন । পরশুরাম একুশবার অত্যাচারী ক্ষত্রিয়দের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে তাদের ধ্বংস করেন । পৃথিবীতে শান্তি ফিরে আসে । ধর্মের জয় হয় ।

৭ । রাম অবতার 

ত্রেতা যুগে রাক্ষসরাজ রাবণ খুব শক্তিশালী হয়ে ওঠেন । তিনি দেবতাদের উপর অত্যাচার শুরু করেন । পৃথিবীতে অশান্তির সৃষ্টি হয় । তখন শ্রীবিষ্ণু রাজা দশরথের পুত্ররূপে রাম নামে আবির্ভূত হন । তিনি পিতৃসত্য পালনের জন্য স্ত্রী সীতা ও ভাই লক্ষ্মণকে নিয়ে বনবাসে যান । বন থেকে রাবণ সীতাকে হরণ করেন । রাম ও রাবণের মধ্যে ভীষণ যুদ্ধ হয় । যুদ্ধে রাবণ সবংশে নিহত হন । রাম সীতাকে উদ্ধার করে নিজ রাজ্যে ফিরে আসেন । স্বর্গ ও পৃথিবীতে শান্তি ফিরে আসে ।

৮ । বলরাম অবতার 

দ্বাপর যুগে শ্রীবিষ্ণু বলরামরূপে অবতীর্ণ হন । তিনি ছিলেন শ্রীকৃষ্ণের বড় ভাই । বলরাম গদাযুদ্ধে শ্রেষ্ঠ বীর । তার হাতে একটি লাঙল থাকত । এই লাঙল বা হল আকৃতির অস্ত্র দিয়ে তিনি যুদ্ধ করতেন । তাই তাকে বলা হয় হলধর । তিনি অনেক অত্যাচারীকে শাস্তি দেন । ফলে পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়।

৯ । বুদ্ধ অবতার 


খ্রিষ্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে মানুষের মাঝ থেকে হিংসা , নীচতা দূর করতে শ্রীবিষ্ণু রাজা । শুদ্ধোদনের পুত্ররূপে জন্মগ্রহণ করেন । তাঁর নাম রাখা হয় পৌতম । পরে তিনি বােধি অর্থাৎ বিশেষ জ্ঞান লাভ করে গৌতম বুদ্ধ নামে পরিচিত হন । তিনি অহিংসার বাণী প্রচার করে মানুষকে শান্তির পথ দেখান । তাঁর ধর্মের মূল কথা ছিল , ' জীবসেবা ' এবং ' অহিংসা পরম ধর্ম । ' তিনি জীবসেবা ও অহিংসার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রেখেছেন ।

১০ । কল্কি অবতার 

এতক্ষণ আমরা যে অবতারদের কথা জানলাম তারা পৃথিবীতে আবির্ভূত হয়ে গেছেন । কিন্তু কলির শেষ প্রান্তে অন্যায় দমন করতে শ্রীবিষ্ণু কল্কিরুপে আবির্ভূত হবেন । তিনি জীবের দুঃখ দূর করার জন্য সচেষ্ট হবেন তাঁর হাতে থাকবে খড়গ । এই খড়গ দিয়ে তিনি অত্যাচারী ব্যক্তিদের হত্যা করবেন । মানুষের দুঃখ দূর হবে । পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে ।

ঈশ্বর অবতাররূপে এভাবেই নেমে এসে জীবের কল্যাণ করেন । এভাবেও ঈশ্বর আমাদের একটি শিক্ষা দেন । তা হলাে প্রয়ােজনে দুষ্টলে দমন করতে হবে । সজ্জনদের শক্তিতে থাকার পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে । আর এর মধ্য দিয়ে ধর্ম অর্থাৎ ম্যাকিার প্রতিষ্ঠা বসাতে হবে । তাহলে সমাজে থাকাবে শৃঙলা মানুষ শান্তিতে বাস করাতে পারবে ।

মন্তব্যসমূহ

Subhashis Biswas বলেছেন…
আমি তো জানি বলরাম শেষ নাগের অবতার।রামানন্দ সাগরের শ্রীকৃষ্ণ ধারাবাহিকে তাই দেখানো হয়েছে।
Unknown বলেছেন…
এখানে কিছু বানান ভুল আছে, তা সংশোধন করার অনুরোধ জানাচ্ছি
Unknown বলেছেন…
বলরাম তো শেষনাগ এর অবতার। উনি বিষ্ণু অবতার কিভাবে হলেন?
Unknown বলেছেন…
গৌতমবৌদ্ধ কি করে হিন্দুদের অবতার হলেন,তিনি তো বৌদ্ধদের আরাধ্য দেবতা
Unknown বলেছেন…
তাহলে গৌতমবুদ্ধ হিন্দুদেবতা।
HELPING DESK বলেছেন…
বলরাম হবে না বরং শ্রীকৃষ্ণ হবে
Arjun Bhattacharjee বলেছেন…
শ্রীকৃষ্ণ হলেন স্বয়ং নারায়ণ বা শ্রীবিষ্ণু।তিনি বলরাম,পরশুরাম বা রামচন্দ্রের মতো শ্রীবিষ্ণুর অংশ নন।গীতা অধ্যয়ন করুন ভালোভাবে।সেখানে বিভূতিযোগ নামক অধ্যায়েই শ্রীকৃষ্ণ পান্ডুপুত্র অর্জুনকে বিশ্বরূপ দেখিয়েছিলেন।তাহলে,এখান থেকেই বোঝা যায় যে তিনি শ্রীবিষ্ণুর অবতার বা অংশ নন;বরং স্বয়ং শ্রীবিষ্ণু নিজেই।
FAN CLUB বলেছেন…
বরাহ অবতারের ব্যাপারটা একটু অন্যরকম লাগলো। পৃথিবী সাগরে অবস্থিত? না কি পৃথিবীতে সাগর অবস্থিত?
Goutamaalee বলেছেন…
ধর্ম হচ্ছে কাকের কা কা। যত শুনবেন, পড়বেন ,
যুক্তি খুঁজবেন তত বিভ্রান্ত হবেন।
SUKANTA SARKAR বলেছেন…
তবে কি চৈতন্য মহাপ্রভু বিষ্ণুর অবতার নন ???
Vishnu Priya Dasi বলেছেন…
সত্যি কি হযরত মুহাম্মদ সনাতন ধর্মের কল্কি অবতার?
সম্পূর্ণ তথ্য দেখতে ক্লিক করুনওঁ নমো ভাগবতে বাসুদেবায়। হরেকৃষ্ণ।

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

বেদের চনৎকার কিছু শ্লোক।

হিন্দুদের দৈনিক প্রার্থনার মন্ত্র