হিন্দুধর্মের মূলনীতিসমূহ

হিন্দুধর্মের মূলনীতিসমূহ

১। সাধারণ জ্ঞান আহরণ করে, অজ্ঞানতার অন্ধকারে থাকা পাপ। ব্যক্তির অধিকার মূলত তার নিজস্ব কর্তব্য (আসক্তি ও আশঙ্কা ত্যাগ করে) যথাসাধ্য উত্তর রূপে পালনের চেষ্টা করা। অবস্থা অনুযায়ী ফললাভ অবশ্যই হবে।

২। দান দয়ার প্রকাশ। লাভের প্রত্যাশা না করে উপযুক্ত সময়, উপযুক্ত স্থানে, উপযুক্ত পাত্রকে দান করা দয়ার প্রকাশ এবং এই রকম দান ঈশ্বরকে প্রিত করে।

৩। দেহ একটি নৌকাস্বরূপ, যার প্রথম এবং প্রধান কাজ জীবন সমুদ্রের অপর তীরে অমরত্বের উপকূলে পৌছে দেওয়া।

৪। ঈশ্বরকে হৃদয়, আত্মা ও সর্বশক্তি দিয়ে ভালবাসতে হবে। যে কেউ ঈশ্বরের প্রতি অশ্রদ্ধা প্রদর্শন করে, সে নীতিজ্ঞান বর্জিত মানুষ। সে মানুষে ও মানবতার শত্রু।

৫। হত্যা, ব্যাভিচার, চৌর্য, মিথ্যাভাষণ, অপরের সম্পত্তিতে লোভ ঈশ্বরকে ত্রুুদ্ধ করে। সৎভাবে জীবন যাপন, অমায়িক ব্যবহার এবং নিজ পরিশ্রমে জীবন ধারণ কর্তব্য।

৬। যে অপরের অপরাধ ও পাপ ক্ষমা করে। ঈশ্বর তাকে তার কৃত অপরাধ ও পাপ ক্ষমা করেন।

৭। বুদ্ধি বৃত্তিকে অস্ত্রের মতো শাণিত করতে হবে, যেন সেটি দুঃখের কারণকে বিদ্ধ করে বিনাশ করতে পারে।

৮। প্রার্থনা করার জন্যে মন্ত্র অথবা শ্লোক না জানলেও চলবে। ধ্যান করতে জানারও দরকার নেই। ঈশ্বরের অভিমুখে হৃদয়কে উন্মুক্ত করে সৎ জীবন যাপন করলেই ঈশ্বর সবচেয়ে প্রিত হন। এর জন্য কোনও পুরোহিতের প্রয়োজন নেই।

৯। আত্মা অমর, জীবন-মৃত্যু চক্রবৎ আবর্তিত। মৃত্যুতে দেহের বিনাশ হয়, আত্মা অবিচল থাকে। আত্মা তরবারির দ্বারা ছিন্ন হয় না, অগ্নিতে দগ্ধ হয় না। তাই সৎ কর্মে সকলকে হতে হবে অসীম সাহসী।

১০। জীবন মঙ্গল ও অমঙ্গলের অন্তহীন সংগ্রাম।  বচনে ও কর্মে অতি সতর্কতা প্রয়োজন, যেন ভালো মানুষ আঘাত না পায়।

১১। ক্রোধ, ঈর্ষা, আতঙ্ক এবং শোকের মতো মারাত্মক অনুভূতির কাছে কখনোও আত্মসমর্পণ  করা উচিত নয়। ঈশ্বরের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা সম্পর্কে সর্বদা আশা রাখতে হবে এবং বিশ্বাস রাখতে হবে যে শেষ পর্যন্ত সমস্ত কিছুর ফল শুভই হবে।

১২। মানুষ পৃথিবীতে আসে নগ্ন হয়ে, বিদায় নেয় একই অবস্থায়। সল্প আয়ুঙ্কালে মানুষকে চেষ্টা করতে হবে তার পারিপার্শ্বিক পৃথিবীর উন্নতি করতে, যাতে সে যখন পৃথিবী থেকে বিদায় নেবে তখন সে তার পারিপার্শ্বিক পৃথিবীকে যে অবস্থায় সে পেয়েছিল তার চেয়ে ভালো অবস্থায় সে রেখে যেতে পেরেছে।

১৩। বিশ্ব সংসারে সমস্ত কিছুই ঈশ্বরের সৃষ্টি, ঈশ্বরের দানসমূহ ঠিক ঠিক ব্যবহার করার দায়িত্ব ত অধিকার সকলের সমান।

১৪। দশ বৎসরের ঊর্ধ্ব বয়ঙ্ক প্রত্যেকের কর্তব্য দিনে অনন্ত দুই বার ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করা ( প্রাতঃকালে সারা দিনের কর্মপরিকল্পনার সাফল্যের জন্যে মন্ত্র উচ্চারণ ও প্রার্থনা এবং সন্ধ্যায় অর্জিত সাফল্যের জন্যে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ এবং যা-কিছু বিফল হয়েছে তার আত্মসমীক্ষা করে মন্ত্র উচ্চারণের মাধ্যমে ঈশ্বরের কাছে নিজেকে সমর্পণ করতে হবে)।
সপ্তাহে একদিন প্রত্যেকের উচিত কোনো সাধারণ উপাসনা স্থলে, যেমন মন্দিরে গিয়ে সমাজের অন্য সদস্যদের সঙ্গে একত্রে প্রার্থনা করা। পুরোহিত সে প্রার্থনা পরিচালনা করবেন এবং গীতা, বেদ ইত্যাদি থেকে অন্তত পাঁচটি শ্লোকের তাৎপর্য আলোচনা করবেন এবং ব্যাখ্যা করবেন, যাতে সে-সবের অন্তর্নিহিত অর্থ আজকের মানুষকে কিভাবে সাহায্য করতে পারে তা উপলব্ধি করা যায়। প্রত্যেককে দিনে অন্তত দশ মিনিট প্রাণায়াম পরতে হবে এবং এসে একবার 'ভোজ উৎসব'* এর আয়োজন বা অন্যের আয়োজিত উৎসবে যোগ দিতে হবে।

* ভোজ উৎসব - পূর্ণিমার দিন মধ্যাহ্নে উপোষ থেকে সন্ধ্যায় পূর্ণিমার আলোক, সমাজের লোকদের নিয়ে খাওয়া দাওয়া এবং আনন্দ উৎসব করা। নিজে ভোজ উৎসব আয়োজন অথবা অন্যের আয়োজিত ভোজ উৎসবে যোগদানে একই পূণ্য লাভ হয়।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

বিষ্ণু দশ অবতারের পরিচয়

বেদের চনৎকার কিছু শ্লোক।

হিন্দুদের দৈনিক প্রার্থনার মন্ত্র