শুভ মহালয়া।

আজ শুভ মহালয়া।পিতৃপক্ষের শেষদিন। এই দিনের তাত্পর্য নিয়ে হিন্দু ধর্মের শাস্ত্র পরিচয় এই বিশেষ পোস্ট।

ওঁ পিতা স্বর্গঃ পিতা ধর্মঃ পিতা হি পরমং তপঃ পিতরি প্রীতিমাপন্নে প্রীয়ন্তে সর্বদেবতা আজ মহালয়া, পিতৃপক্ষের শেষ, দেবীপক্ষর সূচনা৷ ।দুর্গাপূজাকে বলা হয় কলির অশ্বমেধ যজ্ঞ৷।এই মহাযজ্ঞের সূচনা মহালয়ার ক্ষণ থেকে৷পিতৃপুরুষের কাছে আমরা ঋণী, তাই তাঁদের জল নিবেদনের জন্য একটি বিশেষ ক্ষণের প্রয়োজন৷সেই বিশেষ ক্ষণটি হল মহালয়া৷ যদিও আশ্বিন মাসের কৃষ্ণপক্ষ থেকে পিতৃপক্ষের সূচনা হয় এবং সেই কৃষ্ণপক্ষের প্রতিটি দিনই পিতৃপুরুষের উদ্দেশ্যে জলদান করা যায়৷। কিন্তু পিতৃপুরুষের উদ্দেশ্যে জলদানের প্রকৃষ্ট দিনটি হল মহালয়া তিথি৷গঙ্গার ঘাটে ঘাটে আজ শ্রদ্ধা নিবেদনের ভিড়৷ পুণ্যতোয়া নদীতে নাভি পর্যন্ত জলে দাঁড়িয়ে তর্পনকারী প্রথমে ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বরের উদ্দেশ্যে তর্পন দান করেন৷তারপর দেবতা, যক্ষ, নাগ, বিদ্যাধরদের তৃপ্তিলাভের জন্য জলদান করা হয়৷জলদান করা হয় আদি মানবের উদ্দেশ্যে৷ এঁদের মধ্যে সনক, সনন্দ, সনাতন, কপিল ইত্যাদি রয়েছেন৷।এরপর হয় ঋষিতর্পণ৷

ব্রহ্মার মানসপুত্রদের তৃপ্তিলাভের জন্য জলদান করা হয়।মরীচি, অত্রি, অঙ্গিরা, পুলস্ত, পুলহ, ক্রতু, প্রচেত, বশিষ্ঠ, ভৃগু ও নারদকে৷।তর্পণের অনুষ্ঠানে এর পরের অধ্যায়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷।মহাভারতের মহানায়ক পিতামহ ভীষ্মের কথা আমরা কে না জানি!।পিতার সুখের জন্য তিনি ব্রহ্মচর্যধারণের ভীষণ প্রতিজ্ঞা করেছিলেন৷। ভীষ্মের কোনও পুত্র নেই৷।কিন্তু তাঁর ত্যাগকে সম্মান দিয়ে আমরা আজও তর্পণের মাধ্যমে পিতামহ ভীষ্মকে জলদান করি৷।অধিকাংশ মানুষ না জেনেই এই আচার পালন করেন৷।যদি আমরা জ্ঞাতসারে সচেতন হয়ে এই আচার পালন করি, তবে পূর্বপুরুষকে জলদানের মধ্যে যে উদার ও মহত ভাবনা ব্যক্ত হয়েছে, তার মর্ম উপলব্ধি করতে পারব৷।পিতামহ ভীষ্মের তর্পণের পর আসে পিতৃতর্পণের পালা৷ পিতৃকূল ও মাতৃকূলকে জলদান করে আমরা শেষে মহাকাব্য রামায়ণের ত্যাগদীপ্ত চরিত্র রামভ্রাতা লক্ষণের উদ্দেশ্যে তর্পণ দান করি।৷এরপর নিজ স্বর্গস্থ পিতার স্তুতি দিয়ে শেষ হয় মহালয়ার তর্পণ অনুষ্ঠান৷অমাবস্যার অন্ধকারে পিতৃপুরুষের অর্চনার পিছনে একটি কাহিনি আছে৷ অষ্টবসুর এক বসুর নাম অমাবসু৷।তিনি মহাসংযমের পরিচয় দিয়েছিলেন বলে এই বিশেষ তিথিটিকে অমাবসুর  নামে চিহ্নিত করে রাখা হয়৷।অমাবসুর থেকেই সৃষ্টি অমাবস্যা তিথির৷। মহালয়ার দিন থেকে শুরু হয় দশেরা উতসবের৷।পিতৃ আরাধনার জন্য এই তিথি বিশেষ গুরুত্ব লাভ করলেও আমরা দেবীপক্ষের সূচনাক্ষণ বলে মহালয়া তিথিকে দেবীবন্দনার সঙ্গে একীভূত করে নিয়েছি বহুকাল ধরে৷

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

বিষ্ণু দশ অবতারের পরিচয়

বেদের চনৎকার কিছু শ্লোক।

হিন্দুদের দৈনিক প্রার্থনার মন্ত্র