হিন্দুধর্মীয় রীতি ও আচার অনুষ্ঠান

সংস্কার : 

প্রতিটি ধর্মই তার অনুসারীদের জন্যে কিছু রীতি - নীতি , আচার - অনুষ্ঠান । প্রতিপালনের উপদেশ বা নির্দেশ দিয়ে থাকে । এ সকল অনুষ্ঠানের মূল লক্ষ্য ; 

( ১ ) কোন জীবকে জয়লাভে সাহায্য করা । 
( ২ ) জীবের সাহায্যে উচ্চ প্রজ্ঞাকে আমন্ত্রণ করা যেমন , মুনি ঋষিদের সাহায্য কামনা করা । 
( ৩ ) পারিপার্শ্বিক অবস্থার উন্নতি সাধন করা । 

এই লক্ষ্য অর্জনে নানা প্রকার বস্তু , ক্রিয়াকলাপ , চালচলন ও শব্দকে এমনভাবে বিন্যাস করা হয়েছে যেন ফল লাভ সহজ ও দ্রুত হয় । সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মতে গর্ভ অবস্থা থেকে বিবাহ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে দশটি সংস্কার কর্ম করার নিয়ম প্রচলিত আছে । শাস্ত্রীয় মতে একে দশবিধ সংস্কার বলা হয় । হিন্দুধর্ম বিশ্বাস করে , দেহে ব্রহ্ম প্রাপ্তির অনুকূল গুণের উন্মেষ করতে হলে দশবিধ সংস্কার বিধি অবশ্যই পালন করতে হবে । সংস্কার কার্যগুলাে । সম্পাদিত হলে জনক - জননীর দোষ থাকলেও গর্ভাবস্থা থেকেই তা প্রশমিত হয়ে মানুষের দেহে ব্ৰহ্ম প্রাপ্তির অনুকূল গুণের উন্মেষ ঘটে । 

দশবিধ সংস্কার সমূহকে ৪টি প্রধান ভাগে ভাগ করা যায় : 
গর্ভ সংস্কার : গর্ভাধান , পুংসবন , সীমান্তোন্নয়ন । 
শৈশব সংস্কার : জাতকর্ম , নামকরণ , অন্নপ্রাশন । 
কৈশাের সংস্কার : চূড়াকরণ , উপনয়ন , সমাবর্তন । 
যৌবন সংস্কার : বিবাহ । 

এসব সংস্কারের মধ্যে বিবাহ সবচেয়ে বড় সংস্কার । যেহেতু হিন্দু বিবাহ ধর্মীয় বন্ধন , কোন দলিল বা লেনদেন নয় , এ বিবাহ অবিচ্ছেদ্য এবং এর উপরই বংশধরদের ভবিষ্যৎ নির্ভরশীল । তাই হিন্দুধর্মে বিবাহের গুরুত্ব অত্যধিক ।

এই দশটি সংস্কারের কয়েকটি মাত্র বর্তমানে অনুসরণ করা হয় । যার মধ্যে নামকরণ ও অন্নপ্রাশন উদ্যেখযােগ্য । তবে অধিকাংশ সাস্কারই জাতকের গর্ভাবস্থা থেকে কৈশাের অবধি । প্রতিটি সংস্কারই আবার শব্দ বা মন্ত্রের দ্বারা বিশেষভাবে প্রভাবিত । হিন্দুধর্মের অনুসারীদের যে সংস্কার প্রতিপালন করতে হয় তা ধর্মীয় দিক ছাড়াও সামাজিক ও আধ্যাত্মিক বিচারে অত্যন্ত প্রশংসনীয় ও গ্রহণযােগ্য । জীবনের প্রতিটি স্তরে সদ্গুণাবলিসমূহ সন্নিবেশিত করাই এই সংস্কার সমূহের মূল লক্ষ্য । সংস্কার সমূহের বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি বৈদিক ঋষিদের চিন্তাধারার সাথে সমন্বয় হয়েছে । ঋষিগণ জানতেন যে , অস্থি , স্নায় , মজ্জা , তুক , মাংস ও রক্ত - এই ষড়বিধ কোষের সম্মিলনে মানবদেহ সমুৎপন্ন । তন্মধ্যে প্রথমােক্ত তিনটি পিতৃ শরীর হতে এবং শেষােক্ত তিনটি মাতৃদেহ হতে উৎপন্ন হয়ে থাকে । তজ্জন্য গর্ভাধান , গর্ভগ্রহণ যােগ্যতা ও তদুপযুক্ত সময় নিরূপণ করে সন্তান উৎপত্তিকালে জনক - জননীর হৃদয় যেন পশু ভাবাপন্ন না হয়ে সন্তু ভাবাপন্ন হয় , তাই গর্ভাধানের উদ্দেশ্য । তেমনিভাবে উত্থাপিত হয় । পুংসবণ । পুংসবণ অর্থ পুত্র সন্তানের উৎপত্তি । গর্ভ গ্রহণের তৃতীয় মাসের মধ্যেই এই অনুষ্ঠান উত্যাপন করতে হয় । প্রথমে হােম করে পতি বধূর পশ্চাতে দাঁড়ায়ে তার স্কন্ধ স্পর্শ করে দক্ষিণকর দ্বারা নাভিদেশ স্পর্শ করে । মন্ত্র পড়বে । এই মন্ত্রের অর্থ , “ সূর্য , বরুণ , অশ্বিনীকুমার যুগল , অগ্নি , বায়ু । যেমন পুরুষ , তােমার গর্ভেও সেইরূপ পুরুষেরই আবির্ভাব হউক । ” পতিমুখে এই মন্ত্রপাঠ শুনলে যে কোন স্ত্রীর হৃদয় আনন্দে উচ্ছসিত হতে বাধ্য এবং সুসন্তান কামনায় পত্নীর মানসিকতার পরিবর্তন পরিলক্ষিত হবে । 

সীমন্ত বা সিঁথি তুলে দেয়ার অনুষ্ঠানের নাম সীমান্তোন্নয়ন । গর্ভ ধারণের ৬ থেকে ৮ মাসের মধ্যে বধূকে বেদীর উপরে উত্থাপিত করে জলপূর্ণ কুম্ভ দ্বারা স্নানাদি মঙ্গল কর্ম সম্পাদন করে তাকে বলবেন , “ তুমি বীর প্রসবিনী , জীববৎসা ও জীব পতিকা হও " । সন্তান ভূমিষ্ট হবার পর অনুষ্ঠিত হয় জাতকর্ম সংস্কার । পিতা প্রথমতঃ যব ও ব্রীহিচূর্ণ দ্বারা পরে স্বর্ণ দ্বারা মধু ও ঘৃত গ্রহণ পূর্বক সদ্যজাত সন্তানের জিহ্বা স্পর্শ করবেন । মন্ত্রের মধ্যে থাকে সন্তানের মেধা , দীর্ঘায়র প্রার্থনা । লক্ষণীয় যে স্বর্ণ দ্বারা আয়বর্ধন , ধৃত দ্বারা বল ও জীবনীশক্তি , মধু দ্বারা কর্ম তৎপরতার শক্তি বৃদ্ধির কামনা করা হয় ।

নামকরণ , অন্নপ্রাশন , চূড়াকরণ , উপনয়ন , সমাবর্তন সংস্কারের সময়ও বিধান উল্লেখ আছে । প্রতিটি অনুষ্ঠানে একটি জীবের শ্রেষ্ঠত্ব প্রাপ্তির যে কামনা করা হয় তা পৃথিবীর যে কোন জ্ঞানী ব্যক্তির নিকট শ্রদ্ধার পাত্র । হিন্দু বিবাহ একটি পবিত্রতম সংস্কার । বিবাহের মাধ্যমে স্ত্রী - পুরুষ এক হয় । বিবাহ মন্ত্রে আছে , “ যদেত হৃদয়ং মম তদন্ত হৃদয়ং তব ” । জল , অগ্নি , মাটি এই তিনটি । দ্রব্যকে বারংবার স্পর্শ করে , আহুতি দিয়ে ৭ পুরুষকে সাক্ষী রেখে এ বিবাহ । বিবাহ শুধুমাত্র সংস্কার নয় , ধর্মানুষ্ঠান । হিন্দুরা প্রতিটি সংস্কার পালন করে । বলেই হিন্দুর ঘরে আজকাল কালাে , দুশ্চরিত্র , অপরাধী , মেধাহীন সন্তান জন্মগ্রহণ করছে । তা না হলে হিন্দু সন্তান দেবতুল্য , সকল মানুষের সেরা সদ্গুণাবলি ও ধীশক্তি সম্পন্ন মানুষ হতে বাধ্য ।

মন্তব্যসমূহ

elasan বলেছেন…
MANU SANHITA NIE KHUB BITORKO HOY....,, LEFTIST RA ETAKEI BESI QUOTE KORE, A DHORMOKE NEGETIVE DEKHANOR JONYO....,, JODI PROKITO SATY TA LEKHEN....,, SUNECHILAM HINDU SHASTRO BOLE AMRA JONMO SUTRE SOBAI SUDRO,, KORMOFOL AMADER BRAMOHNER SRESTOTE UNNITO KORE,, TAHOLE AKJON JONMEI KI KORE BRAMOHN HOY? MAYDER KEO AI SHASTRO OPOMAN KORE PONDIT RA BOLE,, TAI PROKITO SATYA TA JODI LEKHEN..KHUB VALO LAGCHE APNAR LEKHA PORTE ,, THAMBEN NA, LIKHE JAN, DHYONYOBAD.

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

বিষ্ণু দশ অবতারের পরিচয়

বেদের চনৎকার কিছু শ্লোক।

হিন্দুদের দৈনিক প্রার্থনার মন্ত্র