হিন্দুধর্মের ষড়দর্শন

হিনধর্ম দর্শনের ধর্ম। দর্শন শাস্ত্রকে ঐতিহ্য অনুসারে ভাগ করা হয় ছ'টি দর্শনে বা দার্শনিক ধারায় ।এই ছ ' টি দর্শনের সাধারণ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, ছ'টি দার্শনিক ধারাই বেদসমূহের প্রতি ও কর্মযােগের বিধি বিধানের প্রতি তাদের আনুগত্য জানিয়েছে মানব_ অস্তিত্বের পরম লক্ষ্য হিসেবে “ চরম " ( অর্থা অতীন্দ্রিয়বাদী ) “ মােক্ষলাভ " এর মাধ্যমে ।এই ৬টি দর্শন পদ্ধতি ও তাদের প্রতিষ্ঠাতা হলেন_ 

( ক ) সাংখ্য দর্শন - কপিল মুনি 
( খ ) যােগ বা পাতঞ্জল - ঋষি পাতঞ্জলী 
( গ ) ন্যায় - গৌতম মুনি 
( ঘ ) বৈশিষিক - ঋমি কণাদ 
( ঙ ) মীমাংসা - ঋষি জৈমিনি 
( চ ) বেদান্ত - শঙ্করাচার্য ও রামানুজ 

সাংখ্য দর্শন : 
সাংখ্য দর্শনের উৎপত্তি ও তার প্রকৃতি নিরূপণ এক জটিল ব্যাপার ।কারাে মতে সাংখ্য হচ্ছে এক ধর্মীয় , অতীন্দ্রিয়বাদী দর্শন ।আবার একে বস্তুবাদী দর্শন বলতেও অনেকে দ্বিধা করেননি ।বস্তুবাদী ও ভাববাদী উভয় ধরণের ধারণাসমূহ এই মতবাদের গভীরে নিহিত ছিল ।অত্যন্ত প্রাচীন যুগে সাংখ্যের উদ্ভব হলেও মৌর্য যুগের সাংখ্য সম্ভবতঃ এক স্বনির্ভর দার্শনিক ধারায় পরিণত হয় ।সাংখ্য দর্শনের প্রতিষ্ঠাতা ঋষি কপিল ।শ্বেতাশ্বতর উপনিষদে এর প্রমাণ আছে ।সাংখ্য দর্শনের প্রধান তাত্ত্বিক ভিত্তি হল এই যে বিশ্বের আদি বস্তু - নিদান প্রকৃতি বা প্রধান অনাদিকাল থেকে বিরাজিত এবং নিজস্ব অভ্যন্তরীণ কারণ ছাড়া অপর কোন বাহ্য কারণে তা প্রভাবিত হয় না ।সাংখ্য দর্শনের অপর একটি ভিত্তি প্রস্তর হল বিবর্তনের তত্ত্ব ।এই তত্ত্ব অনুযায়ী বস্তু পদার্থ হল এমন কিছু আদিতে যার অস্তিত্ব ছিল এক সংহত অব্যক্ত রূপে ।আমাদের ইন্দ্রিয় গােচর বস্তুনিচয় ও সত্ত্বার এক জগতে এই অব্যক্ত রূপের ।রূপান্তর সংঘটিত হচ্ছে তিনটি গুণ বা তিনটি “ প্রকৃতি ” এর সাহায্যে যাদের ।নানাবিধ যােগফলের সাহায্যে আবার নির্ধারিত হচ্ছে বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের গতি ও বিকাশ ।এই তিনটি গুণের নামেই তাদের স্বরূপ প্রতিফলিত ;যথা : - তম ।( অন্ধকার ) , রজস্ ( প্রচণ্ড আবেগ ) এবং সত্ত্ব ( অন্তঃ সার , সত্য ) । সাংখ্য দর্শনের উল্লেখ অর্থ শাস্ত্রে , দীক্ষাসূত্রে , মহাকাব্য সমূহে , চরক রচিত চিকিৎসা শাস্ত্রে এবং মানব - ধর্ম শাস্ত্রে পাওয়া যায় । এ থেকেই প্রমাণ হয় যে এই দার্শনিক মতবাদ খ্রীষ্টজন্মের প্রারম্ভের শতাব্দীগুলােতে বেশ ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়েছিল ।

যােগ বা পাতঞ্জল : 
দর্শন সমূহের মধ্যে যােগ বা পাতল দর্শনের একটি বিশেষ স্থান আছে । যােগ ’ শব্দটিতে মানুষকে খানিকটা সমাধির মতাে অবস্থায় উপনীত করার জন্যে পর্যায়ক্রমিক ব্যায়াম বােঝায় । কিন্তু এখানে যােগ হল নিজস্ব বৈশিষ্ট সহ সু - পরিণত দার্শনিক চিন্তাধারা । ধ্রুপদী যােগ দর্শনের সূত্রপাত বলে ধরা হয় । ঋষি পাতঞ্জলির যােগসূত্র ” নামের পুঁথিকে মনস্তাত্ত্বিক মৌল ধারণাগুলাের ব্যাখ্যাকেই যােগ - দর্শনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান বলে গণ্য করা হয়েছে । এই সমস্ত মনস্তাত্ত্বিক মৌল ধারণার মধ্যে সবচেয়ে প্রধান হল চিত্ত ” অর্থাৎ মন , কিংবা বলা যায় মানুষের মননক্রিয়ার সকল সম্ভাব্য ধরণের এক কেন্দ্রীভূত রূপ । এই দর্শন চিত্তকে নিয়ন্ত্রণ , মনােনিবেশ ও আরাধনার বিজ্ঞানকে ব্যাখ্যা করেছে । পাতঞ্জলির এই দর্শনে নিঃশ্বাস প্রশ্বাসের বিজ্ঞান , ইন্দ্রিয়াতীত বস্ত্র শ্রবণের বা দর্শনের কল্পিত ক্ষমতা , ইন্দ্রিয়ের সাহায্য ব্যতীত মন জানা - জানি ( টেলিপাথী ) এবং অন্যান্য মনস্তাত্ত্বিক বিজ্ঞানের ব্যাখ্যা করা হয়েছে । এই দর্শন কিভাবে ' সমাধি লাভ করতে হয় তারও দিকদর্শন দিয়েছে । পাতঞ্জলির এই দর্শনের অনুরূপ বিশ্বে অদ্যাবধি কোথাও এ জাতীয় পূর্ণাঙ্গ যৌগিক পদ্ধতির উদাহরণ নেই । মােক্ষ লাভের পথে ঈশ্বরের ভক্তি এবং বাস্তব শৃঙ্খলাই “ চিত্তবৃত্তি নিরােধ ” এর মােক্ষপথ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে । “ যােগ ” এর দার্শনিক মতাদর্শের পরিণতি ঘটেছে জগতের উপর প্রাধান্য বিস্তারকারী “ পরমসত্ত্বার ” ( ঈশ্বরের ) বর্ণনায় । ঈশ্বর সকল “ পূর্ণতার অধিকারী এবং ভক্তকে ' চরমলক্ষ্য অর্জনে সাহায্য করে থাকেন । পাতঞ্জলি ও তাঁর অনুসারীদের পক্ষে গুরুত্বের ব্যাপার ছিল ধর্মে মতি আছে এমন ব্যক্তি বিশেষকে মনস্তাত্ত্বিক শৃঙ্খলা অর্জনের নিয়মকানুন অর্থাৎ যােগের অষ্টমার্গ শিক্ষা দেয়া । “ উন্নতির সােপান আরােহণ আয়ত্ব করার উদ্দেশ্যে নানা কলা কৌশলের বর্ণনা যােগ দর্শনে করা হয়েছে । বলা বাহুল্য মনুষ্যদেহ - বিষয়ক শারীরিক স্থান ( এ্যানাটমি ) , শরীরবৃত্ত ( ফিজিওলজি ) এবং মনােবিদ্যার ক্ষেত্রগুলাে সম্পর্কে অগাধ জ্ঞান ছিল বলেই পাতঞ্জলি “ যােগের অষ্টমার্গ রচনা করতে পেরেছেন ।

ন্যায় দর্শন : 
ঋষি গৌতম আধ্যাত্মিক জ্ঞানতত্ত্বের সমস্যাদির দিকে দৃষ্টিপাত করেছিলেন । অবধারণার মাধ্যম হিসেবে যুক্তি বা বিদ্যার বিকাশ নিয়ে মনােনিবেশ করেছিলেন । ( পরে এই ন্যায় শব্দটি যুক্তি বা তর্কবিদ্যা হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে ) । গৌতম তার তত্ত্বের বিশদীকরণের স্বতন্ত্র ও বিশিষ্ট ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করেন বহির্জগতের বাস্তবতা , তার বিষয় নিরপেক্ষতা এবং মানুষের মনে যা যুক্তিবদ্ধ সংশ্লেষণের রূপ নেয় । ইন্দ্রিয়সমূহের মাধ্যমে সেই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের মূলগত অবধারণ যােগ্যতা , স্মৃতিতে যে ছবিগুলাে ফুটে উঠে । একক পর্যবেক্ষণ ও অনুমানগুলাে , বিষয়সমূহের সম্যক ধারণা গড়ে তােলার পক্ষে তা মােটেই যথেষ্ট নয় । বিষয়সমূহের প্রামাণিকতার সত্যিকার নিরিখ হতে পারে একমাত্র অভিজ্ঞতার সাক্ষ্য প্রমাণের সাথে সেগুলাের মানানসই হওয়াটাই । একমাত্র অভিজ্ঞতালব্ধ সে সব খবরাখবর যা নাকি যুক্তি সঙ্গত বিশ্লেষণের “ প্রহরা পেরিয়ে আসতে পারে সেগুলােকেই প্রকাশ করতে সমর্থ হয় বস্তু ও ঘটনাসমূহের খাটি অন্তঃসারটুকু । জ্ঞানের স্বতন্ত্র একটি ক্ষেত্র হিসেবে যুক্তিবিদ্যার সৃষ্টি ও তার বিশদীকরণের ব্যাপারে ন্যায়দর্শনের অবদান অপরিসীম । সমগ্রভাবে বিজ্ঞানচর্চার ক্ষেত্রে এই দর্শনের প্রভাব যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনই ফলপ্রসু । বিশেষ করে এই দর্শনের পরবর্তী বিকাশের যুগে ইহার প্রভাবের ব্যাপারটি স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় । ন্যায় দর্শনের উল্লেখযােগ্য সাফল্যসমূহ প্রাচীন ও মধ্যযুগের গােড়ায় দিঙনাগ ও ধর্মকীর্তির মতাে সুবিখ্যাত নৈয়ায়িকদের নিজস্ব মতবাদ বিকাশের পক্ষে ভিত্তি স্বরূপ হয়ে দাঁড়ায় ।

 বৈশেষিক দর্শন : 
বৈশেষিক দর্শনের প্রতিষ্ঠাতা ঋষি কনাদ । যীশু খৃষ্টের জন্মের সমসাময়িককালে তার জন্ম । ঋষি কনাদ এর মতে বস্তু বিশ্বের সৃষ্ট হয়েছে । এমন সমস্ত পরমাণুর পারস্পরিক ক্রিয়া বিক্রিয়ার ফলে যে পরমাণুগুলাে কারও । সৃষ্ট নয় , সেগুলাে চিরস্থায়ী ও তাদের ধ্বংস অসম্ভব । কনাদ পরমাণু সমূহকে চারটি মূল উপাদানের গুণবিশিষ্ট পৃথক শ্রেণীতে বিভক্ত করে দেখিয়েছেন এবং বলেছেন , কিভাবে বহুবিচিত্র ধরণের পরমাণুসমূহ পরস্পর সংযুক্ত হয়ে সকল । প্রকার জড় পদার্থ ও জীবন্ত প্রাণীর জন্ম দেয় । এই পরিপ্রেক্ষিতে তিনি 'ধর্ম' শব্দটিও ব্যবহার করেছেন , তবে তা নৈতিক বা ধর্মীয় তত্ত্বের সাথে সংযুক্ত প্রচলিত অর্থে নয় , বরং প্রাকৃতিক বিকাশ ও কার্যকরণ সম্বন্ধের নিয়মাবলির অত্যন্ত সাধারণ এক সংজ্ঞা হিসেবে । কনা ঐতিহ্যসিদ্ধ চক্রাকারে ঘূর্ণ্যমান সৃষ্টির উৎপত্তি রহস্য ” থেকে শুরু করেছেন । এই তত্ত্বটি হল : বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টি হয় , তা ক্রমে বিকশিত হয়ে ওঠে এবং তারপর তা ধ্বংস হয়ে যায়  “ বিশ্বজনীন প্রলয়ে । ” অতঃপর এই পুরাে প্রক্রিয়াটি পুনরায় শুরু হয় গােড়া থেকে । তার মতে বিশ্বজনীন প্রলয়ের মুহূর্তে পরমাণুসমূহ বিলুপ্ত হয় না । এই মুহূর্তে যা ঘটে তা হল পরমাণুসমূহের মধ্যেকার সেই পারস্পরিক যােগসূত্রগুলাে যায় ছিন্ন হয়ে , যে সমস্ত যােগসূত্রের ফলে মানুষের বােধগম্য ঘটনা ও ব্যাপার সমূহের উদ্ভব ঘটে । তদুপরি , বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের পুনর্জন্ম সংঘটিত হয় পরমাণুসমূহের উপর্যুপরি সংযােগ সাধনের ফলে । যে অদৃশ্য শক্তি এই পরমাণুসমূহের সংযােগ ঘটায় তাই ঈশ্বরের শক্তি । ঈশ্বরই জ্ঞানের আধার , তিনিই সকল প্রকৃতির প্রভু । তিনিই অপরিসীম ক্ষমতার অধিকারী ।

মীমাংসা : 
মীমাংসা দর্শনকে প্রায়ই বলা হয়েছে পূর্ব বা আদি মীমাংসা হিসেবে । এবং বেদান্তকে উত্তর বা পরবর্তী মীমাংসা রূপে চিহ্নিত করা হয়েছে । এই দর্শনের প্রতিষ্ঠাতা জৈমিনি বেদের কর্মকাণ্ডের বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠানকে কঠোরভাবে প্রতিপালনের নির্দেশ দিয়েছেন । মীমাংসা দর্শন আগাগােড়াই বেদসমূহকে প্রামাণ্য হিসেবে উল্লেখ করেছে এবং এ লক্ষ্যে এই দার্শনিক শাখা এমন কি রক্ষণশীল হিন্দু ঈশ্বরতত্ত্বের চেয়েও বেশি করে কোনােরকম আপােষমূলক সমাধান গ্রহণে অনিচ্ছা জানিয়ে এসেছে । বেদসমূহের মূলপাঠ বা সংহিতাগুলােকে এই দর্শন গ্রহণ করেছে যাবতীয় জ্ঞান বিজ্ঞানের ভিত্তি হিসেবে । এই দার্শনিক ধারায় কেন্দ্রিয় আলােচ্য বস্তু হচ্ছে ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদির নীতি ও ধরণধারণ এবং পূজা অর্চনার সঠিক পদ্ধতি সম্পর্কিত । মীমাংসা দর্শনের পুঁথিগুলােতে বেদ এবং ব্রাহ্মণসমূহে বর্ণিত ধর্মীয় আনুষ্ঠানিক আচারের বিশদ ব্যাখ্যা প্রাধান্য পেয়েছে । ধর্মীয় সমস্যাদি নিয়ে ব্যস্ত থাকা সত্ত্বেও দর্শনের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল এর জ্ঞানতত্ত্ব বিষয়ক আলােচনা । ঋষি জৈমিনি “ স্বচ্ছজ্ঞান ” ( বা প্রমাণ ) এর দু ' টি উৎসের মধ্যে অবশ্য প্রামাণ্য ( শব্দ ) বা বৈদিক পাঠসমূহের সাক্ষ্যকে অন্যতম বলে গণ্য করেছেন । এই উৎস হল :
“ ইন্দ্রিয়ানুভূতির মধ্য দিয়ে লব্ধ ধারণা , যুক্তি বিদ্যা সম্মত কার্যকারণ সম্বন্ধ নির্ণয় , প্রতিতুলনা ও প্রস্তাবনাই প্রধান । মীমাংসা দর্শনে প্রয়ােগ করা হয়েছে যুক্তিবিদ্যার আরােহী পদ্ধতি | এই দর্শন বেদসমূহের পূজা - অনুষ্ঠানের নীতি ও রীতির নিঃশর্ত অনুগামী । ”

বেদান্ত দর্শন : 
ঋষি বাদরায়ণের রচনা বলে কথিত প্রথম বিশুদ্ধ বেদান্ত “ ব্রহ্মসূত্র ” খ্রীষ্টপূর্ব দ্বিতীয় শতাব্দীতেই রচিত বলে জানা যায় । বাদরায়ণ এর মতে বিশ্বব্রহ্মাণ্ড কোনমতেই বর্ষপদার্থের শক্তিসমূহ থেকে উদ্ভূত হয়নি । একমাত্র বাস্তব সত্য হল ' ব্রাহ্মণ ' ( আত্মিক অন্তঃসার ) এবং যা কিছু বাতর অস্তিত্ব সম্পন্ন তা বহু বিচিত্ররূপে বিভিন্ন সময়ে এই ব্রাহ্মণ ' থেকেই উদ্রত । বাদরায়নের সূত্র পরবর্তীতে ভাষ্যরচনার ঐতিহ্যের বিকাশ ঘটায় এবং বেদান্ত - দর্শনের এই ধারাটি বিভিন্ন প্রচারকের নামানুসারে বিভিন্ন উপধারার রপ নেয় । অবশ্য লক্ষণীয় যে বৈদান্তিকেরা এই দার্শনিক মতাদর্শটির সচনা উপনিষদসমূহ থেকে উদ্ভূত হিসেবে মনে করেন । এই উপধারাসমূহ শঙ্কর । রামনুজ , মাধব , বল্লভ ও নিম্বার্কের নামানুসারে চলে আসে । তবে শঙ্করাচার্য । ও রামানুজের রচিত ভাষ্য দুটির পরে বেদান্ত দর্শনের বিকাশে তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাব বিস্তারে সমর্থ হয় । শঙ্কর এবং রামানুজের বহু সংখ্যক দার্শনিক রচনা । এখনও টিকে আছে । শঙ্করের মতবাদ অনুসারে পরব্রহ্ম থেকে জাত এই বিশ্ব সংসার মায়া বা ইন্দ্রজাল মাত্র , বস্তুভিত্তিক প্রকতি প্রায়ােয়িক “ অহম ” এর মতােই অবাস্তব । বেদান্তের অর্থ “ জ্ঞানের শেষ " , অদ্বৈত বেদান্তের অর্থ ব্রহ্মই সত্য , জগৎ সংসার মিথ্যা । ব্রহ্ম এক এবং অভিন্ন । পরমব্রহ্ম থেকে বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের উৎপত্তি এবং ব্রহ্মতেই সকল কিছুই প্রত্যাবর্তন । 
রামানুজ বিশিষ্ট দ্বৈতবাদ বা ভক্তিবাদ প্রচার করেন । বিশ্ব , ঈশ্বর ( ব্রাহ্মণ ) এবং আত্ম এর সাথে সত্য , জীবাত্মা ও পরমাত্মার সম্বন্ধ নির্ণয়ই তার জীবনের লক্ষ্য ছিল । তিনি বলতেন , “ ভক্তি ভিন্ন ধর্ম হয় না , ভক্তি ভিন্ন মুক্তি হয় না । ব্রহ্মজ্ঞান হলে মােক্ষলাভ করা যায় , তখন নিজেকে অনুভব করা যায় । " 
এই ষড়দর্শন হিন্দুধর্মের প্রজ্ঞা ও গভীরতাকে বিকাশ করেছে এবং এই ধর্মের সুদৃঢ় ভিত্তিকে প্রমাণ করেছে । বড় দর্শন প্রমাণ হিন্দু ঋষিরা ছিলেন । জ্ঞান ও বিজ্ঞানের অফুরন্ত ভাণ্ডার ।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

বিষ্ণু দশ অবতারের পরিচয়

বেদের চনৎকার কিছু শ্লোক।

হিন্দুদের দৈনিক প্রার্থনার মন্ত্র