বিষ্ণু দশ অবতারের পরিচয়
বিষ্ণু দশ অবতারের পরিচয়
ভগবান বিষ্ণু বিভিন্ন যুগে দশটি অবতারে নিজেকে প্রকাশ করেছেন । যেমন - মৎস্য , কূর্ম , বরাহ , নৃসিংহ , বামন , পরশুরাম , রাম , বলরাম , বুদ্ধ এবং কল্কি । লক্ষণীয় , দশ অবতারের মধ্যে শ্রীকৃষ্ণের উল্লেখ নেই । এর কারণ হচ্ছে , অন্যান্য অবতার ভগবানের অংশবিশেষ । শ্রীমদ্ভাগবতপুরাণে বলা হয়েছে কৃষ্ণস্তু ভগবান্ স্বয়ম্ । অর্থাৎ শ্রীকৃষ্ণ নিজেই ভগবান । তাই দশ অবতারের মধ্যে শ্রীকৃষ্ণের উল্লেখ নেই ।
এখানে সংক্ষেপে ভগবান বিষ্ণুর দশ অবতারে পরিচয় দিচ্ছি :
১ । মৎস্য অবতার
হাজার - হাজার বছর আগে সত্যব্রত নামে এক ধার্মিক রাজা ছিলেন । তাঁর রাজত্বকালে হঠাৎ পৃথিবীতে নানারূপ অন্যায় - অত্যাচার দেখা দেয় । রাজা তখন জগতের কল্যাণের জন্য ঈশ্বরের করুণা কামনা করেন । একদিন জলাশয়ে স্নানের সময় রাজা সত্যব্রতের নিকট একটি পুটি মাছ এসে প্রাণ ভিক্ষা চায় । রাজা কমণ্ডলুতে করে মাছটিকে বাড়ি নিয়ে এলেন । মাছটির আকার ভীষণভাবে বাড়তে থাকে । তাকে পুকুর , সরােবর , নদী , যেখানেই রাখা হয় , সেখানেই আর ধরে না । রাজা ভাবলেন , ইনি নিশ্চয়ই নারায়ণ । নারায়ণ বিষ্ণুর আরেক নাম । রাজা তখন মাছটির | স্তব - স্তুতি তে লাগলেন । তারপর মৎসরূপী নারায়ণ রাজাকে বললেন , সাতদিনের মধ্যেই জগতের প্রলয় হবে । সে সময় তােমার ঘাটে এসে একটি স্বর্ণতরী ভিড়বে । তুমি বেল , সব রকমের জীবদম্পতি , খাদ্য - শস্য ও বৃক্ষবীজ সংগ্রহ করে তাদের নিয়ে সেই নৌকায় উঠবে । আমি তখন শৃঙ্গধারী মৎস্যরূপে আবির্ভূত হবাে । তুমি তােমার নৌকাটি আমার শৃঙ্গের সঙ্গে বেঁধে রাখবে । তারপর মৎস্যরুপ নারায়ণ রাজাকে বললেন , সাতদিনের মধ্যেই জগতের প্রলয় হবে সে সময় তােমার ঘাটে এসে একটি স্বর্ণতরী ডিড়বে । তুমি যেন , সব রকমের জীবদম্পতি , খাদ্য শস্য ও বৃক্ষবীজ সহ করে তাদের নিয়ে সেই নৌকায় উঠবে । আমি তখন । শৃঙ্গধারী মৎসল্লপে আবির্ভূত হবাে । তুমি তােমার নৌকাটি আমার শৃঙ্গের সঙ্গে বেঁধে রাখবে । মহাপ্রলয় শুরু হলাে । রাজা মৎসরূপী ভগবান শ্রীবিষ্ণুর নির্দেশ মতাে কাজ করলেন । ধ্বংস থেকে অক্ষা পেল ইর নৌকা । প্রলয় শেষে রাজা সময় কিছু নিয়ে এলেন । এভাবেই মৎস্য অবতাররূপে ভগবান । শ্রীবিষ্ণু সৃষ্টিতে রক্ষা করলেন । বেদ ও । সংরক্ষিত হলাে ।
২ । কুর্ম অবতার
পাতালবাসী অসুরেরা একবার দেবতাদের পরাজিত করে স্বর্গরাজ্য দখল করে । তখন ব্রহ্ম ও ইন্দ্র নিপীড়িত দেবতাদের সঙ্গে নিয়ে শ্রীবিষ্ণুর কাছে গেলেন । অসুরদের অত্যাচারের কথা বললেন । শ্রীবিষ্ণু দেবতাদেরকে অসুরদের সঙ্গে নিয়ে ক্ষিরােদ সাগর মন্থনের পরামর্শ দিলেন । তিনি বললেন , সাগর মন্থনের ফলে যে অমৃত উঠে আসবে , তা পান করে দেবতাগণ অসুরদের পরাজিত করার শক্তি ফিরে পাবেন ।
৩ । বরাহ অবতার
একবার পৃথিবী সাগরে ডুবে যেতে থাকে । তখন শ্রীবিষ্ণু বহরূপে আবির্ভূত হয়ে পৃথিবীকে উদ্ধার করেন । তার বিশাল দাত দিয়ে তিনি পৃথিবীকে জলের উপর তুলে ধরলেন । পৃথিবী রক্ষা । পেল । এছাড়া বরাহরূপী শ্রীবিষ্ণু দৈত্যরাজ হিরণ্যাক্ষকে হত্যা করে পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠা করেন ।
শ্রীবিষ্ণু হিরণ্যাক্ষকে বধ । করেছেন জেনে তার ভাই হিরণ্যকশিপু খুব কুদ্ধ হলেন । তিনি প্রচণ্ড বিষ্ণুবিরােধী হয়ে উঠলেন । কিন্তু তার একমাত্র পুত্র প্রহ্লাদ ছিল বিষ্ণুভক্ত । বিষ্ণুভক্ত পুত্রের আচরণে হিরণ্যকশিপু রেগে গেলেন । পুত্রকে হত্যা করার চেষ্টা করলেন । কিন্তু ভগবান বিষ্ণু প্রহ্লাদকে রক্ষা করলেন । একদিন কুদ্ধ হিরণ্যকশিপু প্রহ্লাদকে জিজ্ঞেস করলেন , ‘ তাের বিষ্ণু কোথায় থাকে ? প্রহ্লাদ উত্তর দিল , “ ভগবান বিষ্ণু সর্বত্রই আছেন । ' হিরণ্যকশিপু : তাের বিষ্ণু কি এই স্তম্ভের ভিতরেও আছে ? প্রহ্লাদি । হ্যা বাবা , তিনি এখানেও আছেন । হিরণ্যকশিপু পদাঘাতে সে স্তম্ভ ভেঙে ফেলেন । সঙ্গে - সঙ্গে সেই স্তম্ভের মধ্য থেকে ভগবান বিষ্ণু নৃসিংহরূপে আবির্ভূত হন । নৃ ' মানে মানুষ । নৃসিংহ হচ্ছে মানুষ ও সিংহের মিলিত রূপ । মাথাটা সিংহের মতাে । শরীরটা । মানুষের মতো । আবার নখগুলাে সিংহের মতাে । । নৃসিং তাঁর ভয়ঙ্কর নখ দিয়ে হিরণ্যকশিপুর বক্ষ বিদীর্ণ করেন । হিরণ্যকশিপু নিহত হন । | বিষ্ণুর ভরা দৈত্যদের অত্যাচার থেকে রক্ষা পান ।
৫ । বামন অবতার
বলি নামে অসুরদের এক রাজা ছিলেন । বলি । দেবতাদের কাছ থেকে স্বর্গরাজ্য কেড়ে নেন । দেবতারা স্বর্গ হারিয়ে বিপদে পড়েন । তখন দেবতাদের রক্ষায় বিষ্ণু বামন রূপ ধারণ করলেন । বলি ছিলেন একজন বড় দাত । একদিন বামন গিয়ে ত্রিপাদ ভূমি চাইলেন বলি তা দিতে রাজি হলেন । সঙ্গে সঙ্গে বামন বিশাল আকার ধারণ করলেন । তিনি তার এক | পা স্বর্গে এবং আর এক পা মর্ত্যে রাখেন । তৃতীয় পা রাখার জায়গা না থাকায় বলি তার মাথার উপর রাখতে বললেন । বামনরূপী ভগবান বিষ্ণু তখন বলির মাথায় পা রেখে তাকে পাতালে নামিয়ে দিলেন । এভাবেই ভগবান বিষ্ণু একজন অহংকারী রাজাকে দমন করলেন । দেবতারাও তাদের হারানাে স্বর্গরাজ্য ফিরে পেলেন ।
৬ । পরশুরাম অবতার
ত্রেতা যুগে এক সময়ে রাজা কার্তবীর্যের নেতৃত্বে ক্ষত্রিয়েরা খুব অত্যাচারী হয়ে ওঠে । তখন সমাজে ধর্মভাব জাগাতে মহর্ষি ঋচীক তপস্যা করেন । তপস্যায় তুষ্ট হয়ে ভগবান বিষ্ণু ঋচীকের পৌত্র এবং জমদগ্নির পুত্ররূপে জন্মগ্রহণ করেন । তাঁর নাম ছিল ভগুরাম । ভৃগুরাম ছিলেন মহাদেবের উপাসক । মহাদেব তুষ্ট হয়ে তাঁকে দিলেন একটি পরশু । পরশু মানে কুঠার । এই পরশু হলাে তার অস্ত্র । পশু হাতে থাকায় তার নাম হলাে প্রশুরাম । পরশু হাতে থাকলে কেউ ৩াকে পরাজিত করতে পারে না । একদা ক্ষত্রিয় রাজা কার্তবীর্যের সঙ্গে পরশুরামের পিতা জমদগ্নির বিবাদ বেঁধে যায় । কার্তবীর্য ধ্যানমগ্ন জমদগ্নিকে হত্যা করেন । পরশুরাম পিতৃহত্যার প্রতিশােধ নিতে ভুটে যান । কুঠারের আঘাতে তিনি কার্তবীর্যকে হত্যা করেন । পরশুরাম একুশবার অত্যাচারী ক্ষত্রিয়দের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে তাদের ধ্বংস করেন । পৃথিবীতে শান্তি ফিরে আসে । ধর্মের জয় হয় ।
৭ । রাম অবতার
ত্রেতা যুগে রাক্ষসরাজ রাবণ খুব শক্তিশালী হয়ে ওঠেন । তিনি দেবতাদের উপর অত্যাচার শুরু করেন । পৃথিবীতে অশান্তির সৃষ্টি হয় । তখন শ্রীবিষ্ণু রাজা দশরথের পুত্ররূপে রাম নামে আবির্ভূত হন । তিনি পিতৃসত্য পালনের জন্য স্ত্রী সীতা ও ভাই লক্ষ্মণকে নিয়ে বনবাসে যান । বন থেকে রাবণ সীতাকে হরণ করেন । রাম ও রাবণের মধ্যে ভীষণ যুদ্ধ হয় । যুদ্ধে রাবণ সবংশে নিহত হন । রাম সীতাকে উদ্ধার করে নিজ রাজ্যে ফিরে আসেন । স্বর্গ ও পৃথিবীতে শান্তি ফিরে আসে ।
৮ । বলরাম অবতার
দ্বাপর যুগে শ্রীবিষ্ণু বলরামরূপে অবতীর্ণ হন । তিনি ছিলেন শ্রীকৃষ্ণের বড় ভাই । বলরাম গদাযুদ্ধে শ্রেষ্ঠ বীর । তার হাতে একটি লাঙল থাকত । এই লাঙল বা হল আকৃতির অস্ত্র দিয়ে তিনি যুদ্ধ করতেন । তাই তাকে বলা হয় হলধর । তিনি অনেক অত্যাচারীকে শাস্তি দেন । ফলে পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়।
৯ । বুদ্ধ অবতার
খ্রিষ্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে মানুষের মাঝ থেকে হিংসা , নীচতা দূর করতে শ্রীবিষ্ণু রাজা । শুদ্ধোদনের পুত্ররূপে জন্মগ্রহণ করেন । তাঁর নাম রাখা হয় পৌতম । পরে তিনি বােধি অর্থাৎ বিশেষ জ্ঞান লাভ করে গৌতম বুদ্ধ নামে পরিচিত হন । তিনি অহিংসার বাণী প্রচার করে মানুষকে শান্তির পথ দেখান । তাঁর ধর্মের মূল কথা ছিল , ' জীবসেবা ' এবং ' অহিংসা পরম ধর্ম । ' তিনি জীবসেবা ও অহিংসার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রেখেছেন ।
১০ । কল্কি অবতার
এতক্ষণ আমরা যে অবতারদের কথা জানলাম তারা পৃথিবীতে আবির্ভূত হয়ে গেছেন । কিন্তু কলির শেষ প্রান্তে অন্যায় দমন করতে শ্রীবিষ্ণু কল্কিরুপে আবির্ভূত হবেন । তিনি জীবের দুঃখ দূর করার জন্য সচেষ্ট হবেন তাঁর হাতে থাকবে খড়গ । এই খড়গ দিয়ে তিনি অত্যাচারী ব্যক্তিদের হত্যা করবেন । মানুষের দুঃখ দূর হবে । পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে ।
ঈশ্বর অবতাররূপে এভাবেই নেমে এসে জীবের কল্যাণ করেন । এভাবেও ঈশ্বর আমাদের একটি শিক্ষা দেন । তা হলাে প্রয়ােজনে দুষ্টলে দমন করতে হবে । সজ্জনদের শক্তিতে থাকার পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে । আর এর মধ্য দিয়ে ধর্ম অর্থাৎ ম্যাকিার প্রতিষ্ঠা বসাতে হবে । তাহলে সমাজে থাকাবে শৃঙলা মানুষ শান্তিতে বাস করাতে পারবে ।
ভগবান বিষ্ণু বিভিন্ন যুগে দশটি অবতারে নিজেকে প্রকাশ করেছেন । যেমন - মৎস্য , কূর্ম , বরাহ , নৃসিংহ , বামন , পরশুরাম , রাম , বলরাম , বুদ্ধ এবং কল্কি । লক্ষণীয় , দশ অবতারের মধ্যে শ্রীকৃষ্ণের উল্লেখ নেই । এর কারণ হচ্ছে , অন্যান্য অবতার ভগবানের অংশবিশেষ । শ্রীমদ্ভাগবতপুরাণে বলা হয়েছে কৃষ্ণস্তু ভগবান্ স্বয়ম্ । অর্থাৎ শ্রীকৃষ্ণ নিজেই ভগবান । তাই দশ অবতারের মধ্যে শ্রীকৃষ্ণের উল্লেখ নেই ।
এখানে সংক্ষেপে ভগবান বিষ্ণুর দশ অবতারে পরিচয় দিচ্ছি :
১ । মৎস্য অবতার
হাজার - হাজার বছর আগে সত্যব্রত নামে এক ধার্মিক রাজা ছিলেন । তাঁর রাজত্বকালে হঠাৎ পৃথিবীতে নানারূপ অন্যায় - অত্যাচার দেখা দেয় । রাজা তখন জগতের কল্যাণের জন্য ঈশ্বরের করুণা কামনা করেন । একদিন জলাশয়ে স্নানের সময় রাজা সত্যব্রতের নিকট একটি পুটি মাছ এসে প্রাণ ভিক্ষা চায় । রাজা কমণ্ডলুতে করে মাছটিকে বাড়ি নিয়ে এলেন । মাছটির আকার ভীষণভাবে বাড়তে থাকে । তাকে পুকুর , সরােবর , নদী , যেখানেই রাখা হয় , সেখানেই আর ধরে না । রাজা ভাবলেন , ইনি নিশ্চয়ই নারায়ণ । নারায়ণ বিষ্ণুর আরেক নাম । রাজা তখন মাছটির | স্তব - স্তুতি তে লাগলেন । তারপর মৎসরূপী নারায়ণ রাজাকে বললেন , সাতদিনের মধ্যেই জগতের প্রলয় হবে । সে সময় তােমার ঘাটে এসে একটি স্বর্ণতরী ভিড়বে । তুমি বেল , সব রকমের জীবদম্পতি , খাদ্য - শস্য ও বৃক্ষবীজ সংগ্রহ করে তাদের নিয়ে সেই নৌকায় উঠবে । আমি তখন শৃঙ্গধারী মৎস্যরূপে আবির্ভূত হবাে । তুমি তােমার নৌকাটি আমার শৃঙ্গের সঙ্গে বেঁধে রাখবে । তারপর মৎস্যরুপ নারায়ণ রাজাকে বললেন , সাতদিনের মধ্যেই জগতের প্রলয় হবে সে সময় তােমার ঘাটে এসে একটি স্বর্ণতরী ডিড়বে । তুমি যেন , সব রকমের জীবদম্পতি , খাদ্য শস্য ও বৃক্ষবীজ সহ করে তাদের নিয়ে সেই নৌকায় উঠবে । আমি তখন । শৃঙ্গধারী মৎসল্লপে আবির্ভূত হবাে । তুমি তােমার নৌকাটি আমার শৃঙ্গের সঙ্গে বেঁধে রাখবে । মহাপ্রলয় শুরু হলাে । রাজা মৎসরূপী ভগবান শ্রীবিষ্ণুর নির্দেশ মতাে কাজ করলেন । ধ্বংস থেকে অক্ষা পেল ইর নৌকা । প্রলয় শেষে রাজা সময় কিছু নিয়ে এলেন । এভাবেই মৎস্য অবতাররূপে ভগবান । শ্রীবিষ্ণু সৃষ্টিতে রক্ষা করলেন । বেদ ও । সংরক্ষিত হলাে ।
২ । কুর্ম অবতার
পাতালবাসী অসুরেরা একবার দেবতাদের পরাজিত করে স্বর্গরাজ্য দখল করে । তখন ব্রহ্ম ও ইন্দ্র নিপীড়িত দেবতাদের সঙ্গে নিয়ে শ্রীবিষ্ণুর কাছে গেলেন । অসুরদের অত্যাচারের কথা বললেন । শ্রীবিষ্ণু দেবতাদেরকে অসুরদের সঙ্গে নিয়ে ক্ষিরােদ সাগর মন্থনের পরামর্শ দিলেন । তিনি বললেন , সাগর মন্থনের ফলে যে অমৃত উঠে আসবে , তা পান করে দেবতাগণ অসুরদের পরাজিত করার শক্তি ফিরে পাবেন ।
৩ । বরাহ অবতার
একবার পৃথিবী সাগরে ডুবে যেতে থাকে । তখন শ্রীবিষ্ণু বহরূপে আবির্ভূত হয়ে পৃথিবীকে উদ্ধার করেন । তার বিশাল দাত দিয়ে তিনি পৃথিবীকে জলের উপর তুলে ধরলেন । পৃথিবী রক্ষা । পেল । এছাড়া বরাহরূপী শ্রীবিষ্ণু দৈত্যরাজ হিরণ্যাক্ষকে হত্যা করে পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠা করেন ।
৪ । নৃসিংহ অবতার
শ্রীবিষ্ণু হিরণ্যাক্ষকে বধ । করেছেন জেনে তার ভাই হিরণ্যকশিপু খুব কুদ্ধ হলেন । তিনি প্রচণ্ড বিষ্ণুবিরােধী হয়ে উঠলেন । কিন্তু তার একমাত্র পুত্র প্রহ্লাদ ছিল বিষ্ণুভক্ত । বিষ্ণুভক্ত পুত্রের আচরণে হিরণ্যকশিপু রেগে গেলেন । পুত্রকে হত্যা করার চেষ্টা করলেন । কিন্তু ভগবান বিষ্ণু প্রহ্লাদকে রক্ষা করলেন । একদিন কুদ্ধ হিরণ্যকশিপু প্রহ্লাদকে জিজ্ঞেস করলেন , ‘ তাের বিষ্ণু কোথায় থাকে ? প্রহ্লাদ উত্তর দিল , “ ভগবান বিষ্ণু সর্বত্রই আছেন । ' হিরণ্যকশিপু : তাের বিষ্ণু কি এই স্তম্ভের ভিতরেও আছে ? প্রহ্লাদি । হ্যা বাবা , তিনি এখানেও আছেন । হিরণ্যকশিপু পদাঘাতে সে স্তম্ভ ভেঙে ফেলেন । সঙ্গে - সঙ্গে সেই স্তম্ভের মধ্য থেকে ভগবান বিষ্ণু নৃসিংহরূপে আবির্ভূত হন । নৃ ' মানে মানুষ । নৃসিংহ হচ্ছে মানুষ ও সিংহের মিলিত রূপ । মাথাটা সিংহের মতাে । শরীরটা । মানুষের মতো । আবার নখগুলাে সিংহের মতাে । । নৃসিং তাঁর ভয়ঙ্কর নখ দিয়ে হিরণ্যকশিপুর বক্ষ বিদীর্ণ করেন । হিরণ্যকশিপু নিহত হন । | বিষ্ণুর ভরা দৈত্যদের অত্যাচার থেকে রক্ষা পান ।
৫ । বামন অবতার
বলি নামে অসুরদের এক রাজা ছিলেন । বলি । দেবতাদের কাছ থেকে স্বর্গরাজ্য কেড়ে নেন । দেবতারা স্বর্গ হারিয়ে বিপদে পড়েন । তখন দেবতাদের রক্ষায় বিষ্ণু বামন রূপ ধারণ করলেন । বলি ছিলেন একজন বড় দাত । একদিন বামন গিয়ে ত্রিপাদ ভূমি চাইলেন বলি তা দিতে রাজি হলেন । সঙ্গে সঙ্গে বামন বিশাল আকার ধারণ করলেন । তিনি তার এক | পা স্বর্গে এবং আর এক পা মর্ত্যে রাখেন । তৃতীয় পা রাখার জায়গা না থাকায় বলি তার মাথার উপর রাখতে বললেন । বামনরূপী ভগবান বিষ্ণু তখন বলির মাথায় পা রেখে তাকে পাতালে নামিয়ে দিলেন । এভাবেই ভগবান বিষ্ণু একজন অহংকারী রাজাকে দমন করলেন । দেবতারাও তাদের হারানাে স্বর্গরাজ্য ফিরে পেলেন ।
৬ । পরশুরাম অবতার
ত্রেতা যুগে এক সময়ে রাজা কার্তবীর্যের নেতৃত্বে ক্ষত্রিয়েরা খুব অত্যাচারী হয়ে ওঠে । তখন সমাজে ধর্মভাব জাগাতে মহর্ষি ঋচীক তপস্যা করেন । তপস্যায় তুষ্ট হয়ে ভগবান বিষ্ণু ঋচীকের পৌত্র এবং জমদগ্নির পুত্ররূপে জন্মগ্রহণ করেন । তাঁর নাম ছিল ভগুরাম । ভৃগুরাম ছিলেন মহাদেবের উপাসক । মহাদেব তুষ্ট হয়ে তাঁকে দিলেন একটি পরশু । পরশু মানে কুঠার । এই পরশু হলাে তার অস্ত্র । পশু হাতে থাকায় তার নাম হলাে প্রশুরাম । পরশু হাতে থাকলে কেউ ৩াকে পরাজিত করতে পারে না । একদা ক্ষত্রিয় রাজা কার্তবীর্যের সঙ্গে পরশুরামের পিতা জমদগ্নির বিবাদ বেঁধে যায় । কার্তবীর্য ধ্যানমগ্ন জমদগ্নিকে হত্যা করেন । পরশুরাম পিতৃহত্যার প্রতিশােধ নিতে ভুটে যান । কুঠারের আঘাতে তিনি কার্তবীর্যকে হত্যা করেন । পরশুরাম একুশবার অত্যাচারী ক্ষত্রিয়দের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে তাদের ধ্বংস করেন । পৃথিবীতে শান্তি ফিরে আসে । ধর্মের জয় হয় ।
৭ । রাম অবতার
ত্রেতা যুগে রাক্ষসরাজ রাবণ খুব শক্তিশালী হয়ে ওঠেন । তিনি দেবতাদের উপর অত্যাচার শুরু করেন । পৃথিবীতে অশান্তির সৃষ্টি হয় । তখন শ্রীবিষ্ণু রাজা দশরথের পুত্ররূপে রাম নামে আবির্ভূত হন । তিনি পিতৃসত্য পালনের জন্য স্ত্রী সীতা ও ভাই লক্ষ্মণকে নিয়ে বনবাসে যান । বন থেকে রাবণ সীতাকে হরণ করেন । রাম ও রাবণের মধ্যে ভীষণ যুদ্ধ হয় । যুদ্ধে রাবণ সবংশে নিহত হন । রাম সীতাকে উদ্ধার করে নিজ রাজ্যে ফিরে আসেন । স্বর্গ ও পৃথিবীতে শান্তি ফিরে আসে ।
৮ । বলরাম অবতার
দ্বাপর যুগে শ্রীবিষ্ণু বলরামরূপে অবতীর্ণ হন । তিনি ছিলেন শ্রীকৃষ্ণের বড় ভাই । বলরাম গদাযুদ্ধে শ্রেষ্ঠ বীর । তার হাতে একটি লাঙল থাকত । এই লাঙল বা হল আকৃতির অস্ত্র দিয়ে তিনি যুদ্ধ করতেন । তাই তাকে বলা হয় হলধর । তিনি অনেক অত্যাচারীকে শাস্তি দেন । ফলে পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়।
৯ । বুদ্ধ অবতার
খ্রিষ্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে মানুষের মাঝ থেকে হিংসা , নীচতা দূর করতে শ্রীবিষ্ণু রাজা । শুদ্ধোদনের পুত্ররূপে জন্মগ্রহণ করেন । তাঁর নাম রাখা হয় পৌতম । পরে তিনি বােধি অর্থাৎ বিশেষ জ্ঞান লাভ করে গৌতম বুদ্ধ নামে পরিচিত হন । তিনি অহিংসার বাণী প্রচার করে মানুষকে শান্তির পথ দেখান । তাঁর ধর্মের মূল কথা ছিল , ' জীবসেবা ' এবং ' অহিংসা পরম ধর্ম । ' তিনি জীবসেবা ও অহিংসার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রেখেছেন ।
১০ । কল্কি অবতার
এতক্ষণ আমরা যে অবতারদের কথা জানলাম তারা পৃথিবীতে আবির্ভূত হয়ে গেছেন । কিন্তু কলির শেষ প্রান্তে অন্যায় দমন করতে শ্রীবিষ্ণু কল্কিরুপে আবির্ভূত হবেন । তিনি জীবের দুঃখ দূর করার জন্য সচেষ্ট হবেন তাঁর হাতে থাকবে খড়গ । এই খড়গ দিয়ে তিনি অত্যাচারী ব্যক্তিদের হত্যা করবেন । মানুষের দুঃখ দূর হবে । পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে ।
ঈশ্বর অবতাররূপে এভাবেই নেমে এসে জীবের কল্যাণ করেন । এভাবেও ঈশ্বর আমাদের একটি শিক্ষা দেন । তা হলাে প্রয়ােজনে দুষ্টলে দমন করতে হবে । সজ্জনদের শক্তিতে থাকার পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে । আর এর মধ্য দিয়ে ধর্ম অর্থাৎ ম্যাকিার প্রতিষ্ঠা বসাতে হবে । তাহলে সমাজে থাকাবে শৃঙলা মানুষ শান্তিতে বাস করাতে পারবে ।
মন্তব্যসমূহ
যুক্তি খুঁজবেন তত বিভ্রান্ত হবেন।
সম্পূর্ণ তথ্য দেখতে ক্লিক করুনওঁ নমো ভাগবতে বাসুদেবায়। হরেকৃষ্ণ।