অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া
অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া
জীবনের শেষ ক্রিয়াটি হলো অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া। অন্ত মানে শেষ,ইষ্টি মানে যজ্ঞ। অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া মানে শেষ যজ্ঞ। মৃত্যুর পর শব দেহ দিয়ে যে যজ্ঞ অনুষ্ঠান করা হয়, তাই অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া। হিন্দু ধর্মের মতবাদ হলো যিনি দেহরক্ষা করেছেন, তিনি দেবলোক অর্থাৎ স্বর্গবাসী হয়েছেন। দেহ থেকে মুক্ত হয়ে চিরদিনের জন্যে ঈশ্বর সান্নিধানে চলে যান। কিন্তু যে আত্মা এ দেহ থেকে চলে গিয়েছে, এ দেহে এতদিন বাস করার পর, দেহটির প্রতি তার মোহ জন্মানো অসম্ভব নয়। আত্মা যদি দেহটি রক্ষিত দেখে,তবে দেহ ধারণের আকাঙ্ক্ষা তার মনে জাগ্ররুক হতে পারে। এই আকাঙ্ক্ষা বা মোহ থেকে মুক্ত করার জন্যই দেহটি দাহ করার বিধান দেয়া হয়েছে।
বৈদিক যুগে দেরলোকে প্রার্থনা জানাবার একমাত্র উপায় ছিল যজ্ঞ। অগ্নি হলেন দেবগণের পুরোহিত। অগ্নিতে দেবতার নাম বলে কোন কিছু আহুতি দিলে তা অগ্নিই দেবলোকে পৌঁছে দেবেন এ বিশ্বাস ছিল। দেহ থেকে আত্মা বের হয়ে মুখ দিয়ে শ্বাস প্রশ্বাসের সাথে। সেই আত্মাকে অগ্নিতে সমর্পণের অনুষ্ঠান হলো মুখাগ্নি। মুখাগ্নি করেই আত্মাকে দেবলোকে প্রেরণ করা হয় এবং তার পর শবদাহ করে পুনর্জন্মের আকাঙ্ক্ষা থেকে বিদেহী আত্মাকে মোহমুক্ত করা হয়।
আধ্যাত্মিক ধ্যানধারণা, সামাজিক চেতনা এবং বৈজ্ঞানিক প্রয়োগ থেকে বিশ্লেষণ করলে এই বিধি হলো উৎকৃষ্ট এবং গ্রহণযোগ্য।
অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার সাথে শবদাহ ছাড়াও আছে পিন্ডি দেবার প্রণালী, অশৌচ বিধি, পূরক পিণ্ড দান, আদ্যশ্রাদ্ধ বিধি ও সপিণ্ডকরণ বিধি। প্রত্যেকটি কর্মক্রিয়ার একটি আধ্যাত্মিক সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা আছে। এ সমস্ত ব্যাখ্যা ও দর্শন এতই যুক্তিযুক্ত এবং গ্রহণযোগ্য যে আধুনিক বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি হতে বিশ্লেষণকারীগণও বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।
মন্তব্যসমূহ