শ্রীমদ্ভাগবত - এর শিক্ষা ।
শ্রীমদ্ভাগবত - এর শিক্ষা ।
পুরাকালে নৈমিষারণ্যে শৌনকাদি ঋষিগণ হাজার বছর ধরে মান আনন্দে যজ্ঞাদির অনুষ্ঠান করছিলেন । এমন সময় একদিন উগ্রশ্রবা । পুত্র মহর্ষি সূত সেই যজ্ঞক্ষেত্রে উপনীত হলেন । ঋষিগণ তাঁকে দেখে তা আনন্দিত হলেন । সূত ছিলেন মহর্ষি বেদব্যাসের সমস্ত জ্ঞান ভাণ্ডারের অধিকারী । তাই ঋষিগণ সূতকে অনুরােধ করলেন , তিনি যদি কৃপা করে শাস্ত্রের সার বুঝিয়ে বলেন , তবেই কলির অল্পায়ু মানব মােক্ষলাভ করতে পারে । ঋষিগণ বিশেষভাবে শ্রীকৃষ্ণের লীলা কাহিনী শুনবার জন্যই আগ্রহ প্রকাশ করলেন ।
ঋষিগণের অতিশয় আগ্রহ দেখে মহামুনি সূত পবিত্র ভাগবত কাহিনী বলতে আরম্ভ করলেন । সর্বপ্রথম তিনি শ্রীহরি মাহাত্ম বর্ণনা করলেন এবং তারপর ভগবানের স্বরূপ ও অবতার কাহিনী বলতে লাগলেন ।
ভগবান বিশ্ব সৃষ্টির ইচ্ছায় পুরুষ রূপ ধারণ করেন । তিনি আদিকল্পে যখন সমুদ্রে যােগনিদ্রায় মগ্ন ছিলেন , তখন তার নাভিদেশে এক পদ্মের সৃষ্টি হয় । সেই পদ্মে সর্বপ্রথম জন্ম নিলেন লােকপিতামহ ব্রহ্মা । সেই ব্রহ্মা থেকেই পরে বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টি ।
যে ভগবান পুরুষ রূপ ধারণ করেছিলেন , তিনিই আবার যুগে যুগে বিভিন্ন অবতাররূপে আবির্ভূত হয়েছেন । বিভিন্ন অবতাররূপে আবির্ভূত হলেও ভগবানের আর একটি সূক্ষ্ম রূপ আছে - সেই রূপ চোখে দেখা যায় না । ঈশ্বরের স্কুল ও সূক্ষ্ম দেহের কল্পনাকে যখন ভ্রম বলে বােধ জন্মাবে , তখনই জীব ব্রহ্মজ্ঞান লাভ করে ।
সূতের কথায় ঋষিগণের মনে আগ্রহের সঞ্চার হলাে , তারা সূতের নিকট কৃষ্ণলীলাময় ভাগবত - রচনা - কাহিনী শুনতে চাইলেন । তখন সূত খুশি হয়ে পরমানন্দদায়ক সেই ভাগবত কাহিনী বর্ণনা করলেন ।
পরমপূজ্য ব্যাসদেব বেদ বিভাগ করে এবং মহাভারত রচনা করেও যখন তৃপ্তি পেলেন না , তখন মহর্ষি নারদ তাঁকে উপদেশ দিলেন , তিনি যেন । হরিলীলামৃত ভাগবত রচনা করেন । এই প্রসঙ্গে নারদ মুনি আত্মকাহিনী বর্ণনা করলেন - পূর্বজন্মে নারদ ছিলেন এক দাসীপত্র । অল্পবয়সে সর্পাঘাতে তারা মায়ের মৃত্যু হলে তিনি বাড়ি - ঘর ছেড়ে দিয়ে নির্জন অরণ্যে কঠোর তপস্যায় মগ হলেন । এইভাবেই দেহত্যাগ করে পরজন্মে ভগবানের পার্শ্বচর হবার অধিকার লাভ করলেন ।
নারদের কাছ থেকে উপদেশ পেয়ে ব্যাসদেব ভাগবত সংহিতা রচনা করলেন এবং তাঁর পুত্র শুকদেবকে সর্বপ্রথম ভাগবত কথা শিখালেন ।
পরমজ্ঞানী শুকদেব কিভাবে সর্বসমক্ষে ভাগবত কাহিনী প্রচার করলেন , সেই কথা বলতে গিয়ে সূত সমবেত মুনিগণের নিকট সংক্ষেপে দুর্যোধনের উরুভঙ্গ , অশ্বত্থামার দণ্ডবিধান , শ্রীকৃষ্ণ কর্তৃক উত্তরার গৰ্ভরক্ষা , শ্রীকৃষ্ণের দ্বারকা গমনাদি বিষয় বর্ণনা করলেন । তারপর তিনি বললেন পরীক্ষিতের কাহিনী । কৃষ্ণসখা মহাবীর অর্জুনের পুত্র অভিমন্যু । সেই অভিমন্যুর পুত্র হলেন পরীক্ষিত । পরীক্ষিত ত্রিভুবন জয় করে কলিকে শাসন করেছিলেন । একসময় পরীক্ষিত মৃগয়ায় বেরিয়ে তৃষ্ণা নিবারণের জন্য শমীক মুনির আশ্রমে প্রবেশ করেন । ধ্যানমগ্ন মুনি রাজা পরীক্ষিতের প্রার্থনা শুনতে না পাওয়ায় ক্রোধে পরীক্ষিত তার গলায় এক মরা সাপ ঝুলিয়ে দিয়ে আসেন । ফলে মুনিপুত্র শৃঙ্গী ক্রুদ্ধ হয়ে অভিশাপ দিলেন যে সাত দিনের শেষে সর্পদংশনে পরীক্ষিতের মৃত্যু হবে ।
পরীক্ষিত ব্রহ্মশাপের কথা শুনে গঙ্গাতীরে অবস্থান করে অনশনে দেহত্যাগ করবেন স্থির করলেন । সেই উদেশ্যে গঙ্গাতীরে গিয়ে উপনীত হলেন । সংবাদ পেয়ে ঋষিগণও সমবেত হলেন সেখানে । তারা পরীক্ষিতের সঙ্গে নানারূপ শাস্ত্র কথা আলাপ করতে লাগলেন । মহামুনি শুকদেব সেই সময়ে সারা পৃথিবী ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন । ঘুরতে ঘুরতে তিনি সেখানে উপনীত হলেন । সমবেত মুনিগণ তাঁকে পাদ্যার্ঘ্যাদি দ্বারা তুষ্ট করলেন । তারপর তার নিকট মৃত্যুকালােপযােগী আচরণীয় ধর্ম কি , তাই জানতে চাইলেন ।
পরমভাগবত শুকদেব ব্যাসদেবের পুত্র । তিনি মুনিদের এবং পরীক্ষিতের এইরূপ প্রশ্নে সন্তুষ্ট হয়ে তাঁদের যােগমাহাত্ম এবং চিত্তশুদ্ধি সম্বন্ধে অনেক উপদেশ দান করলেন । এই প্রসঙ্গে যােগসাধন , যােগিগণের ধ্যানতত্ত্ব , দেহযােগ , যােগের ফলাফল এবং সকাম ও নিষ্কাম উপদেশ দান করে ভক্তিযােগকেই সকলের শ্রেষ্ঠ বলে বর্ণনা করলেন ।
পরীক্ষিতের এবং মুনিগণের প্রশ্নের উত্তরে শুকদেব এই সম্বন্ধে আরও কাহিনী এবং হরিলীলা মাহাত্মও বর্ণনা করলেন । নারদের অনুরােধে ব্ৰহ্মা ঈশ্বরের বিরাট রূপ , ভগবানের বিভিন্ন অবতার , ভাগবতের তত্ত্ব প্রভৃতি সম্বন্ধে । যা কিছু বলেছিল , শুকদেব সে সবও বর্ণনা করলেন । তা শুনে সকলের মনে গভীর জ্ঞান ও ভক্তির উদয় হ ' ল ।
অতঃপর শৌনকাদি মুনিগণের অতিরিক্ত আগ্রহ দেখে মহামুনি সূত কৃষ্ণভক্ত বিদুরের কাহিনী বর্ণনা করলেন । বেদব্যাস পুত্র বিদুর ছিলেন পরম কৃষ্ণভক্ত । তিনি যখন ধৃতরাষ্ট্রকে কোনক্রমেই পাপপথ থেকে নিবৃত্ত করতে পারলেন না , তখন তিনি সংসার বিরাগী হয়ে গৃহত্যাগ করলেন । পথিমধ্যে উদ্ধবের সঙ্গে তাঁর দেখা হল । তিনি উদ্ধবের নিকট ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এবং যদুবংশের কুশল জানতে চাইলেন । উদ্ধব তখন কাঁদতে কাঁদতে জানালেন , শ্রীকৃষ্ণ লীলাবসান করেছেন এবং যদুবংশও ধ্বংস হয়েছে । কৃষ্ণদর্শন থেকে বঞ্চিত হয়ে বিদুর অত্যন্ত ক্ষুব্ধচিত্তে বদরিকাশ্রমে চলে যেতে চাইলেন । উদ্ধব তাঁকে বললেন যে , মহামুনি মৈত্রেয় ঋষির কাছেই রয়েছেন । বিদুর যদি তার কাছে গিয়ে উপদেশ লাভ করতে পারেন , তবে নিশ্চয়ই সান্ত্বনা পাবেন ।
উদ্ধবের কথায় মহামতি বিদুর গঙ্গাতীরে মৈত্রেয় মুনির সাথে সাক্ষাৎ করলেন । দীর্ঘকাল মৈত্রেয় মুনির সঙ্গে থেকে বিদুরের অমৃতমধুর তত্ত্বজ্ঞান লাভ হলাে । মৈত্রেয় মুনি সৃষ্টিরহস্য ব্যাখ্যা করলেন , নারায়ণ - মাহাত্ম্য বর্ণনা করলেন , ব্রহ্মাদির জন্ম , ব্রহ্মার হরিস্তব , কাল ও মন্বন্তর নিরূপণ , প্রলয়ের কথা ইত্যাদি বিস্তৃতভাবে আলােচনা করলেন । বিষ্ণুর বিভিন্ন অবতাররূপে আত্মপ্রকাশ কাহিনীও তিনি সবিস্তার বর্ণনা করলেন । কশ্যপের ঔরসে দিতির গর্ভে কিভাবে দৈত্যদের জন্ম হলাে এবং দৈত্যভয়ে সনকাদি মুনি বিষ্ণুর নিকট কাতর প্রার্থনা জানালে বিষ্ণু কিভাবে তাদের অভয়দান করলেন এবং অবশেষে বরাহরূপ ধারণ করে দৈত্যপতি হিরণ্যাক্ষকে বধ করলেন । এইসব অপূর্ব কাহিনী শুনে বিদুরের মন পুলকে ভরে উঠল । অতঃপর মৈত্রেয় ঋষি লােকসৃষ্টি বর্ণনা করে মহর্ষি কর্দম কাহিনী , কর্দমের সঙ্গে মনুকন্যা দেবহূতির বিবাহ এবং সেই বিবাহের ফলে দেবহৃতির গর্ভে কপিলরূপে বিষ্ণুর আবির্ভাব কাহিনীও বিদুরকে শুনালেন । ব্রহ্মজ্ঞানী কপিলের কাহিনী শুনে বিদুরের দেহ । আনন্দে রােমাঞ্চিত হলাে ।
শৌনকাদি ঋষিগণ সূতের মুখে মৈত্রেয় - বিন্দুর সংবাদ শ্রবণে অতিশয় আনন্দিত হলেন । অতঃপর সূত মৈত্রেয় - কথিত মনুর বংশ বর্ণনা করলেন । মনু আদি মানব - মনু থেকেই সমস্ত মানবের উৎপত্তি । মনুর অনেক কন্যার মধ্যে এক কন্যা প্রসূতি । ব্রহ্মাপুত্র দক্ষ প্রসূতিকে বিবাহ করলেন । তাঁদের ষােলটি কন্যার তেরটি ধর্মকে , একটি অনলকে , একটি পিতৃগণকে এবং সতী । নামক কন্যা মহাদেবকে দান করলেন ।
একবার দক্ষ দেবতাদের যজ্ঞস্থলে গমন করেন । মহাদেব তাকে দেখে উঠলেন না বলে দক্ষ অপমান বােধ করে মহাদেবকে অভিশাপ দিলেন যে তিনি আর যজ্ঞভাগ পাবেন না । মহাদেব তথাপি শান্তভাবে বসেই রইলেন । কিন্তু তাঁর অনুচর নন্দী দক্ষের ঔদ্ধত্য সহ্য করতে না পেরে অভিশাপ দিলেন যে দক্ষের ছাগমুণ্ড হবে ।
শ্বশুর - জামাতার বিবাদ কিছুকাল চলবার পর দক্ষ এক বিরাট যজ্ঞের অনুষ্ঠান করলেন । মহাদেবকে অপমানিত করবার উদেশ্যে সেই যজ্ঞে তাঁকে আর নিমন্ত্রণ করলেন না । অথচ সারা বিশ্ব নিমন্ত্রণ পেয়ে সেখানে উপস্থিত হয়েছে । শিবপত্নী সতী পিতৃগৃহে যজ্ঞ হবে শুনতে পেয়ে বাপের বাড়ি যাবার জন্যে বায়না ধরলেন । মহাদেব তাতে আপত্তি করলেন , কিন্তু তবু যখন তিনি । যেতে উদ্যত হলেন , তখন শিবের অনুচরগণও তাঁর সঙ্গী হলাে । সতী পিতৃ গৃহে উপনীত হলে কেউ তাঁর সমাদর করল না । পক্ষান্তরে শিবের নিন্দায় প্রাণান্ত ছিলাে । ক্ষোভে , দুঃখে যজ্ঞস্থলেই তিনি দেহত্যাগ করলেন । শিবের অনুচরগণ তখন রেগে গিয়ে যজ্ঞ নষ্ট করতে উদ্যত হলাে । তখন যজ্ঞের ভিতর থেকে বেরিয়ে এলেন ঋভুগণ , তাঁরা এই যজ্ঞ রক্ষা করতে এগিয়ে এলেন । এদিকে মহাদেব সতীর দেহত্যাগের সংবাদ পেয়ে তাঁর জটা থেকে সহস্রবাহু । বীরভদ্রকে সৃষ্টি করে তাঁকে দক্ষযজ্ঞ নষ্ট করতে আদেশ দিলেন । বীরভদ্র শিবের অনুচরদের সহায়তায় দক্ষের মুণ্ড ছেদন করলেন এবং যজ্ঞ নষ্ট করলেন । তখন ব্রহ্মা আদি দেবগণ মহাদেবকে স্তবস্তুতিতে সন্তুষ্ট করলেন , মহাদেবও দক্ষের জীবনদান করলেন ; কিন্তু তার কণ্ঠে স্থাপন করা হলাে ছাগমুণ্ড ।
মৈত্রেয় ঋষি এইভাবে দক্ষযজ্ঞের কাহিনী বর্ণনা করে অতঃপর মনুর পুত্র উত্তানপাদের বংশ - কাহিনী বর্ণনা করলেন । উত্তানপাদের দুই পত্নী সুরুচি ও সুনীতি । সুনীতির পুত্র ধ্রুব । পিতা এবং বিমাতা তাকে খুব অবহেলা করেন । সুনীতি তখন পুত্রকে বললেন যে , ভগবান বিষ্ণু তার প্রতি তুষ্ট হলেই জীবন । সার্থক হতে পারে । এ কথা শুনে বালক ধ্রুব গৃহত্যাগ করলেন এবং পরে নারদের উপদেশে শ্রীহরির ধ্যান করতে লাগলেন । দীর্ঘকাল কঠোর তপস্যার পর বালক ধ্রুবের ভগবানের দর্শন লাভ হলাে । অতঃপর তার নিকট বর লাভ করে ধ্রুব রাজ্যে ফিরে এলেন । দীর্ঘকাল রাজ্যভােগ করে তিনি ধ্রবলোকে গমন করলেন ।
মৈত্রেয়ের মুখে ধ্রুবের কাহিনী শুনে বিদুর অপরাপর বিষ্ণু ভক্তদের কথাও শুনতে চাইলেন । তখন মৈত্রেয় বলতে লাগলেন :
মনুর অনেক পুত্রের মধ্যে উল্লুকও একজন । উল্লুকের পুত্র অঙ্গ । অঙ্গ ছিলেন অতি সচ্চরিত্র , সাধু । কিন্তু তাঁর পুত্র বেণ ছিল অতিশয় অধার্মিক , নিষ্ঠুর এবং অসচ্চরিত্র । একবার ব্রাহ্মণদের অপমান করলে তারা কুপিত হয়ে বেণকে সংহার করলেন এবং পরে বংশরক্ষার উদেশ্যে তার বাহু মন্থন করে এই পুত্র উৎপন্ন করলেন । এই পুত্রের নাম পৃথু । পৃথু ছিলেন ধর্মরক্ষকদের প্রধান স্বয়ং ধরিত্রী মাতাও ছিলেন তাঁর পুত্রীতুল্যা । রাজা পথ সুদীর্ঘকাল । সগৌরবে রাজত্ব করে বিষ্ণুপদে লীন হলেন । পৃথুর মৃত্যুর পর বিজিতাশ্ব রাজা । হলেন । পৃথুর কাহিনী এবং প্রচেতাদের উপাখ্যান শেষ করে মৈত্রেয় প্রিয়ব্রতের কাহিনী আরম্ভ করলেন ।
মনু পুত্র প্রিয়ব্রত ছিলেন ধ্রুব পিতা উত্তানপাদের ভ্রাতা । যৌবনে যখন তাঁকে যৌবরাজ্যে অভিষিক্ত করা হবে , তখনই নারদের উপদেশে তার মনে আত্মজ্ঞানের উদয় হলাে । তিনি তখন বনে গিয়ে নারায়ণের চিন্তায় আত্মনিয়ােগ করতে উদ্যত হলে ব্রহ্মা নানাভাবে প্রবােধ দিয়ে তাকে রাজ্যগ্রহণে সম্মত করলেন । সমস্ত কর্তব্য শেষ করে হরিপদ স্মরণ করতে করতে প্রিয়ব্রত পরমব্রহ্মে লীন হলেন । প্রিয়ব্রতের পুত্র অগ্নী , অগ্নীব্রের পুত্র নাভি । ভগবান । স্বয়ং নাভির ঔরসে ঋষভরূপে জন্মগ্রহণ করেছিলেন । রাজা ঋষভ ব্রাহ্মণদেরও উপদেশ দানে সক্ষম ছিলেন । ঋষভের পুত্র ভরতের নাম অনুসারেই ভারত বর্ষের নামকরণ হয় ।
ভরত যৌবনে পঞ্চজনী নামক কন্যাকে বিয়ে করেন । দীর্ঘকাল সগৌরবে । পৃথিবী ভােগ করবার পর তার মনে বৈরাগ্যের উদয় হলে তিনি পঞ্চপুত্রের । হাতে রাজ্য দিয়ে গণ্ডকীতীরে সাধন - ভজনে রত হলেন । একদিন সিংহের মুখ থেকে এক হরিণ শাবককে রক্ষা করবার পর আপনা থেকেই এর লালন পালনের ভার পড়ল তার উপর । ক্রমে ভরতের সাধন - ভজন দূরে গেল - তিনি হরিণের চিন্তায়ই মেতে রইলেন । ফলে মৃত্যুর পর তিনি নিজেও হরিণরূপেই জনুগ্রহণ করেন । পরে গণ্ডকীতে আত্মবিসর্জন করে তিনি হরিণদেহ ত্যাগ করেন এবং এক ব্রাহ্মণের সন্তানরূপে জন্মগ্রহণ করলেন । অন্তরে পূর্ণ জ্ঞানময় । হলেও তিনি বাইরে জড়ভাব গ্রহণ করলেন । পিতার মৃত্যুর পর ভ্রাতারা তাঁকে জড় অথচ বলিষ্ঠ দেখে কষিকর্মে নিযুক্ত করল । একদিন কালীর কাছে নরবলি । দেবার জন্যে চোরেরা তাকে ধরে নিয়ে গেল । মহাকালী ভরতের অন্তরের ভাব জ্ঞাত ছিলেন বলে তাঁকে রক্ষা করলেন এবং চোরকে হত্যা করলেন । অতঃপর সিন্ধুসৌৰীরের রাজা রহুগণ ভরতকে দিয়ে পাল্কী বহাতে গেলেন । এই সময় একদিন ভরত জড়তু ত্যাগ করে রহুগণকে তত্ত্বজ্ঞান দান করলেন । এ ভরতই পুরাণে জড়ভরত নামে খ্যাত । ভরত হতেই ভারতবংশের উৎপত্তি পাণ্ডবগণ এবং রাজা পরীক্ষিত এই বংশেরই সন্তান । ভরত বংশের বহু নৃপতি বহুবিধ সঙ্কর্ম করে ধরণীতে অমরত্ব লাভ করেছেন ।
পিতপুরুষদের কাহিনী শুনে রাজা পরীক্ষিত খুবই আনন্দিত হলেন । তারপরই তিনি জানতে চাইলেন , প্রায়শ্চিত্ত দ্বারা পাপী কিরূপে পাপমুক্ত হয় । শুকদেব তখন অজামিল কাহিনী বর্ণনা করলেন । কান্যকুজে অজামিল নামে । এক ব্রাহ্মণ ছিলেন । তিনি এক শূদ্র কন্যাকে বিবাহ করে সদাচারভ্রষ্ট হন , চুরি করে এবং লােককে বঞ্চনা করে জীবিকা নির্বাহ করতে থাকেন । নারায়ণ নামে তাঁর এক পুত্র ছিল । অজামিলের মৃত্যুকাল উপস্থিত হলে তিনি মৃত্যুভয়ে পুত্র নারায়ণকে উচ্চস্বরে বার বার ডাকতে লাগলেন । সঙ্গে সঙ্গে তাঁর মৃত্যু হলাে । আর একদিক থেকে যমদূতগণ এবং অপর দিক থেকে বিষ্ণুদূতগণ তাঁর আত্মাকে নিয়ে যাবার জন্য উপস্থিত হলেন । এখন অজামিলের আত্মার উপর কার অধিকার তা নিয়ে উভয় পক্ষে ঘাের বিবাদ বাধল । অজামিল সারাজীবন পাপাচারণ করেছেন , কাজেই যমদূতগণ তাঁকে দাবী করেছে । কিন্তু মৃত্যুকালে । অজামিল ‘ নারায়ণ ’ নাম উচ্চারণ করেছেন বলে বিষ্ণুদূতগণ তাঁকে পাপমুক্ত বিবেচনায় বিষ্ণুধামে নিয়ে যেতে চাইলেন । শেষপর্যন্ত তিনি বিষ্ণুলােকেই আশ্রয় লাভ করলেন । অজ্ঞানেও যদি কেউ ‘ নারায়ণ ’ নাম উচ্চরণ করে , তবে তার মুক্তি অবশ্যম্ভাবী । শুকদেব অতঃপর দক্ষের প্রজাসৃষ্টি , নারদের প্রতি দক্ষের অভিশাপ এবং দক্ষ কন্যাগণের বংশ বর্ণনা করে বৃহস্পতি ও ইন্দ্রের বিরােধের কাহিনী বললেন ।
ইন্দ্র একদিন স্বর্গসভায় যখন আমােদ - প্রমােদে মত্ত ছিলেন , তখন দেবগুরু বৃহস্পতি সেই সভায় উপনীত হলেন । কিন্তু মােহমত্ত ইন্দ্র তাঁর দিকে ফিরেও চাইলেন না । দেবগুরু বৃহস্পতি অপমানিত বােধ করে স্বর্গ ত্যাগ করলেন । এদিকে দেবগুরুর অনুপস্থিতিতে স্বর্গে অকল্যাণ দেখা দিল । অসুরগণ সহজেই দেবতাদের পরাস্ত করে স্বর্গরাজ্য অধিকার করে নিল । ইন্দ বৃহস্পতির অনুসন্ধানে স্বর্গ - মর্ত্য তােলপাড় করলেন , কিন্তু কোথাও দেবগুরুর সন্ধান পেলেন না । তখন গুরুর সন্ধানে তিনি প্রজাপতি ব্রহ্মার কাছে উপনীত হলেন । ব্রহ্মা তৃষ্টাকে দেবতাদের গুরুরূপে বরণ করতে উপদেশ দিলেন । ইন্দ্র ব্রহ্মার উপদেশে সবিনয়ে তৃষ্টাকে গুরুপদে বরণ করলে তৃষ্টা তুষ্ট হয়ে তাঁকে এক কবচ দান করলেন । সেই কবচের জোরে ইন্দ্র আবার স্বর্গরাজ্য ফিরে পেলেন । অসুরেরা পরাজিত হয়ে পালিয়ে গেল । কিন্তু একদিন তৃষ্টার পুত্রকে অসুরের হিতাকাক্ষী মনে করে ইন্দ্র তাঁকে হত্যা করলেন তৃষ্টা সেই সংবাদ শুনে ইন্দ্রের উপর অতিশয় ক্রুদ্ধ হয়ে তার বিনাশের জন্য এক যজ্ঞের অনুষ্ঠান । করলেন । যজ্ঞানল থেকে বিরাট দর্শন এক অসুর আবির্ভূত হলাে - তার নাম বৃত্র । এই বৃত্রকেই ত্বষ্টা নিধন সাধনে নিযুক্ত করলেন ।
তৃষ্টার আশীর্বাদে বৃত্র সর্বজয়ী হয়ে উঠল । তার অত্যাচারে দেবতারা স্বর্গ ত্যাগ করলেন - ইন্দ্র রাজ্যহারা হলেন । তখন সমস্ত দেবতাদের সঙ্গে নিয়ে ইন্দ্র অগতির গতি বিষ্ণুর নিকট উপনীত হলেন । ভগবান তখন বললেন যে , মর্ত্যলােকে দধীচি নামে এক ব্রহ্মবিৎ ব্রাহ্মণ আছেন । তার অস্থি থেকে বড় নির্মাণ করে সেই বজ্রের সাহায্যেই শুধু বৃত্রাসুরকে বধ করা যাবে । বিষ্ণুর উপদেশে ইন্দ্র তখন কয়েকজন দেবতাসহ মর্ত্যলােকে মুনিবর দধীচির কাছে গেলেন ও সব কথা তাঁকে খুলে বললেন । দধীচি দেবতাদের রক্ষার জন্য । দেহত্যাগ করলেন । তখন তাঁর দেহ থেকে অস্থি সংগ্রহ করে ইন্দ্র বজ্র নির্মাণ করলেন এবং সেই বজ্রের আঘাতে বৃত্রকে বধ করলেন ।
বৃত্র অসুর হলেও ব্রহ্মজ্ঞানী ছিল , তাই তাকে বধ করায় ইন্দ্রের ব্রহ্ম হত্যার পাপ হলাে । ইন্দ্র ভয়ে এক পদ্মনালে আশ্রয় গ্রহণ করলেন । তখন স্বর্গের সিংহাসনে মর্তের জ্ঞানিশ্রেষ্ঠ নহুষকে বসানাে হলাে । স্বর্গ সিংহাসনে । বসে নহুষের জ্ঞানবুদ্ধি লােপ পেল , তিনি ভােগে উন্মুক্ত হয়ে উঠলেন । ইন্দ্রপত্নী শচীকেও রাণীরূপে পাবার জন্য তাঁর আগ্রহ হলাে । শচীরাণী তখন আত্মরক্ষার জন্য ছলনার আশ্রয় গ্রহণ করলেন । তিনি বললেন যে , নহুষ যদি ব্রাহ্মণ বাহিত শিবিকায় তাঁর নিকট আসতে পারেন , তবেই তিনি নহুষকে স্বামীরূপে গ্রহণ করবেন । উন্মত্ত নহুষ তখন অগস্ত্যাদি নয়জন মুনিকে শিবিকাবাহনে নিযুক্ত করলেন । অগস্ত্য মুনি একবার একটু ধীরে ধীরে চলছিলেন । নহুষ রাজা তাতে অধৈর্য হয়ে অগস্ত্যকে পদাঘাত করলেন । তখনি অগস্ত্য তাঁকে শাপ দিলেন তুমি সর্পে পরিণত হও । দেখতে দেখতে নহুষ সাপ হয়ে গেলেন । ইন্দ্র ও অশ্বমেধ যজ্ঞ করে পাপস্ফালন করলেন এবং স্বর্গের সিংহাসন লাভ করলেন ।
এরপর শুকদেব বর্ণনা করলেন দেব দৈত্য এবং মরুৎ বংশের কাহিনী । ( বিপরীত ভক্তির দ্বারাও কিভাবে ভগবানের অনুগ্রহ লাভ করা যায় শুকদেব সেই কাহিনীরও বর্ণনা করলেন । নারায়ণের দ্বারপাল জয় ও বিজয় । সনকাদি | চার মুনির শাপে তারা মর্তে হিরণ্যকশিপু এবং হিরণ্যাক্ষ নামে দষ্ট দৈত্যরূপে জন্মগ্রহণ করল । বরাহরূপী বিষ্ণুর হস্তে জ্যেষ্ঠ হিরণ্যাক্ষের মৃত্যু হলে পর কনিষ্ঠ হিরণ্যকশিপু ভয়ানকভাবে বিষ্ণুর শত্রুতা করতে লাগলেন । দেশে যত বৈষ্ণব ছিলেন তাঁদের উপর হিরণ্যকশিপুর অত্যাচার শুরু হলাে । সুদীর্ঘকাল দৈত্যরাজ হিরণ্যকশিপু কঠোর তপস্যা করে ব্রহ্মার দর্শন লাভ করেছিলেন । ব্রহ্মার থেকে রাজা বর আদায় করেছিলেন যে ব্রহ্মার সৃষ্ট কোন প্রাণীর হাতেই ভূমিতে , জলে কিংবা আকাশে তাঁর মৃত্যু ঘটবে না । সেই ব্রহ্মার বলে বলীয়ান হয়ে হিরণ্যকশিপু স্বর্গরাজ্যে অত্যাচার করে দেবতাদের স্বর্গচ্যুত করলেন । দেবতারা তখন হিরণ্যকশিপুর অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে বিষ্ণুর কাছে গেলে বিষ্ণু বললেন যে , তিনি তার বধের উপায় করবেন ।
হিরণ্যকশিপুর চার পুত্র - তাদের মধ্যে প্রহলাদ কনিষ্ঠ । অতি বাল্যকাল থেকেই প্রহলাদ অতিশয় বিষ্ণুভক্ত । কৃষ্ণের নাম স্বরণ করতেই তার চোখে জল আসে । কৃষ্ণের প্রতি যাতে তার মন বিরূপ হয় এজন্য হিরণ্যকশিপু তাকে যণ্ড ও অমার্ক নামে দুই গুরুর হাতে তুলে দিলেন । কিন্তু তাতেও প্রহলাদের কৃষ্ণভক্তি দূর হলাে না । তখন হিরণ্যকশিপু প্রহ্লাদকে হত্যার সঙ্কল্প করলেন । নিক্ষেপ করা হলাে , বিষ খাওয়ানাে হলাে , কিন্তু কিছুতেই প্রহ্লাদের মৃত্যু হলাে না । কৃষ্ণ নাম করে প্রহলাদ সমস্ত বিপদ উত্তীর্ণ হয়ে গেল । একদিন হিরণ্যকশিপু | রাজসভায় বসে প্রহলাদকে জিজ্ঞেস করলেন - কোথায় তাের কৃষ্ণ ? প্রহলাদ । বলল যে , কৃষ্ণ সর্বত্রই বিদ্যমান । এমন কি স্ফটিকের স্তম্ভের ভেতরেও কৃষ্ণ রয়েছেন । হিরণ্যকশিপু তখন লাথি দিয়ে স্তম্ভ ভেঙ্গে ফেলতেই তার জ্যে থেকে নরসিংহরূপী ভগবান নারায়ণ আবির্ভূত হলেন । হিরণ্যকশিপুকে উন উপর রেখে উদর চিরে হত্যা করলেন । অতঃপর প্রহলাদের স্তবে সন্ত্রই মত প্রহ্লাদকে ব্রহ্মজ্ঞান দান করলেন । ইহলােকে রাজ্যভােগ করবার পর প্রহলাদ পরলােক বিষ্ণুপদে লীন হলেন ।
শুকদেব ইহার পর গজকচ্ছপের যুদ্ধ বর্ণনা করলেন । গন্ধর্বনন্দন তত দেবল মুনির শাপে কচ্ছপরূপে এবং ইন্দ্রদ্যুম্ন নামে রাজা অগস্ত্যের শাপে গজরূপে পরিণত হয়েছিলেন । নারায়ণের স্পর্শলাভে পরস্পর যুদ্ধরত গজ এ কচ্ছপ মুক্তিলাভ করল ।
এরপর কথায় কথায় শুকদেব সমুদ্র মন্থন - কাহিনী বর্ণনা করলেন । দুর্বাসার অভিশাপে ইন্দ্র লক্ষ্মীভ্রষ্ট হলে লক্ষ্মী আশ্রয় নিলেন সমুদ্রগর্ভে । ফলে দেবতাগণ শ্রীহীন ও শক্তিহীন হয়ে পড়লেন । তখন নারায়ণের পরামর্শে লক্ষ্মীকে পুনরুদ্ধার করবার জন্য দেবতাগণ অসুরদের অমৃতের লােভ দেখিয়ে তাদের সাহায্য নিয়ে সমুদ্র মন্থনের আয়ােজন করলেন । নারায়ণ কুর্মরূপে । অবস্থান করলেন তার পৃষ্ঠে মন্দার পর্বতকে স্থাপন করা হলাে । বাসুকিকে । রজ্জ্ব করে দেবতা ও অসুরগণ সমুদ্র মন্থন করলেন । মন্থনের ফলে সুরভি গাভী , উচ্চৈঃশ্রবা অশ্ব , এরাবত হস্তী , কৌস্তভমণি , পারিজাত বৃক্ষ , অপ্সরা , অমৃত ও লক্ষ্মীর আবির্ভাব ঘটল । দেবতাগণই সমুদ্র মন্থনের ফল লাভ করলেন । পরে । যখন আবার মন্থন হলাে , তখন বাসুকি বিষ উদ্গার করলেন । মহাদেব সেই বিষ কণ্ঠে ধারণ করে সৃষ্টি রক্ষা করলেন । স্বর্গ আবার লক্ষ্মী শ্রীযুক্ত হলাে । ভগবান এইভাবে কুর্মরূপে পৃথিবীকে উদ্ধার করবার পর বামনরূপে বলিকে ছলনা করলেন ।
পাতালে দৈত্যপতি বলি বিশ্বজিৎ যজ্ঞের অনুষ্ঠান করেন । সেই যজ্ঞের প্রভাবে তিনি দেবতাদেরও শক্তি ক্ষয় করলেন । তখন দেবতাদের কাতরতা দর্শনে ভগবান দেবজননী অদিতির গর্ভে জন্মগ্রহণ করলেন বামনরূপে । বাল । ছিলেন বড় দাতা । তাঁর দানগর্বের সুযােগ নিয়ে বামন তিন পদ পরিমিত স্থান ভিক্ষা চাইলেন । বলি দানে স্বীকৃত হলে বামন দুই পদে স্বর্গ - মর্ত্য অধিকার করে তৃতীয় পদের স্থান চাইলেন - তখন বলি নিরুপায় হয়ে নিজের মাথা পেতে দিলেন । তৃতীয় পদে বামন বলিকে পাতালে প্রেরণ করে দেবতাদিগকে দৈত্যের হাত থেকে পরিত্রাণ করলেন ।
বিষ্ণুর বামনাবতারের কাহিনী শুনে মৎস্যাবতারের কাহিনী শােনবার আগ্রহ হল পরীক্ষিতের । তখন শুকদেব মৎস্যাৰতার কাহিনী বর্ণনা করলেন ।
হয়গ্রীব নামে দৈত্য বেদ হরণ করলে ভগবান স্বয়ং ক্ষুদ্রাকৃতি মৎস্যরূপে মনুর নিকট উপনীত হলেন । ক্রমে সেই মৎস্য বড় হতে হতে মনু সত্যব্রতের নিকট স্বরূপ প্রকাশ করে সবৌষধি , সর্ববীজ এবং ঋষিদের সঙ্গে নিয়ে এক নৌকায় প্রবেশ করতে বললেন । মৎস্যের উপদেশে মনু ঐভাবে নৌকায় আরােহণ করলে পৃথিবীতে মহাপ্রলয় উপস্থিত হলাে - মৎস্যরূপী বিষ্ণু নিজের শৃঙ্গসাহায্যে ঐ নৌকা রক্ষা করলেন । অতঃপর ভগবান হয়গ্রীবকে বধ করে ব্রহ্মার হস্তে বেদ সমর্পণ করলেন ।
এইভাবে বিভিন্ন অবতার - কাহিনী শােনবার পর রাজা পরীক্ষিত সূর্য বংশ ও চন্দ্র বংশের কাহিনী শুনতে চাইলেন ।
মনুর পুত্রলাভের আগ্রহ এবং তার স্ত্রী শ্রদ্ধাদেবীর কন্যালাভের আগ্রহ থেকে তাদের যে সন্তান জন্মাল , মহাদেবের বরে সেই সন্তান পর্যায়ক্রমে পুরুষ ও নারীতে রূপান্তরিত হলাে । পুত্ররূপে তার নাম সুদ্যুম এবং কন্যারূপে ইলা । ইলার গর্ভে এবং বুধের ঔরসে রাজা পুরুরবার জন্ম হয় - পুরুরবা থেকেই চন্দ্র বংশের উৎপত্তি । মনুর অপর সন্তান ইক্ষাক্ষু থেকে সূর্য বংশের সৃষ্টি ।
সূর্যবংশে অম্বরীষ নামে এক পরম বিষ্ণুভক্ত নৃপতির জন্ম হয় । একদিন একাদশীর উপবাসান্তে পারণের উদেশ্যে রাজা হাতে গণ্ডুষ নিয়েছেন , এমন সময় মহামুনি দুর্বাসা তার অতিথি হলেন । অতিথিকে উপবাসী রেখে রাজা পারণ করতে পারেন না । হাতের গণ্ডুষ ফেলে দিয়ে তিনি ঋষিকে স্নান - আহ্নিক সেরে আসতে বললেন । এদিকে দ্বাদশী উত্তীর্ণ প্রায় , তবু দুর্বাসার স্নান - আহ্নিক শেষ হয় না , অথচ দ্বাদশীর মধ্যে পারণ না করলে রাজার হরিব্রত ভঙ্গ হয় । তাই রাজা অম্বরীষ হরিনাম স্মরণ করে এক গণ্ডুষ জল মুখে দিয়েছেন , এমন সময় দুর্বাসা দেখা দিলেন । তিনি রাজাকে পারণ করতে দেখে শাপ | দিলেন - সেই শাপে সমস্ত রাজ্যে আগুন লেগে গেল । নিরুপায় রাজা মনে । মনে নারায়ণকে ডাকতে লাগলেন । ভক্তের আকুল আহ্বানে নারায়ণ শাপ | প্রতিরােধ করবার জন্য সুদর্শন চক্র প্রেরণ করলেন । সুদর্শন অম্বরীষের প্রতি শাপ নিবারণ করে দুর্বাসার পশ্চাদ্ধাবন করল । দুর্বাসা প্রাণভয়ে পৃথিবীময় ছুটে বেড়াতে লাগলেন । কিন্তু কোথাও পরিত্রাণের পথ খুঁজে পেলেন না । অবশেষে তিনি রাজা অম্বরীষেরই শরণাগত হলেন । তখন সুদর্শন তাকে মুক্তিদান করল ।
মান্ধাতা , ত্রিশঙ্কু প্রভৃতি নৃপতিগণ সূর্য বংশে জন্মেছিলেন । এই বংশের রাজা ভগীরথ পূর্বপুরুষদের মুক্তিকামনায় কঠোর তপস্যা করে স্বর্গলােক থেকে গঙ্গার পবিত্র ধারাকে পৃথিবীকে বুকে বইয়ে দিলেন । পৃথিবী পবিত্র হলাে ভগীরথের নামে গঙ্গা নাম গ্রহণ করলেন ভাগীরথী । '
অতঃপর , শুকবেদ ক্রমে ক্রমে সূর্যবংশীয় নৃপতি ভগবান রামচন্দ্রের কীর্তি কাহিনী বর্ণনা করে পরশুরাম , কার্তবীর্যাজুন , বিশ্বামিত্র প্রভৃতির কাহিনীও সবিস্তারে বর্ণনা করলেন । তারপর যযাতির বিবরণ , পুরুষংশ কথা , রন্তিদেবের কাহিনী , জরাসন্ধ , যুধিষ্ঠির ও দুর্যোধনের মনােরম উপাখ্যান বললেন । এইভাবে সূর্যবংশ ও চন্দ্র বংশের কাহিনী বর্ণনার পর যদু বংশের কাহিনী আরম্ভ হলাে ।
চন্দ্র বংশীয় নৃপতি নহুষের পুত্রদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন যযাতি । যযাতির পাঁচ পুত্র - যদু , তুর্বসু , অনু , দুস্থ্য এবং পুরু । যদু হতে যে বংশের উৎপত্তি , তার নাম যদুবংশ ।
পৃথিবী অধর্মের ভারে পীড়িতা হচ্ছেন , তখন দেবগণের সঙ্গে স্বয়ং ব্রহ্মা | ক্ষীরােদ সাগরের তীরে পাপভার লঘু করবার জন্যে নারায়ণের তপস্যা আরম্ভ করলেন । কমললােচন ভগবান নারায়ণ তাঁদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে বললেন যে , দুষ্টের দমন এবং শিষ্টের প্রতিপালন নিমিত্ত তিনি যদুবংশের পরমভাগবত বসুদেবের গৃহে জন্মগ্রহণ করবেন । এক অংশে তিনি দেবকী গর্ভে এবং অন্য অংশে রােহিণী গর্ভে উদয় হবেন ।
সেই কথা অনুসারে নারায়ণ যথাসময়ে মাতৃগর্ভে আশ্রয় গ্রহণ করলেন । । মথুরার রাজা কংস অতি অত্যাচারী । তাঁর ভগিনী দেবকী বসুদেবের সঙ্গে পরিণীতা হয়েছিলেন । বিবাহ অন্তে কংস যখন রথে করে নিয়ে যাচ্ছিলেন । তাঁদের সেই সময় দৈববাণী শুনতে পেলেন যে দেবকীর অষ্টম গর্ভের সন্তানের হাতেই তার মৃত্যু ঘটবে । এই শুনে কংস দেবকী এবং বসুদেবকে কারাগারে আবদ্ধ করলেন । কারাগারে দেবকীর সাতটি সন্তানকেই কংস জন্মমাত্র হত্যা করলেন । তারপর যখন ভগবান নারায়ণ স্বয়ং অষ্টম গর্ভে জন্মগ্রহণ করলেন , তখন তাঁর মায়ায় বিশ্বসংসার মুগ্ধ হয়ে রইল - কংস টেরও পেলেন না ।
ভাদ্রের কৃষ্ণাষ্টমীর বৃষ্টিমুখর গভীর নিশীতে বসুদেব সেই সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে গেলেন গােকূলে , তাঁর সখা নন্দরাজের গৃহে । সেই দিন স্বয়ং মহামায়াও নন্দপত্নী যশােদার গর্ভে জন্মগ্রহণ করেছিলেন । বসুদেব কৃষ্ণকে সেখানে রেখে মহামায়াকে সঙ্গে নিয়ে এলেন কারাগারে । সেই সংবাদ তখন আর কেউ জানতে পারল না । পরদিন কংস কারাগারে এসে দেখলেন , তার ভগিনী এক কন্যা প্রসব করেছেন । কংস তাকে হত্যা করতে উদ্যত হলে সেই কন্যা আকাশপথে অদৃশ্য হয়ে গেলেন । যাবার সময় বলে গেলেন যে , কংসকে বধ করবার জন্যে স্বয়ং নারায়ণ জন্মগ্রহণ করেছেন । সে কথা শুনে কংস স্তব্ধ হয়ে গেলেন ।
এদিকে যথাকালে রােহিণীর ঘরেও দেব সঙ্কর্ষণ বলদেব নামে জন্মগ্রহণ করলেন । কংসের প্রাণে ভীষণ ভয় - কোথায় সেই নারায়ণ শিশুরূপে জন্মগ্রহণ করেছেন ? তাই তিনি পূতনা নামে এক ভীষণা রাক্ষসীকে আদেশ দিলেন , যেখানে যত শিশু আছে , সবাইকে যেন সে হত্যা করে । পূতনা স্তনে বিষ মাখিয়ে ব্রজধামে শিশু কৃষ্ণকেও হত্যা করতে চেষ্টা করেছিল । কিন্তু শিশু কৃষ্ণ স্তনপানছলে তাকে হত্যা করলেন । বাল্যকালেই কৃষ্ণের জীবনে বহু অদ্ভুত ঘটনা ঘটেছিল । তিনি কংসের বহু চর - অনুচরদের হত্যা করে আত্মরক্ষা করেছেন । তৃণাবর্তাসুর তাঁর হাতে নিহত হল , তিনি শকট ভঞ্জন করলেন , যমলাৰ্জুন উদ্ধার করলেন । একদিন শিশু কৃষ্ণের মুখ থেকে মাটি বের করতে গিয়ে মাতা যশােদা দর্শন করলেন বিশ্বরূপ ।
তারপর যথাকালে কৃষ্ণ বলরামের নামকরণ হলাে । যশােদা ক্রমে । বুঝতে পারলেন যে স্বয়ং নারায়ণই তার গৃহে কৃষ্ণরূপে আবির্ভূত হয়েছেন । কিন্তু তবু কৃষ্ণ আর সব গােপ বালকদের মতই সাধারণভাবে লালিত - পালিত হতে লাগলেন । গােপ বালকদের সঙ্গে গােচারণে গিয়ে কৃষ্ণ কংস প্রেরিত বসাসুর , বকাসুর আর অঘাসুরকে হত্যা করলেন । বৃন্দাবনের কাছেই কালীদহে ছিল কালীয় নাগের ভয় । গােপ বালকগণ তার তীরে গাভী চরাতে পারত না - কৃষ্ণ তাই কালীয় দমন করলেন ।
এইভাবে বাল্যকালেই বহু দুষ্টের দমন করে ক্রমে কৃষ্ণ যৌবনে পা দিলেন । ব্রজগােপীগণ কৃষ্ণকেই জগৎপতিজ্ঞানে স্বামীরূপে ভজনা করতেন । তাঁরা কৃষগত প্রাণ , দেহে মনে কৃষ্ণঃময় । পরমপুরুষ পরমাত্মার সাথে মিলনের আকাক্সক্ষায় জীবাত্মার অপরূপ লীলায় জগতবাসী বিমােহিত হলাে ।
গােপগণ জলের জন্য ইন্দ্রপূজা করত । কৃষ্ণ তাদের বুঝালেন যে প্রাকৃতিক কারণেই বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে - অতএব , ইন্দ্রপূজা নিরর্থক । ইন্দ্র এতে কুপিত হয়ে এতাে বৃষ্টিপাত ঘটাতে লাগলেন যে , গােপগণ তাতে ব্যতব্যস্ত হয়ে উঠল । কৃষ্ণ তখন গিরি গােবর্ধন ধারণ করে ইন্দ্রের কোপ থেকে ব্রজভূমিকে রক্ষা । করলেন । দীর্ঘকাল শ্রীকৃষ্ণ গােপ - গােপীগণের আনন্দবর্ধন করে স্বকার্যসাধনে ব্রতী হলেন । এই সময় কংস ধনুর্যজ্ঞের আয়ােজন করেছিলেন । এই সুযােগে কৃষ্ণ - বলরামকে মথুরায় এনে হত্যা করবার গােপন ইচ্ছায় কংস তাদের আনবার জন্যে অকুরকে ব্রজধামে পাঠালেন । ব্রজগােপীগণকে কাঁদিয়ে কৃষঃ বলরামও অকুরের সঙ্গে মথুরায় যাত্রা করলেন । যজ্ঞস্থলে কৃষ্ণ - বলরামকে হত্যা করবার জন্য কংস যােদ্ধা নিযুক্ত করেছিলেন । কিন্তু কৃষ্ণ - বলরাম ভ্রাতৃ দ্বয় অনায়াসে কুবলয় হস্তী এবং চানুর মুষ্টিকাদি বীরদের হত্যা করে কংসকে বধ করলেন এবং বসুদেব ও দেবকীকে কারাগার থেকে উদ্ধার করে কংসপিতা । উগ্রসেনকে সিংহাসনে প্রতিষ্ঠিত করলেন ।
অতঃপর , কৃষ্ণ - বলরাম গুরুগৃহে বাস করে নানা শাস্ত্রবিদ্যা শিক্ষা করলেন । এদিকে উদ্ধবকে বৃন্দাবনে পাঠালেন সেখানকার খবর জেনে আসবার জন্য । অক্ররকে হস্তিনায় পাঠিয়ে পাণ্ডবদের সংবাদ নিলেন । কংস নিহত হওয়ার পর তার শ্বশুর মগধরাজ জরাসন্ধ বার বার মথুরাপুরী আক্রমণ করেছিলেন , কৃষ্ণ বলরাম প্রতিবার তাকে পরাজিত করলেন । দ্বারকায় প্রত্যাবর্তনের পর বলরাম আনৰ্তরাজ রৈবতের কন্যা রেবতীকে বিবাহ করলেন ।
বিদর্ভরাজ ভীষ্মকের কন্যা রুক্মিণী । কন্যার বিবাহের জন্য রাজা স্বয়ংবর সভা আহ্বান করলে কৃগতপ্রাণা রুক্মিণী গােপনে কৃষ্ণকে সংবাদ পাঠালেন । কারণ রাজার মনােগত বাসনা ছিল যে তিনি দমঘােষের পুত্র শিশুপালের হস্তেই কন্যাকে সমর্পণ করবেন । যাহােক , সংবাদ পেয়ে কৃষ্ণ যথাসময়ে স্বয়ংবর সভায় উপনীত হয়ে সমবেত নৃপতিগণকে পরাজিত করে রুক্মিণীকে হরণ করলেন এবং পরে বিবাহ করলেন । এই বিবাহের ফলে রতিপতি মদন প্রদ্যুম্নরূপে রুক্মিণীর গর্ভে জন্মগ্রহণ করলেন । প্রদ্যুমের হস্তে অতিকায় । সম্বরাসুর নিহত হয়েছিল ।
হস্তিনাপুরে পাণ্ডবগণ রাজসূয় যজ্ঞ আরম্ভ করলে নিমন্ত্রণ পেয়ে কৃষ্ণ তথায় উপনীত হলেন এবং যুধিষ্ঠিরের অনুরােধে যজ্ঞ সম্পাদনের ভার গ্রহণ করলেন । মগধরাজ জরাসন্ধ যুধিষ্ঠিরের আনুগত্য স্বীকার করেননি বলে ভীম ও অর্জুনকে সঙ্গে নিয়ে কৃষ্ণ মগধে গেলেন এবং তথায় ভীম জরাসন্ধকে বধ করে বন্দী বিশ হাজার আটশত নৃপতিকে উদ্ধার করলেন । রাজসূয় যজ্ঞে শিশুপাল কৃষ্ণের অপমান করায় কৃষ্ণ তাকে বধ করেন । কৃষ্ণের অনুপস্থিতির সুযােগে শান্ব নৃপতি দ্বারা আক্রমণ করে প্রদ্যুম্নকে পরাজিত করলেন । সংবাদ পেয়ে । কৃষ্ণ এসে তাকে বধ করলেন ।
কৃষ্ণপুত্র শাম্ব একদিন চঞ্চলমতি যাদব নন্দনদের সঙ্গে নারীরূপ ধারণ করে ত্রিকালজ্ঞ মুনিদের প্রতারণা করবার উদেশ্যে জিজ্ঞেস করল নারীবেশধারিণী শাম্বের কী সন্তান হবে ? মুনিগণ প্রকৃত ব্যাপার বুঝতে পেরে ক্রুদ্ধস্বরে বললেন - এ এক মুষল প্রসব করবে এবং সেই মুষল থেকে যুদবংশ বিধ্বস্ত হবে । সত্য সত্যই শাম্ব যখন এক মুষল প্রসব করল , তখন সকলে মিলে ঐ লৌহমুষলকে পাষাণে ঘষে ক্ষয় করে সমুদ্রে নিক্ষেপ করল । মুষলঘর্ষণে যে ফেনা বেরিয়েছিল তা সমুদ্রতীরে শররূপে জন্মগ্রহণ করল এবং লৌহের যে অংশ সমুদ্রে নিক্ষিপ্ত হয়েছিল , এক মাছ তা খেয়ে ফেলল । সেই মাছ ধরা পড়ল এক ধীবরের হাতে । মাছের পেটে ধীবর সেই লােহা পেয়ে এক কর্মকারের কাছে বেঁচে দিল । সেই লােহা দিয়ে কর্মকার দুটি শলাকা তৈরি করল ।
অতঃপর একদিন ব্রতপূজাদি উৎসব অনুষ্ঠানের আকাঙ্ক্ষায় যদুবংশীয়গণ প্রভাসতীর্থে উপনীত হলাে । সেখানে দুর্বুদ্ধিবশে তারা অতিরিক্ত সুরাপান করে জ্ঞানবুদ্ধি হারাল এবং সমুদ্রতীর থেকে মুষলজাত শর আহরণ করে পরস্পর পরস্পরকে হত্যা করতে লাগল । এইভাবে যদুবংশ বিধ্বস্ত হলাে , মুনিগণের অভিশাপ সার্থক হল । এরপর বলরাম একদিন স্বেচ্ছায় দেহত্যাগ করলেন ।
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ একদিন অশ্বথমূলে বসে আছেন , দূর থেকে এক ব্যাধ | তার চরণ কমল দেখতে পেয়ে মৃগজ্ঞানে তীরবিদ্ধ করল । লৌহমুষলের অবশিষ্ট অংশে নির্মিত শলাকা এই তীরে সংযুক্ত ছিল । তীরের আঘাতে কৃষ্ণ । পরমাগতি প্রাপ্ত হলেন - বৈকুণ্ঠ থেকে প্রেরিত স্বর্ণরথে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বৈকুণ্ঠে । চলে গেলেন । যদুবংশে পুরুষ আর কেউ রইল না ।
এইভাবে শ্রীকৃষ্ণলীলা কাহিনী বর্ণনা করবার পর পরীক্ষিতের অনুরােধে ভগবান শুক ভবিষ্যৎ রাজগণের কথা বর্ণনা করলেন । কীভাবে কলিকালে অধর্মের সঞ্চার ঘটবে , কলি , যুগধর্ম কেমন হবে , প্রলয় - সংযােগের কথা । ইত্যাদি ঘটনাও সেই প্রসঙ্গে বর্ণনা করলেন । তারপর সঙ্গিগণসহ শুকদেব অন্যত্র চলে গেলেন ।
অতঃপর , সূত শৌনকাদি ঋষিদের কাছে তক্ষক কর্তৃক পরীক্ষিতকে দংশন । এবং তাঁর মৃত্যু কাহিনী বর্ণনা করলেন । সর্পকুলের প্রতি প্রতিহিংসাবশতঃ পরীক্ষিতের পুত্র জন্মেজয় তখন সপর্যজ্ঞ আরম্ভ করে সর্পকুল নিধন করতে লাগলেন । তক্ষক ইন্দ্রের আশ্রয় ভিক্ষা নিলে মন্ত্রের বলে ইন্দ্র শুদ্ধ যজ্ঞের দিকে আসতে লাগলেন । অতঃপর , দেবগুরু বৃহস্পতির অনুরােধে জন্মেজয় সর্প যজ্ঞ হতে নিবৃত্ত হলেন ।
মহামুনি সূতও ব্যাসদেব কর্তৃক বেদবিভাগ , মার্কণ্ডেয় উপাখ্যান , ঈশ্বরের লীলা এবং কর্ম - আদি সবিস্তারের বর্ণনা করলেন । সর্বশেষ ভাগবত - মাহাত্ম বর্ণনা করে তার বক্তব্য শেষ করলেন ।
শ্রীমদ্ভাগবতের সারাংশ হচ্ছে সত্যকে প্রতিষ্ঠা করার শিক্ষা গ্রহণ । এ শিক্ষা মূল্যবােধ প্রতিষ্ঠার শিক্ষা , ধর্মকে জীবনের সাথে মিলনের শিক্ষা ।
“ সত্যরূপং পরং ব্রহ্ম সত্যং হি পরং তপঃ । | সত্যমূলাঃ ক্রিয়াঃ সৰ্বাঃ সত্যাং পয়তরাে নহি ॥ ” ।
- ব্যাসদেব |
[ সত্যই হলাে ভগবান , সত্য - সাধনাই হলাে তপস্যা । জগতের যা কিছু শ্রেষ্ঠ কাজ তার মূলে সত্য । সত্যের চেয়ে বড় . . . কিছু নেই । ]
মন্তব্যসমূহ