ভগবান শ্রীকৃষ্ণ : চরিতামৃত
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ : চরিতামৃত
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ :ঈশ্বরঃ পরমঃ কৃষ্ণঃ সচ্চিদানন্দ বিগ্রহঃ । । অনাদিরাদিগােবিন্দঃ সর্বকারণকারণম্ ॥
[ ব্ৰহ্ম সংহিতা ]
[ কৃষ্ণ হচ্ছেন পরম ঈশ্বর । তিনি সচ্চিদানন্দ বিগ্রহ । তিনি অনাদি ও আদি , সর্ব কারণের কারণ , তিনিই গােবিন্দ । অর্থাৎ বিশ্বের একমাত্র অধীশ্বর । যিনি , তিনিই হচ্ছেন শ্রীকৃষ্ণ । ]
ঈশ্বরকে ইচ্ছাময় বলা হয় । এই ঈশ্বরই শ্রীকৃষ্ণ । তিনি স্বয়ম্ভ , তাই অনাদি ; আবার সমস্ত সৃষ্টির মূল কারণ বলে তিনি আদি । তিনি সচ্চিদানন্দ অর্থাৎ নিত্যজ্ঞানময় , নিত্য আনন্দদায়ক ব্রহ্ম । ঈশ্বর সর্বশক্তিমান । তিনি অনন্ত অসীম , তার ভাবও অনন্ত । “ অনন্ত কৃষ্ণের নাম , অনন্ত মহিমা । ” তিনি সমস্ত জগতের সৃষ্টি স্থিতি সংহার কর্তা ; সবকিছু আকর্ষণ করেন বলে তিনি কৃষ্ণ । জ্ঞানীর নিকট তিনি নির্বিকার নির্বিশেষ পরমাত্মা , পরব্রহ্ম ; কাম্যকর্মের । সাধকের নিকট অভীষ্ট ফল প্রদানকারী পরমেশ্বর । ভক্তের কাছে তিনিই পরম করুণাময় , ক্ষমাসুন্দর রসঘন , অশেষ কল্যাণময়ী গুণময় , ভগবান । তিনি অসীম অনন্ত হয়েও ধারণ করতে পারেন শান্ত রূপ ; তিনি গােলকবিহারী হয়ে আসতে পারেন ধরাপৃষ্ঠে । বেদ , পুরাণ , মহাভারতে “ ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ” ক্ষমতা এবং ঐশ্বর্যের প্রতিভূ হিসেবে অবতীর্ণ হয়েছেন । কুরুক্ষেত্রে , মথুরায় । ও দ্বারকায় তাঁর ঐশ্বর্যলীলা প্রকাশ পেয়েছে । অনন্ত ঐশ্বর্যের অপূর্ব মহিমা । অপরূপভাবে বিধৃত হয়েছে অর্জুনের বিশ্বরূপ দর্শনে । আপন মায়া শক্তিকে আশ্রয় করে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অবতাররূপে জন্মগ্রহণ করেন । তিনি মানৰ ধারণ করায় সাধারণ মানুষ তাকে ভগবান বলে চিনতে পারে না । দিনটি প্রাপ্ত হয়েই অর্জুন বিশ্বরূপ দর্শনের মাধ্যমে বুঝতে পারলেন , শ্রীকৃষ্ণই সমগ্র বিশ্বের আশ্রয় , তিনিই পরমেশ্বর । দ্বাপর যুগের শেষভাগে ভারতভূমি পাপে পরিপূর্ণ হয়েছিল । মগধের রাজা জরাসন্ধ , তার জামাতা কংস , চেদিরাজ শিশুপাল প্রমুখ অত্যাচারী ও ধর্মদ্রোহী নৃপতিদের প্রভাবে ধর্মের বিলােপের ক্রান্তিকালে ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে কংসের কারাগারে জন নিলেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ । বিস্ময়কর ও রহস্যময় বাল্যলীলা , কংস বধ , জরাসন্ধ ও শিশুপাল বধ এবং সর্বশেষ মহান কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে শ্রীকৃষ্ণের লীলাকাণ্ড এবং ধর্ম প্রতিষ্ঠার পদক্ষেপ মাত্র । কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মুখ । নিঃসৃত বাণীসমূহই শ্রীমদ্ভগবদ্গীতায় স্থান পেয়েছে ।
ঈশ্বর আরাধনার বিভিন্ন পথ আছে ; জ্ঞান , কর্ম ও ভক্তি - যে কোন পথ | ধরে সাধনা করলেই ভগবানকে লাভ করা যায় । আবার কর্মের মাধ্যমে জ্ঞানের উদয় এবং সে জ্ঞান ভক্তির সংযােগ সাধককে ভগবানের চরণে প্রণিপাত করে - এটাই গীতার সমন্বয়ের বাণী ।
কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের পর শ্রীকৃষ্ণ মথুরায় ফিরে দীর্ঘদিন রাজত্ব করেন । তাঁর জীবদ্দশাতেই তাঁর পুত্র - পৌত্রাদি আত্মীয়গণ অন্যায় ও অধর্মে রত হয় । তা দেখে তাঁরই ইচ্ছায় প্রভাস ক্ষেত্রে তার আত্মীয়স্বজন পানােন্মুক্ত হয়ে একে অন্যকে হত্যা করে যদুবংশ ধ্বংস হলাে । এরপর বলরাম ধ্যানযােগে দেহত্যাগ করেন । এতে শ্রীকৃষ্ণও দেহত্যাগ করতে সংকল্পবদ্ধ হন । এ উদ্দেশ্যে তা বনে প্রবেশ করে একটি অশ্বথ বৃক্ষের তলে বসলেন , জরা নামক এক দূর হতে হরিণ ভেবে তার চরণে শরবিদ্ধ করল । এতে শ্রীকৃষ্ণের মহালীলার " অবসান হলাে ।
মন্তব্যসমূহ
সম্পুর্ন শাস্ত্রীয় প্রমাণ দেখুন
শ্রীকৃষ্ণ কি সত্যি ঈশ্বর নাকি সব ভণ্ডামী চলুন বিস্তারিত প্রমাণ সহ দেখে নেওয়া যাক।।