ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাস


ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাস 

“ ঈশ্বর সকলের প্রভু , সর্বজ্ঞ , নিয়ন্ত্রক , বিশ্বের কারণ , স্রষ্টা এবং ধ্বংসকারী 
-উপনিষদ 

ঈশ্বর এক এবং অদ্বিতীয় , তিনি সম্পূর্ণ , যা হতে সকল কিছুর সৃষ্টি এবং যাতে সকলের প্রত্যাবর্তন , তিনিই ঈশ্বর । এই সম্পূর্ণ একককে বহুনামে ভূষিত করা হয়েছে বিভিন্নভাবে । সনাতন ধর্মাবলম্বীগণ একে বলেন ব্রহ্ম । এই ব্রহ্মই হচ্ছে সকল কিছুর মূল এবং কারণ । তিনিই পুরুষােত্তম , অবিনশ্বর ও অনন্ত । সকল বস্তুতে তিনি বিরাজমান , সকল কিছুই তাকে ছাড়া অস্তিত্বহীন । তিনি বিশ্বনিয়ন্ত্র , সর্বব্যাপী , সর্বশক্তিমান ও মহিমাময় ।

 পরম কারণবাদের যৌক্তিকতা থেকে বিচার করলে দেখা যায় যে পরমেশ্বর এক মহাকৌশলী । তিনি যে এই বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডকে সৃষ্টি করেছেন তারও কারণ আছে । এই বিশ্ব ব্রহ্মাও এক শৃঙ্খলার মাধ্যমে পরিচালিত । লক্ষ কোটি গ্রহ উপগ্রহ মহাকাশে নির্দিষ্ট গতিপথে আবর্তিত হচ্ছে , জীবন্ত প্রাণীর বৈচিত্র্যের মাঝে শৃখলা আছে । এই কেন্দ্রিয় নিয়ন্ত্রক একজন অপরিসীম ক্ষমতাবান পরমপুরুষ , অসংখ্য মস্তক , অনন্ত চক্ষু , অগণিত চরণ , তিনি সমগ্র বিশ্বে - সর্ব জীবে পরিব্যাপ্ত । 

এ বিশ্বে যা কিছু ঘটে তার একটি কারণ আছে । এই কারণেরও কারণ আছে এবং এইভাবে অফুরন্ত কারণ লক্ষ্য করা যায় । সৃষ্টির প্রথম কারণকে যদি প্রধান সূচনাকারী হিসেবে আখ্যা দেয়া যায় তবে দেখা যাবে তিনিই ঈশ্বর , তিনিই সৃষ্টির প্রথম কারণ । 

ধ্যানসাধনা ও মানুষের অভিজ্ঞতা হতে ঈশ্বরের অস্তিত্বকে প্রমাণ করা যায় । পূর্ণতা লাভের অর্থই জ্ঞানার্জন , শক্তিসঞ্চয় । ধার্মিকতা ও সততা জন্মলাভ করে ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস হতে । ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাস হতে নৈতিক চিন্তাবােধ বিকশিত হয় । অলৌকিক ঘটনা প্রবাহের প্রতি বিশ্বাস প্রকারান্তরে ঈশ্বরের অস্তিত্বের প্রতি আস্থারই নামান্তর মাত্র । যজুর্বেদে উল্লেখ আছে যে , “ সুর্য তাকে প্রকাশ করতে পারে না , চন্দ্র তারকা এবং বিদ্যুও পারে না , অগ্নিতাে কোন ছার । সর্বত্র তিনিই প্রকাশিত আছেন এবং সকল কিছু তিনিই প্রকাশ করেন । প্রাচীনকালেও প্রশ্ন উঠেছিল যে ঈশ্বর কি ? বেদান্ত তার উত্তর দিয়েছে যে , প্রাণী বা অপ্রাণী যেকোন বিষয় বা পদার্থ যে স্থান হতে জন্মলাভ করে অবশেষে বিলুপ্তির সময়ে যেখানে ফিরে যায় , তাই ব্ৰহ্ম অথবা অক্ষয় শক্তি বা ঈশ্বর । উদ্ধয়নের মতে , বিশ্ব কোন কারণের ফলাফল । পৃথিবী , মাটি , জল , আলাে , বাতাস দ্বারা গঠিত । এসব উপাদান সৃষ্টিতে প্রয়ােজন কোন পরমশক্তিধর নিমিত্তের । ঈশ্বর ব্যতিত অনা কারাে পক্ষে তা অসম্ভব । তাই বিশ্বসৃষ্টি একমাত্র ঈশ্বরের পক্ষেই সম্ভব । 

ন্যায় শাস্ত্র অনুসারে ভাল কাজের ফলাফল শুভ এবং মন্দ কাজের ফল অভ । ভাল ও খারাপ হৃদয়ে বিরাজ করে অবচেতনভাবে । এই চেতনার পরিচালনার জনাে প্রয়োজন একজন শাসক । ঈশ্বর সর্বজ্ঞ , তিনিই পুণ্যবানকে সুখী করেন , অপরাধীকে শাস্তি দেন , অদৃষ্টকে নিয়ন্ত্রণ করেন । অন্তরকে পরিচালিত করা , ন্যায় ও অন্যায়কে নির্দিষ্ট করা ঈশ্বর ভিন্ন অন্য কোন শক্তির পক্ষে সম্ভব নয় । বেদ হতে আমরা অভিজ্ঞতা এবং অলৌকিক জ্ঞান দুই - ই পাই । অভিজ্ঞতালব্ধ বিষয় সমূহকে পরীক্ষা করা যায় এবং অতিপ্রাকৃত বিষয় সম্পর্কেও ধারণা করা যায় । শ্রুতিশাস্ত্র ঈশ্বরের অস্তিত্ব সম্পর্কে সাক্ষ্য দেয় এবং ঋষিদের অভিজ্ঞতা অতিপ্রাকৃতকেও বাস্তবতার নিরিখে প্রমাণ করে যাতে প্রতীয়মান হয় , “ ঈশ্বর সকলের হৃদয়ে অবস্থান করেন , সকলকে পরিচালনা করেন । 

তৃমাদিদেবঃ পুরুষঃ পুরাণ 
স্ত্বমস্য বিশ্বস্য পরং নিধানম্ । 
বেত্তাসি বেদ্যঞ্চ পরঞ্চ ধাম 
তুয়াততং বিশ্বমনন্তরূপ ।
  [শ্রীমদ্ভগদ্ গীতা-১১/৩৮] 

[তুমি অনাদিদেব , তুমি পুরাণ পুরুষ , তুমিই বিশ্বের পরম আশ্রয় স্বরূপ , একমাত্র প্রভু । তুমিই একমাত্র জ্ঞাতব্য এবং জ্ঞাতা । তুমিই একমাত্র পরমস্থান । হে অনন্তরূপ , তুমি বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে প্রসারিত । ]

মন্তব্যসমূহ

Unknown বলেছেন…
হরে কৃষ্ণ 🙏🙏🙏🙏🙏🙏💓💓💓💓💓💖💖💖💖💖💖

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

বিষ্ণু দশ অবতারের পরিচয়

বেদের চনৎকার কিছু শ্লোক।

হিন্দুদের দৈনিক প্রার্থনার মন্ত্র