তৃতীয় মণ্ডল: সুক্ত - ৩১

অনুবাদ
১। লোকে যেরূপ কূপকে (জলপূর্ণ করে), আমরা অন্নাকাঙ্ক্ষী হয়ে সেরূপ তোমাদের শতক্রুতু বিশিষ্ট ও অতি প্রবদ্ধ ইন্দ্রকে সোম রসের দ্বারা সেচন করি।

২। তিনি শতবিশুদ্ধ সোমরসের নিকট এবং আশীর নামক সহস্র শ্রপণ দ্রব্য মিশ্রিত সোমরসের নিকট আসেন, যেরূপ (জল) নিম্নভূমিতে যায়।

৩। এ (শত বা সহস্র সোম) বলবান ইন্দ্রের হর্ষের জন্য একত্রিত হয়, এর দ্বারা ইন্দ্রের উদর সমুদ্রের ন্যায় ব্যাপ্ত হয়।

৪। যেরূপ কপোত গর্ভধারিণী কপোতীকে গ্রহণ করে, হে ইন্দ্র! এ (সোম) তোমার, তুমিও সেরূপ একে গ্রহণ কর ও সে কারণে আমাদের বচন গ্রহণ কর।

৫। হে ধনপালক স্তুতিভাজন বীর! তোমার এরূপ স্ত্রোত্র; তোমার বিভূতি প্রিয় ও সত্য হোক।

৬। হে শতক্রতু! এ সংগ্রামে আমাদের রক্ষার্থে উৎসুক হও; অন্য কার্যের বিষয় (তুমি ও আমি) মিলিত হয়ে বিচার করব।

৭। ভিন্ন ভিন্ন কর্মের উপক্রমে, ভিন্ন ভিন্ন যুদ্ধে আমরা অতিশয় বলবান ইন্দ্রকে রক্ষার জন্য সখার ন্যায় আহ্বান করি।

৮। যদি ইন্দ্র আমাদের আহ্বান শ্রবণ করেন তবে নিশ্চয়ই সহস্য রক্ষণ কার্যের সাথে ও অন্নের সাথে নিকটে আসুন।

৯। ইন্দ্র বহুলোকের নিকট গমন করেন, পুরাতন আবাস হতে (১) আমি সে পুরুষকে আহ্বান করি, যাকে পিতা পূর্বে আহ্বান করেছিলেন।

১০। হে ইন্দ্র! তুমি সকলের বরণীয় ও বহুলোকদ্বারা আহুত, তুমি সখা ও নিবাসহেতু তোমার স্তোতদের প্রতি অনুগ্রহার্থে তোমার নিকট প্রার্থনা করি।

১১। হে সোমপায়ী, সখা, বজ্রধারী ইন্দ্র ! আমরাও তোমার সখা ও সোমপায়ী; আমাদের দীর্ঘ নাসিক (গাভীদল বৃদ্ধি হোক)

১২। হেসোমপায়ী, সখা, বজ্রধারী! এরূপই হোক, তুমি এরূপ আচরণ কর, যেন আমরা মঙ্গলার্থে তোমার (অনুগ্রহ) কামনা করি।

১৩। ইন্দ্র আমাদের প্রতি হৃন্ট হলে আমাদের (গাভীগণ) দুগ্ধবতী ও প্রভূত বলশালিনী হবে, (সে গাভী) হতে খাদ্য পেয়ে আমরা হৃষ্ট হব।

১৪। হে সাহসী ইন্দ্র! তোমার ন্যায় দেব স্বয়ং হৃষ্ট হয়ে, আমাদরে দ্বারা যাচিত হয়ে স্ত্রোতুদের প্রার্থিত ধন তাদরে কামনা অনুসারে অর্পণ কর।

১৫। বীর! তোমার এরূপ স্ত্রোত্র; তোমার বিভূতি প্রিয় ও সত্য হোক

১৬। ইন্দ্রের যে অশ্বগণ আহারের পর পর্যাপ্তিসূচক শব্দ করে, হ্রেষাবর করে ও ঘন ঘন শ্বাস নিক্ষেপ করে সে অশ্বগণ দ্বারা ইন্দ্র সর্বদাই ধন জয় করেছেন; কর্মবান ও দানশীল ইন্দ্র আমাদের গ্রহণার্থে হিরণায় রথ দিয়েছেন।

১৭। হে অশ্বিদ্বয়! বহু অশ্বের দ্বারা প্রেরিত অন্নের সাথে এস; হে শত্রুবিনাশক! (আমাদের গৃহ) গাভীযুক্ত ও হিরণ্যযুক্ত (হোক!)

১৮। হে শত্রুবিনাশক! তোমাদের উভয়ের জন্য সংযোজিত রথ বিনাশরহিত; এ রথ অন্তরীক্ষে গমন করে।

১৯। তোমরা রথের এক চক্র বিনাশরহিত পর্বতের উপর স্থির করেছ, অন্য চক্র্আকাশের চারদিকে ভ্রমণ করছে।

২০। হে স্তুতিপ্রিয়া অমর ঊষা! কোন মানুষ তোমার সম্ভোগের জন্য! হে প্রভাবযুক্ত! তুমি কাকে প্রাপ্ত হও?

২১। হে ব্যাপনশীল বিচিত্র দীপ্যমান ঊষা! আমরা নিকট হতে অথবা দূর হতে তোমাকে বুঝতে পারি না।

২২। হে স্বর্গ দুহিতে! সে অন্নের সাথে তুমি আগমন কর, আমাদের ধন প্রদান কর (২)।

টীকা
১। কার পুরাতন আবাস হতে? পুরাতনস্য োকস: স্থানস্য স্বর্গরূপস্য সকাশাৎ সায়ণ।

২। ঊষা আর্যদের এক অতি প্রাচীন উপাস্য দেব ছিলেন, সুতরাং আর্য জাতির ভিন্ন ভিন্ন শাখার মধ্যে তাঁর নাম ও উপাসনা দেখা যায়। কিন্তু কেবল যে নামে সাদৃশ্য আছে তা নয়, ঊষা সম্বন্ধ এক প্রকারই কয়েকটি গল্প হিন্দু ও গ্রীকদের মধ্যে পাওয়া যায়। ২০ সুক্তের ৬ ঋকের টীকায় সরণ্যুর কথা দেখুন। ১১৫ সুক্তের ২ ঋকে সূর্য ঊষার পশ্চাৎ ধাবমান হচ্ছেন এরূপ কথা আছে; গ্রীকদের মধ্যেওপ্রসিদ্ধ গল্প আছে যে (সূর্য) (অর্থাৎ দহন্া) দেবীর পশ্চাৎধাবন করেছিলেন এবং তাকে ধরা মাত্র বিনাশ প্রাপ্ত হলেন। এ গল্পের অর্থও সরল, সূর্য উদয় হলেই ঊষা শেষ হয়। আবার ঋগ্বেদে ঊষাকে এক স্থানে অহনা নাম দেওয়া হয়েছে; গ্রীকদের সুবুদ্ধির দেবী এইঅহনায় রূপান্তর মাত্র। অতএব অর্থ ঊষার সন্তানগণ। বেদে হ্রস্ব উ দিয়ে উষা লেখা আছে, কিন্তু বাঙলা ভাষার রীতি অনুসারে আমরা দীর্ঘ উ ব্যবহার করলাম।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

বেদের চনৎকার কিছু শ্লোক।

বিষ্ণু দশ অবতারের পরিচয়

হিন্দুদের দৈনিক প্রার্থনার মন্ত্র