পঞ্চম মণ্ডল: সুক্ত - ৫৪

অনুবাদ

১। হে মঘবন! এ পাপে এ যুদ্ধ সমূহে আমাদের প্রক্ষেপ করো না, কেন না তোমার বলের অন্ত পরিমাণ করা যায় না। তুমি অন্তরীক্ষে থেকে অতিশয় শব্দ করে নদীর জলকে শব্দিত করছ। পৃথিবী ভয় প্রাপ্ত হবে না কেন?

২। শক্তিসম্পন্ন ও প্রজ্ঞাবান ইন্দ্রকে অর্চনা কর; তিনি স্তুতি শ্রবণ করেন, তাকে পূজা করে স্তুতি কর। যিনি শত্রুবিজয়ী বল দ্বারা দ্যু ও পৃথিবী উভয়কে অলঙ্কৃত করেন, যিনি বর্ষণকারী, সে বর্ষণসামর্থ্য দ্বারা বৃষ্টি দান করেন।

৩। যিনি শত্রু বিঝয়ী ও নিজ বলে দৃঢ়মনা, সে দীপ্তিমান ও মহৎ ইন্দ্রের উদ্দেশে সুখকর স্তুতি বাক্য উচ্চারণ কর। কেননা তিনি প্রভূতষশশালী ও অসুর (১) এবং শত্রুদের দুর করেন; তিনি অশ্বদ্বয় দ্বারা সেবিত, অভীষ্টবর্ষী বেগবান।

৪। হে ইন্দ্র! তুমি মহৎ আকাশের উপরি প্রদেশ কম্পিত করেছ। তুমি নিজের শত্রুবিনাশী ক্ষমতা দ্বারা শম্বরকে স্বয়ং বধ করেছ; তুমি হৃষ্ট উল্লাসিত মনে তীক্ষ্ম ও রশ্মিযুক্ত বজ্র দলবদ্ধ মায়াবীদের বিরুদ্ধে প্রেরণ করেছ।

৫। হে ইন্দ্র! তুমি শব্দ করে বায়ুর উপর এবং শোষক ও পরিপাককারী সূর্যের মস্তকে জল বর্ষণ করেছ। তোমার মন পরিবর্তন রহিত এবং শত্রু বিনাশে রত, তুমি অদ্য যে কার্য সম্পাদন করলে তাতে কে তামার উপরে আছে?

৬। তুমি নর্য, তুর্বশ, যদু নামক রজাদের রক্ষা করেছ; হে শতক্রতু! তুমি বর্ষ কুলের তুবীতি নামক রাজাকে রক্ষা করেছ; তুমি আবশ্যকীয় ধন নিমিত্ত যুদ্ধে তাদের রথ ও অশ্ব (২) রক্ষা করেছ; তুমি শম্বরের নবনবতি নগ ধ্বংস করেছ।

৭। যিনি ইন্দ্রকে হব্য দান করে ইন্দ্রের স্তুতি প্রচার করেন, অথবা হব্যের সাথে উকথ পাঠ করেন, তিনিই বিরাজ, করেন, তিনি সাধুগণকে পালন করেন এবং আপনাকে বর্ধন করেন; ফলদাতা ইন্দ্র তার জন্য আকাশ হতে মেঘের জল বর্ষণ করেন।

৮। ইন্দ্রের বল অতুল, তার বুদ্ধিও অতুল। হে ইন্দ্র। যারা তোমাকে হব্যদান করে তোমার মহৎ বল অতুল, তার বুদ্ধিও অতুল। হে ইন্দ্র! যারা তোমাকে হব্যদান করে তোমার মহৎ বল এবং স্থুল পৌরুষ বৃদ্ধি করে, সে সোমপায়ী গণ যজ্ঞকর্মদ্বারা প্রবৃদ্ধ হোক।

৯। এ সোমরসমূহ প্রস্তর দ্বারা অভিষুত ও পরে স্থাপিত এবং ইন্দ্রের পানের যোগ্য; হে ইন্দ্র! এ সকল তোমারই জন্য হয়েছে, তুমি এ গ্রহণ কর, অভিলাষ তৃপ্তি কর এবং তৎপরে আমাদের ধন প্রদান করতে মনোনিবেশ কর।

১০। অন্ধকার বৃষ্টির ধারা রোধ করেছিল, বৃত্রের জঠরের ভিতর মেঘ ছিল; বৃত্রের দ্বারা নিহিত হয়ে যে জলসমুদয় ক্রমান্বয়ে অবস্থিত ছিল ইন্দ্র তা নিন্ম ভূপ্রদেশে প্রেরণ করলেন।


১১। হে ইন্দ্র! আমাদরে বর্ধনশীল যশ দান কর, মহৎ শত্রুপরাজয়ী প্রভূত বল দান কর, আমাদের ধনবান করে রক্ষা কর, বিদ্বানদের পালন কর এবং আমাদের ধন ও শোভনীয় অপত্য ও অন্ন দান কর।

টীকা

১। মুলে অসুয় শব্দ আছে। সায়ণ তার তিন প্রকার অর্থ করেছেন অসুরঃ শতনাং নিরসিতা। যদ্বা অসুৎ প্রাণো বলং বা তদ্বান। অথবা অসবঃ প্রাণ্াঃ তেন চাপঃ লক্ষ্যন্তে** তান রাতি দদাতি ইতি অসুরঃ। অর্থাঃ অসুর অর্থ শত্রু বিনাশক অথবা বলবান অথবা বৃষ্টিদাতা। অসুর সম্বন্ধে ২৪ সুক্তের ১৪ ঋকের টীকা দেখুন। আমরা সে টীকায় বলেছি যে প্রথমে আর্যগণ উপাস্যদের দেব ও অসুর উভয় নামেই সম্বোধন করতেন, পরে আর্যগণ দুভাগে বিভক্ত হলে, ইরাণীয় আর্যগণ উপাস্যগণকে অহুর বলে পূজা করতেন ও পাপমতি জীবদের দেব বলে ঘৃণা করতেন এবং হিন্দু আর্যগণ উপাস্যদের দেব বলে পূজা করতেন, এবং পাপমতি দানব প্রভৃতিকে অসুর বলে ঘৃণা করতেন। ঋগ্বেদে অনেক স্থলে দেখতে পাই দেবগণকে অসুর বলে সম্বোধন করা হয়েছে কেন না তখনও দেব ও অসুর এ দুই শব্দের সম্পূর্ণরপ ভিন্ন অর্থ হয়নি হিন্দুগণ অসুর অর্থে দেবশত্রু করেন নি। এমন কি ঋগ্বেদের প্রারম্ভে অসুর শব্দ কেবল দেবগণের সম্বন্ধেই প্রয়োগ হয়েছে, দানবদের সম্বন্ধে প্রয়োগ হয়নি; ঋগ্বেদের মধ্যে ও শেষভাগে অসুর শব্দ কখন দানবদের সম্বন্ধে প্রয়োগ হয়েছে। প্রথম মন্ডলে অসুর শব্দ কেবল দ্বাদশ বার প্রয়োগ হয়েছে এবং সে সকল স্থলেই দেব বা পুরোহিতদের সম্বন্ধে কোনও এক স্থলেও দানবদের সম্বন্ধে এ শব্দের প্রয়োগ নেই।

পঞ্চম মণ্ডল- ঋগ্বেদ সংহিতা

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

বেদের চনৎকার কিছু শ্লোক।

বিষ্ণু দশ অবতারের পরিচয়

হিন্দুদের দৈনিক প্রার্থনার মন্ত্র