দ্বিতীয় মণ্ডল: সুক্ত - ২২
অনুবাদ
১। প্রাত:কালে সংযুক্ত অশ্বিদ্বয়কে জাগরিত কর, তারা সোমপানার্থে এ যজ্ঞে আসুন।
২। যে দেব অশ্বিদ্বয় শোভনীয় রথযুক্ত, রথিশ্রেষ্ঠ ও স্বর্গবাসী, তাঁদের আহ্বান করি।
৩। হে অশ্বিদ্বয়! তোমাদের যে অশ্বস্বেদযুক্ত ও সুধনিযুক্ত চাবুক আছে তার সাথে এসে এ যজ্ঞ সোমরসে সিক্ত কর।
৪। হে অশ্বিদ্বয়! সোমদাতা যজমানের যে গৃহের দিকে রথে গমন করছ, সে গৃহ দূরে নহে।
৫। হিরণ্যপাণি সবিতাকে (১) আমি রক্ষণার্থে আহ্বান করি, সে দেব যজম দেব প্রাপ্য পদ জানিয়ে দেবেন।
৬। জলশোষক সবিতাকে রক্ষণার্থে স্তুতি কর; আমরা তাঁর যজ্ঞ কামনা করি।
৭। নিবাসহেতুভূত, বহুবিধ ধনের বিভক্তা ও মনুষদের প্রকাশকারী সবিতাকে আমরা আহ্বান করি।
৮। হে সখাগণ! চারদিকে উপবেশন কর, সবিতাকে আমাদরে শীঘ্র স্তুতি করতে হবে, ধনদাতা সবিতা শোভা পাচ্ছেন।
৯। হে অপিন! দেবগণের আকাঙ্ক্ষিণী পত্নীদের এ যজ্ঞে আন। ত্বষ্টাকে সোমপানার্থে সমীপে আন।
১০। হে অপ্নি! আমাদরে রক্ষার্থে দেবপত্নীদের এ যজ্ঞে আন। হে যবিষ্ঠ! হোত্রা, ভারতী ও বরণীয়া ধিষণাকে (২) আন।
১১। অচ্ছিন্নপক্ষা (৩) মনুষ্যপালয়িত্রী দেবীগণ রক্ষণ ও মহৎ সুখদান দ্বারা আমাদরে প্রতি প্রসন্না হোন।
১২। আমাদরে মঙ্গলের নিমিত্ত সোমপানার্থে ইন্দ্রাণী, বরণানী ও অপ্নায়ীকে আহ্বান করি।
১৩। মহৎ দৌ ও পৃথিবী (৪) আমাদরে এ যজ্ঞ রসে সিক্ত করুন এবং পুষ্টি দ্বারা আমাদের পুর্ণ করুন।
১৪। মেধাবীরা নিজ কর্মগুণে সে দৌ ও পৃথিবীর মধ্যে গন্ধর্বের নিবাস স্থানে অর্থাৎ অন্তরীক্ষে ঘৃতবৎ জল লেহনকরেন।
১৫। হে পৃথিবী! বিস্তীর্ণ, কন্টকরহিতা ও নিবাসভূতা হও; আমাদরে প্রচুর সুখ দাও।
১৬। বিষ্ণু (৫) সপ্তকিরণের সাথে যে ভুপ্রদেশ হতে পরিক্রমা করেছিলেন, সে প্রদেশ হতে দেবগণ আমাদরে রক্ষা করুন।
১৭। বিষ্ণু এ জগৎ পরিক্রমা করেছিলেন, তিন প্রকার পদবিক্ষেপ করেছিলেন, তাঁর ধুলিযুক্ত পদে জগৎ আবৃত হয়েছিল।
১৮। বিষ্ণু রক্ষত, তাকে কেহ আঘাত করতে পারে না, তিনি ধর্ম সমুদয় ধারণ করে তিন পদ পরিক্রমা করেছিলেন।
১৯। বিস্ণুর যে কর্মবলে যজমান ব্রত সমুদয় অনুষ্ঠান করেন, সে কর্ম সকল অবলোকন কর। বিষ্ণু ইন্দ্রের উপযুক্ত সখ্যা।
২০। আকাশে সর্বতো বিচারী যে চক্ষু যেরূপ দৃষ্টি করে, বিদ্বানেরা বিষ্ণুর পরমপদ সেরুপ দৃষ্টি করেন।
২১। স্তুতিবাদক ও সদাজাগরুক মেধাবী লোকেরা যে বিষ্ণুয় পরমপদ প্রদীপ্ত করেন।
টীকা
১। সূর্য আদিম আর্যদের উপাস্য দেব ছিলেন, সুতরাং সেই আর্য জাতির ভিন্ন ভিন্ন শাখায় তার উপাসনা দেখতে পাওয়া যায়। গ্রীকদের Helios শব্দ সূর্য শব্দের রূপান্তর মাত্র, এবং গ্রীকদের যে Helenes বলত তার আদি অর্থ সূর্য বংশীয়। লাটিনদের Sol ও টিউটনদের Tyr ও সূর্য শব্দের রূপান্তর মাত্র। প্রাচীন ইরাণীয়দের খোর সেদ ও সূর্যের রূপান্তর মাত্র। উপরি উক্ত ঋকে সবিতা বা সূর্যকে হিরণ্যপাণি বলে বর্ণনা করেছে। সায়ণ তার এরূপ অর্থ করেছেনঃ যজমানায় দাতুং হস্তে সুবর্ণধারিণং। আবার সূর্যের বাহুই সুবর্ণগঠিত এরূপ আখ্যান আছে। এ আখ্যানের প্রকৃত কারণ অনুভব করা সহজ। স্বর্ণের ন্যায় কিরণসম্পন্ন সূর্যকে প্রথম কবিগণ উপমাচ্ছলে সুবর্ণপাণি বলত, ক্রমে লোকে এ উপমাটি ভুলে গেল, এবং সুন্দর কল্পনাগঠিত বিশেষণ হতে একটি আখ্যান সৃষ্ট হল! কেবল আমরাই যে মুল উপমা ভুলে একটি আখ্যান সৃষ্টি করেছি তা নয়, জার্মান জাতিদের মধ্যেও সেরূপ ঘটেছিল। তবে আমাদের পুরোহিতরা যজ্ঞে সূর্যের হস্ত বিনাশের গল্পসৃষ্টি করলেন, মৃগয়াপ্রিয় জার্মানগণ কল্পনা করলেন যে তাদের Tyr দেব ব্যাঘ্রের মুখে হস্ত স্থাপন করায় ব্যাস সে হস্ত দংশন করে ফেলে। See Max Muller’s Science of Language. সূর্য ও সবিতা সম্বন্ধে আমাদরে আর একটি কথা বলবার আছে। যাস্ক বলেন আকাশ হতে যখন অন্ধকার যায়, কিরণ বিস্তুত হয়, সেই সবিতার কাল। সায়ণ বলেন সূর্যের উদয়ের পূর্বে যে মুর্তি তাই সবিতা, উদয় হতে অস্ত পর্যন্ত যে মুর্তি সেই সূর্য।
২। হোত্রাং হোমনিষ্পাদকাগ্নিপত্নীং। সায়ণ। ভারতীং ভরতনামকস্য আদিত্যস্য পত্নীং। সায়ণ। বরুত্রীং বরণীয়াং ধিষণং বাপ্দেবীং। সায়ণ।
৩। নহি পক্ষিরপাণাং দেবপত্নীনাং পক্ষাঃ কেনচিং ছিন্দ্যন্তে। সায়ণ।
৪। মুলে দ্যৌঃ পৃথিবী চ আছে। দ্যৌঃ আর্যদের প্রাচীন আকাশ দেব। গ্রীকদের , লাটিনদের কার পদবিক্ষেপ কি? যাস্ক বলেন, যদিদং কিঞ্চ তদ্বিক্রমতে কবষ্ণুঃ। ত্রিধা নিধত্তে পদং। ত্রেধাভাবায় পৃথিব্যাং অন্তরীক্ষে দিবি ইতি শাকপুণিঃ। সমারোহণে বিষ্ণুপদে গয়শিরসি ইতি ঔর্ণবাভঃ। নিরুক্ত ১২।১৯টীকাকার দূর্গাচার্য বলেন, বিষ্ণুরাদিত্যঃ। কথামিতি যত আহত্রেধা নিদধে পদং নিধত্তে পদং নিধানং পদৈঃ। তৎ তাবৎ। পৃথিব্যাং অন্তরীক্ষে দিবি ইতি শাকপুণিঃ। পার্থিবোহগ্নির্ভূত্বা পৃথিব্যাং যৎকিঞ্চিদস্তি তদ্বিক্রমতে তদধিতিষ্ঠিতি। অন্তরীক্ষে বৈদ্যুতাত্মনা। দিবি সূর্যাত্মনা। যদুক্তং তমুঅক্সিম্বন ত্রেধা ভুবে কমিতি। সমারোহণে উদয়গরৌ ইতি ঔর্ণবাভ আচার্য্যো মন্যতে। অতএব স্পষ্টই প্রতীয়মান হয় যে, সূর্যের উদয়গিরিতে আরোহণ, মধ্য আকাশে স্থিতি এবং অস্তাচলে অন্তগমন, এ তিনটি বিষ্ণুর পদ বিক্ষেপ বলে বণিত হয়েছে। এ উপমা হতে পরে পরে কত পৌরাণিক গল্পের সৃষ্টি হয়েছে।
১। প্রাত:কালে সংযুক্ত অশ্বিদ্বয়কে জাগরিত কর, তারা সোমপানার্থে এ যজ্ঞে আসুন।
২। যে দেব অশ্বিদ্বয় শোভনীয় রথযুক্ত, রথিশ্রেষ্ঠ ও স্বর্গবাসী, তাঁদের আহ্বান করি।
৩। হে অশ্বিদ্বয়! তোমাদের যে অশ্বস্বেদযুক্ত ও সুধনিযুক্ত চাবুক আছে তার সাথে এসে এ যজ্ঞ সোমরসে সিক্ত কর।
৪। হে অশ্বিদ্বয়! সোমদাতা যজমানের যে গৃহের দিকে রথে গমন করছ, সে গৃহ দূরে নহে।
৫। হিরণ্যপাণি সবিতাকে (১) আমি রক্ষণার্থে আহ্বান করি, সে দেব যজম দেব প্রাপ্য পদ জানিয়ে দেবেন।
৬। জলশোষক সবিতাকে রক্ষণার্থে স্তুতি কর; আমরা তাঁর যজ্ঞ কামনা করি।
৭। নিবাসহেতুভূত, বহুবিধ ধনের বিভক্তা ও মনুষদের প্রকাশকারী সবিতাকে আমরা আহ্বান করি।
৮। হে সখাগণ! চারদিকে উপবেশন কর, সবিতাকে আমাদরে শীঘ্র স্তুতি করতে হবে, ধনদাতা সবিতা শোভা পাচ্ছেন।
৯। হে অপিন! দেবগণের আকাঙ্ক্ষিণী পত্নীদের এ যজ্ঞে আন। ত্বষ্টাকে সোমপানার্থে সমীপে আন।
১০। হে অপ্নি! আমাদরে রক্ষার্থে দেবপত্নীদের এ যজ্ঞে আন। হে যবিষ্ঠ! হোত্রা, ভারতী ও বরণীয়া ধিষণাকে (২) আন।
১১। অচ্ছিন্নপক্ষা (৩) মনুষ্যপালয়িত্রী দেবীগণ রক্ষণ ও মহৎ সুখদান দ্বারা আমাদরে প্রতি প্রসন্না হোন।
১২। আমাদরে মঙ্গলের নিমিত্ত সোমপানার্থে ইন্দ্রাণী, বরণানী ও অপ্নায়ীকে আহ্বান করি।
১৩। মহৎ দৌ ও পৃথিবী (৪) আমাদরে এ যজ্ঞ রসে সিক্ত করুন এবং পুষ্টি দ্বারা আমাদের পুর্ণ করুন।
১৪। মেধাবীরা নিজ কর্মগুণে সে দৌ ও পৃথিবীর মধ্যে গন্ধর্বের নিবাস স্থানে অর্থাৎ অন্তরীক্ষে ঘৃতবৎ জল লেহনকরেন।
১৫। হে পৃথিবী! বিস্তীর্ণ, কন্টকরহিতা ও নিবাসভূতা হও; আমাদরে প্রচুর সুখ দাও।
১৬। বিষ্ণু (৫) সপ্তকিরণের সাথে যে ভুপ্রদেশ হতে পরিক্রমা করেছিলেন, সে প্রদেশ হতে দেবগণ আমাদরে রক্ষা করুন।
১৭। বিষ্ণু এ জগৎ পরিক্রমা করেছিলেন, তিন প্রকার পদবিক্ষেপ করেছিলেন, তাঁর ধুলিযুক্ত পদে জগৎ আবৃত হয়েছিল।
১৮। বিষ্ণু রক্ষত, তাকে কেহ আঘাত করতে পারে না, তিনি ধর্ম সমুদয় ধারণ করে তিন পদ পরিক্রমা করেছিলেন।
১৯। বিস্ণুর যে কর্মবলে যজমান ব্রত সমুদয় অনুষ্ঠান করেন, সে কর্ম সকল অবলোকন কর। বিষ্ণু ইন্দ্রের উপযুক্ত সখ্যা।
২০। আকাশে সর্বতো বিচারী যে চক্ষু যেরূপ দৃষ্টি করে, বিদ্বানেরা বিষ্ণুর পরমপদ সেরুপ দৃষ্টি করেন।
২১। স্তুতিবাদক ও সদাজাগরুক মেধাবী লোকেরা যে বিষ্ণুয় পরমপদ প্রদীপ্ত করেন।
টীকা
১। সূর্য আদিম আর্যদের উপাস্য দেব ছিলেন, সুতরাং সেই আর্য জাতির ভিন্ন ভিন্ন শাখায় তার উপাসনা দেখতে পাওয়া যায়। গ্রীকদের Helios শব্দ সূর্য শব্দের রূপান্তর মাত্র, এবং গ্রীকদের যে Helenes বলত তার আদি অর্থ সূর্য বংশীয়। লাটিনদের Sol ও টিউটনদের Tyr ও সূর্য শব্দের রূপান্তর মাত্র। প্রাচীন ইরাণীয়দের খোর সেদ ও সূর্যের রূপান্তর মাত্র। উপরি উক্ত ঋকে সবিতা বা সূর্যকে হিরণ্যপাণি বলে বর্ণনা করেছে। সায়ণ তার এরূপ অর্থ করেছেনঃ যজমানায় দাতুং হস্তে সুবর্ণধারিণং। আবার সূর্যের বাহুই সুবর্ণগঠিত এরূপ আখ্যান আছে। এ আখ্যানের প্রকৃত কারণ অনুভব করা সহজ। স্বর্ণের ন্যায় কিরণসম্পন্ন সূর্যকে প্রথম কবিগণ উপমাচ্ছলে সুবর্ণপাণি বলত, ক্রমে লোকে এ উপমাটি ভুলে গেল, এবং সুন্দর কল্পনাগঠিত বিশেষণ হতে একটি আখ্যান সৃষ্ট হল! কেবল আমরাই যে মুল উপমা ভুলে একটি আখ্যান সৃষ্টি করেছি তা নয়, জার্মান জাতিদের মধ্যেও সেরূপ ঘটেছিল। তবে আমাদের পুরোহিতরা যজ্ঞে সূর্যের হস্ত বিনাশের গল্পসৃষ্টি করলেন, মৃগয়াপ্রিয় জার্মানগণ কল্পনা করলেন যে তাদের Tyr দেব ব্যাঘ্রের মুখে হস্ত স্থাপন করায় ব্যাস সে হস্ত দংশন করে ফেলে। See Max Muller’s Science of Language. সূর্য ও সবিতা সম্বন্ধে আমাদরে আর একটি কথা বলবার আছে। যাস্ক বলেন আকাশ হতে যখন অন্ধকার যায়, কিরণ বিস্তুত হয়, সেই সবিতার কাল। সায়ণ বলেন সূর্যের উদয়ের পূর্বে যে মুর্তি তাই সবিতা, উদয় হতে অস্ত পর্যন্ত যে মুর্তি সেই সূর্য।
২। হোত্রাং হোমনিষ্পাদকাগ্নিপত্নীং। সায়ণ। ভারতীং ভরতনামকস্য আদিত্যস্য পত্নীং। সায়ণ। বরুত্রীং বরণীয়াং ধিষণং বাপ্দেবীং। সায়ণ।
৩। নহি পক্ষিরপাণাং দেবপত্নীনাং পক্ষাঃ কেনচিং ছিন্দ্যন্তে। সায়ণ।
৪। মুলে দ্যৌঃ পৃথিবী চ আছে। দ্যৌঃ আর্যদের প্রাচীন আকাশ দেব। গ্রীকদের , লাটিনদের কার পদবিক্ষেপ কি? যাস্ক বলেন, যদিদং কিঞ্চ তদ্বিক্রমতে কবষ্ণুঃ। ত্রিধা নিধত্তে পদং। ত্রেধাভাবায় পৃথিব্যাং অন্তরীক্ষে দিবি ইতি শাকপুণিঃ। সমারোহণে বিষ্ণুপদে গয়শিরসি ইতি ঔর্ণবাভঃ। নিরুক্ত ১২।১৯টীকাকার দূর্গাচার্য বলেন, বিষ্ণুরাদিত্যঃ। কথামিতি যত আহত্রেধা নিদধে পদং নিধত্তে পদং নিধানং পদৈঃ। তৎ তাবৎ। পৃথিব্যাং অন্তরীক্ষে দিবি ইতি শাকপুণিঃ। পার্থিবোহগ্নির্ভূত্বা পৃথিব্যাং যৎকিঞ্চিদস্তি তদ্বিক্রমতে তদধিতিষ্ঠিতি। অন্তরীক্ষে বৈদ্যুতাত্মনা। দিবি সূর্যাত্মনা। যদুক্তং তমুঅক্সিম্বন ত্রেধা ভুবে কমিতি। সমারোহণে উদয়গরৌ ইতি ঔর্ণবাভ আচার্য্যো মন্যতে। অতএব স্পষ্টই প্রতীয়মান হয় যে, সূর্যের উদয়গিরিতে আরোহণ, মধ্য আকাশে স্থিতি এবং অস্তাচলে অন্তগমন, এ তিনটি বিষ্ণুর পদ বিক্ষেপ বলে বণিত হয়েছে। এ উপমা হতে পরে পরে কত পৌরাণিক গল্পের সৃষ্টি হয়েছে।
মন্তব্যসমূহ