জগদ্গুরু শঙ্করাচার্য : চরিতামৃত

জগদ্গুরু শঙ্করাচার্য : চরিতামৃত 

জগদ্গুরু শঙ্করাচার্য :

দাক্ষিণাত্যের কেরল নামক নগরে জন্মগ্রহণ করেন পণ্ডিতপ্রবর শ্ৰীশ্ৰীশঙ্করাচার্য । বৌদ্ধ ধর্মের প্রভাবে হিন্দুধর্ম যখন নিষ্প্রভ হয়ে পড়ে , তখন শঙ্করাচার্যের আবির্ভাব ঐতিহাসিক বিস্ময় । ধর্মপরায়ণ শাস্ত্রজ্ঞ ব্রাহ্মণ পণ্ডিত শিবগুরু বৃষ পর্বতে পুত্র কামনায় শিবের আরাধনা করেন । বািনুগ্রহে পত্নী সুভদ্রা ৬৪৮ সালের ১২ বৈশাখ শুক্ল পক্ষের তৃতীয়া তিথিতে পুত্র সন্তান প্রসব করলেন । শিবগুরু পুত্রের নাম রাখলেন “ শঙ্কর - পরবর্তীকালে জগদ্গুরু শঙ্করাচার্য ।

শৈশব থেকেই শঙ্কর ছিলেন অসাধারণ প্রতিভা ও প্রজ্ঞার অধিকারী । অতি অল্প বয়সেই শঙ্করের পাণ্ডিত্য ও ভগবদ ভক্তির কাহিনী দাক্ষিণাত্যে ছড়িয়ে পড়ে । মাতৃভক্ত শঙ্করের আরাধনার ফলে যে নদীতে মা সুভদ্রা প্রতিদিন বহু কষ্টে অবগাহন করতে যেতেন , সে নদী গতি পরিবর্তন করে , তাদের গৃহের পাশ দিয়েই প্রবাহিত হয়েছিল ।

আশৈশব ভােগ বাসনার প্রতি অনাসক্ত ছিলেন শঙ্করাচার্য । গুরুগৃহ থেকে ফিরে এসে সংসারের আবেষ্টনীতে তিনি শান্তি পাচ্ছিলেন না । বৈরাগ্য তার । হৃদয়কে আকর্ষণ করেছিল । তিনি সন্ন্যাসী হলেন ।

হিমালয়ের বুকে অলকনন্দা আর কেশব গঙ্গার সঙ্গমের উর্ধ্বে ব্যাসগুহা । । অনাদি অতীতে এই গুহাতে এসেই ব্যাসদেব রচনা করেছিলেন বিবিধ শাস্ত্ররাজি । বহুযুগ পরে সেই গুহাতে এসেই আশ্রয় নিলেন আচার্য শঙ্কর । চার বছর ধরে সেই নির্জন গুহায় বসে আচার্য শঙ্কর রচনা করলেন ১৬ খানি শাস্ত্র গ্রন্থের মহাভাষ্য । ব্রহ্মসূত্র , দ্বাদশ উপনিষদ , ভগবদগীতা ইত্যাদির ভাষ্য উল্লেখযােগ্য । “ মােহমুদগর ” সংস্কৃত ভাষার রচিত অমূল্য গ্রন্থ ।

পরমজ্ঞানী ও ভগবদ্ভক্ত শঙ্করাচার্য নানাস্থান পরিভ্রমণ করে বেদান্ত প্রচার করেন । বেদান্ত মতের উপর প্রতিষ্ঠিত ছিল শৈব ধর্ম । তিনি সুপ্রতিষ্ঠিত করলেন অদ্বৈতবাদকে । শিষ্যগণ তাঁকে শিব অবতার বলে বিশ্বাস করেন । তার প্রতিষ্ঠিত ৪টি মঠ অতি প্রসিদ্ধ । যথা - দ্বারকার সারদা মঠ , নীলাচলে গােবর্ধন মঠ , দাক্ষিণাত্যে শৃঙ্গেরী মঠ ও বদরিকাশ্রমে যােশী মঠ ।

আচার্য শঙ্কর আপন প্রজ্ঞায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ঘােষণা করলেন , “ ব্রহ্মই একমাত্র সত্য , সেই জগৎ সংসার সব কিছুই মিথ্যা , স্বপ্নের মতই মায়া - অলীক । আরাে বিস্তারিত করে তিনি বলেন , ব্ৰহ্ম নিগুণ নির্বিশেষ । এই ব্রহ্মে শক্তিরও কোন স্থান নেই । এই নিবিশেষ ব্রহ্মই হচ্ছে একমাত্র পরমার্থ তত্ত্ব । মুমুক্ষূ মানুষকে এই তত্ত্বই জানতে , উপলব্ধি করতে হবে ।

শঙ্করাচার্যের কয়েকটি শ্লোকের বঙ্গানুবাদ হচ্ছে নিম্নরূপ :

(ক)         কে তব কান্তা আর কে তব কুমার ? অতীব বিচিত্র এই মায়ার সংসার । কোথা হতে আসিয়াছ , তুমি বা কাহার , ভাবনা করহ ভাই , এই তত্ত্ব সার ।

(খ)        ধন জন যৌবনের ত্যজ অহঙ্কার । নিমেষে কৃতান্ত করে সকলি সংসার ; পরিহর এ সংসার ঘাের মায়াময় জানি , ব্রহ্মপদ সবে করহ আশ্রয় ।

(গ)          পরমাত্মা তত্ত্ব সদা করহ চিন্তন , অনিত্য ধনের চিন্তা করছ বর্জন ; ক্ষণকাল সাধুসঙ্গ কেবল সংসারে , একমাত্র তরী ভবসিন্ধু তরিবারে ।

(ঘ)         তােমাতে আমাতে সর্বজীবে এক হরি , বৃথা কেন কর ক্রোধ ধৈর্য পরিহরি ? আপন আত্মায় হের আত্মা সবাকার , সর্বভূতে ভেদজ্ঞান কর পরিহার ।

যুক্তিবিদ্যার উপর ভিত্তি করে হিন্দুধর্মকে প্রতিষ্ঠা করে বাইরের অগ থেকে রক্ষা করে হিন্দুধর্মের নূতন রূপকার হিসেবে আবির্ভূত হয়েছি । জগদ্গুরু শঙ্করাচার্য । মাত্র ৩২ বছর বয়সে কেদারনাথের শিবমন্দিরে ১ পরলােকগমন করেন । ব্রহ্মে লীন হবার আগে প্রিয় শিষ্য পদ্মপাদকে অদ্বৈত প্রচার এবং সনাতন ধর্ম সংরক্ষণ করার আদেশ দিলেন । শ্ৰীশ্ৰীশঙ্করাচার উপদেশ দিলেন , “ আলাে যত ক্ষীণই হােক , তা অন্ধকার দূর করে , তেমনি জ্ঞান অল্প হলেও বিশালকায় অবিদ্যাকে নাশ করে।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

বিষ্ণু দশ অবতারের পরিচয়

বেদের চনৎকার কিছু শ্লোক।

হিন্দুদের দৈনিক প্রার্থনার মন্ত্র