পঞ্চম মণ্ডল: সুক্ত - ৫৩

অনুবাদ

১। আমরা মহাত্মা ইন্দ্রের উদ্দেশে শোভনীয় বাক্য প্রয়োগ করি এবং পরিচর্যারত যজমানের গৃহে শোভনীয় স্তুতি প্রয়োগ করি। ইন্দ্র সুগ্ধ ব্যক্তিদের ধনের ন্যায় শত্রুর ধন অতি সত্বর অধিকার করেছেন, ধনদাতাদের প্রতি অসমীচীন স্তুতি শোভা পায় না।

২। হে ইন্দ্র! তুমি অশ্ব দান কর, গো দান কর, যবাদি ধান্য দান কর এবং তুমি নিবাস হেতুভুত ধনের প্রভু ও পালক। তুমি শিক্ষার নেতা, তুমি বহুদিনের পুরাতন দেব, তুমি কামনা ব্যর্থ করনা, তুমি সখাদের মধ্যে সখা। তারই উদ্দেশে আমরা এ স্তুতি পাঠ করি।

৩। হে প্রজ্ঞাবান, প্রভূতকর্মা ও অতিশয় দীপ্তিমান ইন্দ্র! সকল দিকে যে ধন আছে তা তোমারই তা আমরা জানি। হে শত্রুদের পরাভবকারী ইন্দ্র! সে ধন গ্রহণ করে আমাদের দান কর; যে স্তোতৃগণ তোমাকে কামনা করে, তাদের অভিলাষ ব্যর্থ করো না।

৪। হে ইন্দ্র! এ দীপ্ত হব্যসমূহ ও এ সোমরস সমূহে তুষ্ট হয়ে গো এবং অশ্বযুক্ত ধন দান করে আমাদের দারিদ্র্য দূর করে প্রসন্নমনা হও। এ সোমরসে তুষ্ট ইন্দ্রের সাহায্যে আমরা দস্যুকে ধ্বংস করে এবং শত্রু হতে মুক্তি লাভ করে সম্যকরূপে অন্ন ভোগ করব।

৫। হে ইন্দ্র! আমরা যেন ধন পাই, অন্ন পাই এবং অনেকের আহলাদকর ও দীপ্তিমান বল পাই। যেন তোমার দীপ্তিমান সুমতি আমাদের সহায় হয়, সে সুমতি বীর শত্রুদের শোষণ করে, স্তোতৃদের গো আদি পশু দান করে এবং অন্ন দান করে।

৬। হে সজনপালক ইন্দ্র! বৃত্রহননের সয় তোমার আনন্দদায়ী সহায় মরুৎগণ তোমাকে হৃষ্ট করেছিল; হে বর্ষণকারী ইন্দ্র! সে হব্য সমুদয় ও সোমরস সমুদয় তোমাকে হ্রষ্ট করেছিল, যে সময়ে তুমি শত্রুদের দ্বারা অপ্রতিহত হয়ে স্তুতিকারক ও হব্যদাতা যজমানের জন্য দশ সহস্র উপদ্রব বিনাশ করেছিলে।

৭। হে ইন্দ্র! তুমি শত্রুবর্ষণকারীরূপে যুদ্ধ হতে যুদ্ধাস্তরে গমন কর, বলদ্বারা নগরের পর নগর ধ্বংস কর। হে ইন্দ্র! তুমি নথী ঋষির সহায়ে (১) দুর দেশে মনুচি নামক মায়াবীকে বধ করেছিলে।

৮। তুমি অতিথিপ্ব নামক রাজার জন্য করঞ্জ ও পর্ণর নামক শত্রুদ্বয়কে তেজস্বী বর্তনী দ্বারা বধ করেছ; তারপর তুমি অনুচর রহিত হয়ে ঋজিশ্বান নামক রাজার দ্বারা চারদিকে বেষ্টিত বঙ্গৃদ নামক শত্রুর শত নগর তভদ করেছিলে (২)।

৯। সহায় রহিত সুশ্রবা নামক রাজার সাথে যুদ্ধ করবার জন্য যে বিংশ নরপতি ও ৬০,০৯৯ অনুচর এসেছিল, হে প্রসিদ্ধ ইন্দ্র! তুমি শত্রুদের অলঙ্ঘ্য রথচক্র দ্বারা তাদের পরাজিত করেছিলে (৩)।

১০। হে ইন্দ্র! তুমি তোমার রক্ষাসমূহ দ্বারা সুশ্রবা রাজাকে রক্ষা করেছিলে, তুর্বযান রাজাকে তোমার পরিত্রাণ সাধন সমূহ দ্বারা রক্ষা করেছিলে; তুমি কুৎস, অতিথিব ও আয়ুকে এ মহৎ যুবক রাজার অধীন করেছিলে (৪)।


১১। হে ইন্দ্র! আমরা তোমার সখা স্বরূপ যজ্ঞ সমাপ্তিতে বর্তমান আছি ও দেবগণের দ্বারা পালিত হচ্ছি; আমাদের সকলই মঙ্গল। আমর তোমার স্তুতি করি এবং তোমার প্রসাদে শোভনীয় সুত্র পাই ও প্রকৃষ্টরূপে দীর্ঘ জীবন ধারণ করি।

টীকা
১। মুলে নম্যা সখ্যা আছে। শত্রুষু নমনশীলেন সখ্যা সহায়ভূতের বজেণ। সায়ণ। কিন্তু বেদার্থযত্ন এবং রমানাথ সরুবতী অর্থ করেছেন নমী নামক ঋষির সাহায্যে। এ অর্থই প্রকৃত, কেননা ঋগ্বেদের ৬ মন্ডলের ২০ সুক্তের ৬ ঋকে এবং ১০ মন্ডলের ৪৮ সুক্তের ৯ ঋকে দেখা যায় যে ইন্দ্র নমী ঋষির হিতার্থ নমুচি নামক অসুরকে বিনাশ করেছিলেন। নমুচি সম্বন্ধে ১১ সুক্তের ৭ ঋকের টীকা দেখুন।

২। অতিথিপ্ব ৫১ সুক্তের ৬ ঋকের টীকা দেখুন। ঐ সুক্তের ৫ ঋকের ঋজিশ্বানের উল্লেখ দেখুন। করঞ্জ ও পর্ণয় ও বঙ্গদকে সায়ণ অসুর বলে বর্ণনা করেছেন, আর কোন পরিচয় দেননি।

৩। এ ঘটনা সম্বন্ধে সায়ণের টীকায় আর কোনও বিবরণ নেই। বায়ু পুরাণে সু্শ্রবা একজন প্রজাপতি।

৪। কুৎস সম্বন্ধে ৬৩ সুক্তের ৩ ঋকের ও ১০৬ সুক্তের ৬ ঋকের টীকা দেখুন। পুরাণে পুরুরবার পুত্র আয়ুঃ; এ ঋকে আয়ু নাম আছে, বিসর্গ নেই। তুর্বযান সম্বন্ধে সায়ণ এখানে কিছু বলেন নি, কিন্তু ৬ মন্ডলের ১৮ সুক্তের ২৩ ঋকের টীকার সায়ণ বলেছেন যে তুর্বযান দিবোদাস হতে পারে।

পঞ্চম মণ্ডল- ঋগ্বেদ সংহিতা

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

বেদের চনৎকার কিছু শ্লোক।

বিষ্ণু দশ অবতারের পরিচয়

হিন্দুদের দৈনিক প্রার্থনার মন্ত্র