শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেব : চরিতামৃত

শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেব : চরিতামৃত 

শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেব : 

ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে ইংরেজ শাসনামলে সদ্য ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত এ উপমহাদেশীয় যুব দলের মধ্যে এ দেশীয় ধর্ম ও সংস্কৃতির পরিবর্তে ইউরােপীয় সংস্কৃতির প্রভাব প্রচণ্ড হয়ে উঠে । এ সময় সংরক্ষণশীল ধর্মপ্রাণ ব্যক্তিদের মধ্যে পদ্ধতিগত মতবাদ নিয়ে বাদ - বিসংবাদ চলছিল । ১৮৩৬ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি বুধবার শুক্লা দ্বিতীয়ায় বাংলা ১২৪২ সালের ৬ ফাল্লুন , ধর্মজগতের এক চরম সংকট মুহূর্তে হুগলি জেলার কামারপুকুরে শ্রীরামকৃষ্ণের আবির্ভাব ঘটে । পিতা ক্ষুদিরাম ছিলেন ধর্মভীরু ভক্ত ও সত্যবাদী পুরুষ । ক্ষুদিরাম একবার গয়াধামে গেলে তীর্থদেবতা “ গদাধর ” তাকে স্বপ্নে বললেন যে , তিনি তার ঘরে জন্ম নেবেন । এক বছরের মধ্যেই ক্ষুদিরামের চতুর্থ সন্তান ভূমিষ্ট হলে , শিশুপুত্রের নাম রাখলেন গদাধর ।

পিতার মৃত্যুর পর গদাধরের মধ্যে এক বিশেষ ভাবান্তর পরিলক্ষিত হয় । তিনি প্রায়ই শ্মশানে বা নির্জনে আমবাগানে সময় কাটাতেন । এরপর গদা বেদান্ত সাধনের গুরুরূপে লাভ করেন সন্ন্যাসী তােতাপুরীকে । সন্ন্যাস দীক্ষিত করে তােতাপুরী তার নাম রাখেন শ্রীরামকৃষ্ণ ।

১৮৫৫ খ্রীষ্টাব্দের ৩১ মে জানবাজারের রানী রাসমণি দক্ষিণেশ্বরে কালীবাড়ি প্রতিষ্ঠা করলেন । বড় ভাই রামকুমার এখানেই নিয়ে এলেন গদাধরকে এবং রামকুমারের মৃত্যুর পর গদাধরই হ ' ন ভবতারিণীর পূজক । । ভবতারিণীর পুজো শুরু করার পর থেকে গদাধর সব সময়েই থাকতেন মাতৃ ভাবে বিভাের । মার কাছে প্রার্থনা জানাতেন , “ মা - আমি অর্থ চাই না , সম্পদ চাই না , নাম যশ কিছুই চাই না । তুমি আমাকে শুধু ভক্তি দাও । শ্রদ্ধা ভক্তি দাও । " এই ভক্তি পথের পথিক গদাধর অর্থ সম্পর্কে নিরাসক্ত ছিলেন । যে অর্থ পরমার্থ দেয় না , কি হবে সেই অর্থ দিয়ে । তাই তিনি “ টাকা মাটি , মাটি টাকা ” এ কথা বলে টাকা ছুড়ে দিতেন ।

শ্রীরামকৃষ্ণ হিন্দুধর্মের শাক্ত , বৈষ্ণব , তান্ত্রিক , বৈদান্তিক ইত্যাদি সাধন পথ অনুসরণ করে সিদ্ধিলাভ করেন এবং তিনি হলেন রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব । ঠাকুর বুঝলেন , ঈশ্বরের ভাব অনন্ত । সাকারও তিনি , আবার নিরাকারও তিনি । যে কোন ধর্মের সাধন পথ নিষ্ঠার সাথে অনুসরণ করলে ঈশ্বর লাভ সম্ভব । ১৮৭৫ সালে ঠাকুরের জীবনের নৃতন অধ্যায় শুরু হয় , তিনি । হলেন লােকগুরু । তার কাছে আসতে শুরু করেন ত্যাগী ভক্তবৃন্দ । আসেন নরেন্দ্রনাথ , রাখালচন্দ্র , তারকনাথ , কেশব সেন , বিজয় কৃষ্ণ , শিবনাথ শাস্ত্রী , গিরীশ ঘােষ । ১৮৮৬ সালে ১ জানুয়ারি কাশীপুর উদ্যানবাটীতে তিনি হলেন কল্পতরু । ১৮৮৬ সালের ১৬ আগস্ট । শ্রাবণের কালরাত্রিতে নবীন ভারতের ধর্মগুরু শ্রীরামকৃষ্ণ জগদম্বা কালীকে স্মরণ করে লীন হয়ে গেলেন পরমব্রহ্মে । শ্রীরামকৃষ্ণ দেহত্যাগ করলেন । রেখে গেলেন একদল ত্যাগী সন্ন্যাসীকে । তাঁরাই সারা বিশ্বে ওড়ালেন শ্রীরামকৃষ্ণের নামের পতাকা ।

“ শিবরূপে জীবসেবা ’ র যে আদর্শ তিনি স্থাপন করেছেন , তা আজও একইভাবে বহমান । এখনও মানুষ ঐ নামেই পাচ্ছেন জীবনের শান্তি , পরম পুরুষের সন্ধান । 

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

বিষ্ণু দশ অবতারের পরিচয়

বেদের চনৎকার কিছু শ্লোক।

হিন্দুদের দৈনিক প্রার্থনার মন্ত্র