চতুর্থ মণ্ডল: সুক্ত - ৪৩

অনুবাদ
১। প্রকৃষ্ট জ্ঞান যুক্ত অভীষ্ট বর্বণকারী ও অতিশয় মহৎ রুদ্র (১) আমাদরে হৃদয়ে অধিষ্ঠান করছেন, কবে তার উদ্দেশে সুখকর স্তোত্র পাঠ করব?

২। যা দিয়ে অদিতি আমাদরে জন্য, পশুর জন্য মানুষের জন্য, গাভীর জন্য এবং আমাদের অপত্যের জন্য রুদ্রীয় প্রদান করেন।

৩। যা দিয়ে মিত্র ও বরুণ ও রুদ্র ও সমান প্রীতিযুক্ত সকল দেবগণ আমাদরে অনুগ্রহ করেন।

৪। রুদ্র স্তুতিপালক, যজ্ঞপালক এবং উদকরূপ ঔষধিযুক্ত, তার নিকট আমরা (বৃহস্পতি পুত্র) শংযুর ন্যায় সুখ যাচ্ঞা করি।

৫। যে রুদ্র সূর্যের ন্যায় দীপ্তিমান ও হিরণ্যের ন্যায় উজ্জ্বল, যিনি দেবগণের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ও নিবাসের হেতু।

৬। আমাদরে অশ্ব, মেঘ, মেঘী, পুরুষ স্ত্রী ও গোজাতিকে সুগম্য সুখ প্রদান করেন।

৭। হে সোম! আমাদরে প্রচুর পরিমাণে শত মানুষের ধন দান কর এবং মহৎ ও প্রভূত বলযুক্ত অন্ন দান কর।

৮। সোমপ্রতিবন্ধকেরা ও শত্রুগণ আমাদরে যেন হিংসা না করে। যে সোম! আমাদরে অন্ন দান কর।

৯। হে সোম! তুমি অমর ও উত্তম স্থান প্রাপ্ত, তুমি শির:স্থানীয় হয়ে যজ্ঞগৃহে তোমার প্রজাদরে কামনা কর; যে প্রজাগণ তেমাকে বিভূষিত করে, তুমি তাদের জান।

টীকা
১। ২৭ সুক্তের ১০ ঋকে রুদ্রকে অগ্নির রূপ বলে বর্ণিত হয়েছে, আমরা তা দেখেছি। সে ঋক সম্বন্ধে যাস্ক নিরুক্ততে বলেন অগ্নিরপি রুদ্র উচ্যতে। সায়ণ বলেন রুদ্রায় ক্ররায় অগ্নয়ে। অতএব উভয় যাস্ক ও সায়ণের মতে রুদ্র শব্দের অর্থ অগ্নি। ৩৯ সুক্তের ৪ ঋকে মরুৎগণকে রুদ্রাসঃ বলে বর্ণনা করা হয়েছে তাও আমরা দেখেছি। সায়ণ। রুদ্রাসঃ অর্থে রুদ্রপুত্রা মরুতঃ করেছেন। অতএব রুদ্র মরুৎগণের পিতা। রুদ্র ধাতুর একটি অর্থ শব্দ করা অথবা গর্জন করা বা রোদন করা অতএব রুদ্র অগ্নিরূপী ঋড়ের পিতা শব্দায়মান দেব। এ হতে স্পষ্টই প্রতীয়মান হচ্ছে যে রুদ্রের আদিম অর্থ বজ্র বা বজ্রধারী মেঘ। এক্ষণে আমরা ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও রুদ্রের আদিম বৈদিক অর্থ পেলাম। ঋগ্বেদে ব্রহ্মণস্পতি অর্থে স্তুতি দেব ১৮ সুক্ত দেখুন, বিষ্ণু অর্থে সূর্য দেব ব২২ সুক্ত দেখুন, রুদ্র অর্থে বজ্রদেব। সকল ঐশ্বরিক কাজের এক ঈশ্বরকে ঋগ্বেদে বিশ্বকর্মা বা হিরণ্যগর্ভ নাম দেওয়া হয়েছে ১০ মন্ডলের ৮২ ও ১২১ সুক্ত দেখুন। ঋগ্বেদ রচনার বহুকাল পর এই এক ঈশ্বরের সৃষ্টি, পালন, ও বিনাশ এ তিনটি কাজ পৃথক পৃথক নির্দেশ করবার জন্য ঋষিগণ তিনটি নামের অন্বেষণ করলেন। তারা নতেন নাম উদ্ভাবন না করে প্রাচীন বৈদিক নামই গ্রহণ করলেন। স্তুতি দেব ব্রহ্মণস্পতির নাম নিয়ে ঈশ্বরের সৃষ্টি কার্যকে ব্রহ্মা নাম দিলেন। সূর্যদেব বিষ্ণুর নাম নিয়ে ঈশ্বরের পালন কার্যকে বিষ্ণুর নাম দিলেন। বজ্রদেব রুদ্রের নাম নিয়ে ঈশ্বরের বিনাশ কার্যকে রুদ্র নাম দিলেন। 

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

বেদের চনৎকার কিছু শ্লোক।

বিষ্ণু দশ অবতারের পরিচয়

হিন্দুদের দৈনিক প্রার্থনার মন্ত্র