প্রথম অধ্যায়ঃ অর্জুনবিষাদযোগ

প্রথম অধ্যায়ঃ অর্জুনবিষাদযোগ



ধৃতরাষ্ট উবাচ
ধর্মক্ষেত্রে কুরুক্ষেত্রে সমবেতা যুযুত্সবঃ ।
মামকাঃ পান্ডবাঃ চ এব কিম অকুর্বত সঞ্জয় ।।১
অর্থ- ধৃতরাষ্ট জিজ্ঞাসা করলেন হে সঞ্জয় ধর্মক্ষেত্রে যুদ্ধ করার মানসে সমবেত হয়ে আমার পুত্র এবং পান্ডুর পুত্ররা তারপর কি করলেন।
সঞ্জয় উবাচ
দৃষ্টা তু পান্ডব আনীকম্‌ ব্যুঢ়ম দুর্য্যধনঃ তদা ।
আচার্য্যম উপসঙ্গম্য রাজা বচনম্‌ অব্রবীত্ ।।২
অর্থ- সঞ্জয় বললেন হে রাজন পান্ডবদের সৈন্য সজ্জা দর্শন করে রাজা দুর্য্যধন দ্রোনাচার্য্যের কাছে বললেন।
পশ্য এতাম্‌ পান্ডুপুত্রানাম্‌ আচার্য্য মহিতীম্‌ চমুম্‌ ।
বুঢ়াম্‌ দ্রুপদ পুত্রেন তব শিষ্যেন ধীমতা ।।৩
অর্থ- হে আচার্য্য পান্ডবদের মহান সৈন্য দল দর্শন করুন যা আপনার অত্যন্ত বুদ্ধিমান শিষ্য দ্রুপদের পুত্র অত্যনত দক্ষতার সংঙ্গে ব্যুহের আকার রচনা করেন।
অত্র সুরাঃ মহা-ইষু আসাঃ ভীম অর্জুন সমাঃ যুধী ।
যুযুধানঃ বিরাটঃ চ দ্রুপদ মহারথাঃ ।।৪
অর্থ- সে সমস্থ সেনাদের মধ্যে অনেকে ভীম এবং অর্জুনের মত বীর ধনুর্ধারী রয়েছেন এবং যুযুধান বিরাট ও দ্রুপদের মত মহাযোদ্ধা রয়েছেন।
ধৃষ্টকেতু চেকিতান কাশিরাজঃ চ বীর্য্যবান ।
পুরুজিত্ কুন্তিভোজঃ চ শৈব্যঃ চ নরপুঙ্গবঃ ।।৫
অর্থ- সেখানে ধৃষ্টকেতু চেকিতান কাশিরাজ পুরুজিত্ কুন্তিভোজ এবং শৈব্যের মত অত্যন্ত বলবান যোদ্ধারাও রয়েছেন।
যুধামন্যু চ বিক্রান্ত উত্তমৌজাঃ চ বির্য্যবান ।
সৌভদ্রঃ দ্রৌপদেয়াঃ চ সর্বে এব মহারথা ।।৬
অর্থ- সেখানে রয়েছেন অত্যন্ত বলবান যুধামন্যু প্রবল পরাক্রামশালী উত্তমৌজ,শুভদ্রার পুত্র এবং দ্রৌপদীর পুত্রগন এই সব যোদ্ধারা সকলেই এক একজন মহারথী।
অস্মাকম্‌ তু বিশিষ্টা যে তান নিবোধ দ্বিজ-উত্তম্‌ ।
নায়কাঃ মম্‌ সৈন্যস্য সংজ্ঞা অর্থম্‌ তান ব্রবীমী তে ।।৭
অর্থ- হে দ্বিজত্তম আমাদের পক্ষে যে সমস্ত বিশিষ্ট সেনাপতি সামরিক শক্তি পরি চালনার জন্য রয়েছেন আপনার অবগতীর জন্য আমি তাদের সম্বন্ধে বলছি।
ভবান ভিষ্মঃ চ কর্ণঃ চ কৃপ চ সমিতিঞ্জয়ঃ ।
অশ্বত্থামা বিকর্ণঃ চ সৌমদত্তিঃ তথা এব চ ।৮।
অর্থ- সেখানে রয়েছেন আপনার মতোই ব্যক্তিসম্পন্ন-ভীষ্ম কর্ন কৃপ অশ্বত্থমা বিকর্ন এবং সোমদত্তের পুত্র ভূরিশ্রবা যারা সর্বক্ষেত্রে সর্বদা সংগ্রামে বিজয়ী থাকেন।
অন্যে চ বহবঃ শুরাঃ মত্ অর্থে ত্যক্ত জীবিতাঃ ।
নানা শস্ত্র প্রহরণাঃ সর্বে যুদ্ধ বিশারদাঃ ।৯।
অর্থ- এছারা আর বহু নায়ক রয়েছেন আমাদের জন্য তাদের জীবন ত্যাগ করতে প্রস্তুত । তারা সকলেই নানা প্রকার অস্ত্র শস্ত্র সজ্জিত এবং তারা সামরিক বিজ্ঞান বিশারদ।
অপর্যাপ্তম্‌ তত্ অস্মাকম্‌ বলম্‌ ভীষ্ম অভিরক্ষিতম্ ।
পর্য্যাপ্তম্‌ তু ইদম্‌ এতেষাম্‌ বলম্‌ ভীম অভিরক্ষিতম্‌ ।১০।
অর্থ- আমাদের সৈন্যদল অপরিমিত এবং আমরা পিতামহ ভীষ্মের দ্বারা পুর্নরুপে সুরক্ষিত কিন্তু ভীমের দ্বারা সতর্ক ভাবে সুরক্ষিত পান্ডবের শক্তি সিমিত।
অয়নেষু চ সর্বেষু যথাভাগম্‌ অবসথিতাঃ ।
ভীষ্মম এব অভীরক্ষন্তু ভবন্তঃ সর্বে এব হি ।১১।
অর্থ- এখন আপনারা সকলে নিজ নিজ গুরুত্তপুর্ন স্থানে সমর সেনাসজ্জায় স্থিত হয়ে পিতামহ ভীষ্মকে পুর্ন সাহয্য করুন।
তস্য সঞ্জনয়ন্‌ হর্ষ্‌ম্ কুরু-বৃদ্ধঃ পিতামহঃ ।
সিংহ নাদম্‌ বিনদ্য উচ্চৈঃ শঙ্খম্‌ দধ্‌মৌ প্রতাপবান ।১২।
অর্থ- তখন কুরু বংশের বৃদ্ধ পিতামহ ভীষ্ম দুর্য্যধনের হর্ষ উত্পাদনের জন্য সিংহের গর্জ্জনের মত অতি উচ্চনাদে তার শঙ্খ বাজালেন।
ততঃ শঙ্খাঃ চ ভের্যঃ চ পনবআনক গোমুখাঃ ।
সহসা এব অভ্যহন্যন্ত সঃ শব্দঃ তুমুলঃ অভবত্ ।১৩।
অর্থ- তারপর শঙ্খ ভেরী পনক আনক ঢাক এবং গোমুখ সিংঙ্গা সমুহ হঠাত্ একত্রে ধনিত হয়ে এক তুমুল শব্দের সৃষ্টি হল।
ততঃ শ্বেতৈঃ হয়ৈঃ যুক্তে মহতি স্যন্দনে স্থিতৌ ।
মাধবঃ পান্ডবঃ চ এব দিব্যৌ শঙ্খৌ প্রদধ্‌মতুঃ ।১৪।
অর্থ- অন্যদিকে শ্বেত অশ্বসমুহ যুক্ত একদিব্য রথে স্থিত শ্রীকৃষ্ণ এবং অর্জুন উভয়ে তাদের দিব্য শঙ্খ বাজালেন।
পাঞ্চজন্যম্‌ হৃষীক-ঈশঃ দেবদত্তম্‌ ধনঞ্জয়ঃ ।।
পৌন্ড্রম্‌ দধ্‌মৌ মহাশঙ্খম্‌ ভীমকর্মা বৃক-উদর ।১৫।
অর্থ- তখন শ্রীকৃষ্ণের পাঞ্চজন্য নামক তার শঙ্খ বাজালেন।এবং অর্জুন বাজালেন তার দেবদত্তক নামক শঙ্খ এবং বিপুল ভোজন পৃয় ভীমকর্মা সেন বাজালেন পৌন্ড্র নামক তার ভয়ঙ্কর শঙ্খ।
অনন্ত বিজয়ম্‌ রাজা কুন্তীপুত্রঃ যুধিষ্ঠিরঃ ।
নকুলঃ সহদেবঃ চ সুঘোষ-মনিপুস্পকৌ ।১৬।
কাশ্যঃ চ পরম-ইষু-আসঃ শিখন্ডী চ মহারথঃ ।
ধৃষ্টদ্যুম্নঃ বিরাটঃ চ সাত্যকি চ অপরাজিতঃ ।১৭।
দ্রুপদঃ দ্রৌপদেয়াঃ চ সর্বশঃ পৃথিবী পতে ।
সৌভদ্রঃ চ মহা বাহু শঙ্খান দধ্‌মুঃ পৃথক্‌ পৃথ্‌ক ।১৮।
অর্থ- কুন্তীপুত্র মহারাজ যুধিষ্ঠির অনন্ত বিজয় নামক শঙ্খ বাজালেন, এবং নকুল এবং সহদেব বাজালেন সুঘোষ এবং মনিপুস্পক নামক শঙ্খ। হে মহারাজ তখন মহান ধনুর্ধর কাশিরাজ, প্রবল যোদ্ধা শিখন্ডি,ধৃষ্টদ্যুম্ন, বিরাট এবং অপরাজিত সাত্যকি, দ্রুপদ দ্রৌপদীর পুত্রগন, সুভদ্রার মহা বলবান পুত্র এবং অন্য সকলে তাদের নিজ নিজ পৃথক শঙ্খ বাজালেন।
সঃ ঘোষঃ ধার্তরাষ্ট্রাণাম্‌ হৃদয়ানি ব্যদারয়াত্ ।
নভঃ চ পৃথিবীম্‌ চ এব তুমুলঃ অভ্যনুনাদয়ন ।১৯।
অর্থ- শঙ্খ নিনাদের সেই শব্দে আকাশ বিদীর্ন হল। পৃথিবী কম্পিত হল এবং তার ফলে ধৃতরাষ্টের হৃদয় প্রবল ভয়ে বিধ্বস্ত হল।
অথ ব্যবস্তিতান্‌ দৃষ্টা ধার্তরাষ্ট্রান কপিধ্বজঃ ।
প্রবৃত্তে শস্ত্র সম্পাতে ধনুঃ উদ্যম্য পান্ডবঃ ।
হৃষীকেশম্‌ তদা বাক্যম্‌ ইদম আহ মহীপতে ।২০।
অর্থ- সেই সময় পান্ডু পুত্র অরজুন হনুমান চিহ্নিত পতকা শোভিত রথে অধিষ্ঠিত হয়ে তার ধনুক তুলেনিয়ে শ্বরনিক্ষেপ করতে প্রস্তুত হলেন। হে মহারাজ ধৃতরাষ্টের পুত্রদের সমর সজ্জায় বিন্স্ত দেখে হৃষীকেশকে অর্জুন তখন এই কথাগুলি বললেন
অর্জুন উবাচ
সেনয়োঃ উভয়োঃ মধ্যে রথম্‌ স্থাপয় মে অচ্যুত ।
যাবত্ এতান নিরীক্ষে অহম্‌ যোদ্ধুকামান অবস্থিতান ।২১।
কৈঃ ময়া সহ যোদ্ধব্যম্‌ অস্মিন রন সমুদ্যমে ।২২।
অর্থ- অর্জুন বললেন হে অচ্যুত্ অভ্রান্ত বন্ধু, তুমি উভয়ে পক্ষের সৈন্যদের মাঝখানে আমার রথ স্থাপন কর, যাতে আমি দেখতে পারি যুদ্ধ করার অভিলাষি হয়ে কারা এখানে এসেছে এবং আমাকে অস্ত্রধারন করে কাদের সঙ্গে এই মহা সংগ্রাম করতে হবে।
যোত্স্যমানান অবেক্ষে অহম্‌ যে এতে অত্র সমাগতাঃ ।
ধার্তরাষ্টস্য দুর্বুদ্ধেঃ যুদ্ধে প্রিয় চিকীর্ষবঃ ।২৩।
অর্থ- অমি দেখতে চাই ধৃতরাষ্টের দুর্বুদ্ধি সম্পন্ন পুত্রদেরকে সন্তুষ্ট করার জন্য কারা এখানে যুদ্ধ করতে এসেছে।
সঞ্জয় উবাচ
এবম্‌ উক্তঃ হৃষীকেশঃ গুড়াকেশেন ভারত ।
সেনয়োঃ উভয়োঃ মধ্যে স্থাপয়িত্বা রথউত্তমম্‌ ।২৪।
অর্থ- সঞ্জয় বললেন হে ভারত বংশধর অর্জুন কতৃক এইভাবে আদিষ্ট হয়ে শ্রীকৃষ্ণ সেই উত্তম রথটি চালিয়ে নিয়ে উভয়ে পক্ষের সৈন্যদের মাঝখানে রাখলেন।
ভীষ্ম দ্রোন প্রমুখতঃ সর্বেষাম্‌ চ মহীক্ষিতাম্‌ ।
উবাচ পার্থ পশ্য এতান্‌ সমবেতান কুরূন্ ইতি ।২৫।
অর্থ- ভীষ্ম দ্রোন প্রমুখ পৃথিবীর অন্য সমস্থ নেতাদের সামনে ভগবান হৃষীকেশ বললেন হে পর্থ এখন সমস্ত কৌরবদের দেখ।
তত্র অপশ্যত্ স্থিতান পার্থ পিতৃন্ অথ পিতামহান্ ।
আচার্যান্ মাতুলান ভ্রাতৃন পুত্রান্ পৌত্রান্ সখীন্ তথা ।
শ্বশুরান্‌ সুহৃদঃ চ এব সেনয়োঃ উভয়োঃ অপি ।২৬।
অর্থ- তখন অর্জুন উভয়ে দলের মধ্যে পিতৃব্য, পিতামহ, আচার্য্য মাতুল ভ্রাতা শ্বশুর মিত্র শুভকাঙ্খিদের উপস্থিত দেখতে পেলেন।
তান সমীক্ষ্য সঃ কৌন্তেয়ঃ সর্বান বন্ধুন অবস্থিতান।
কৃপয়া পরয়া আবিষ্টঃ বিষীদন্ ইদম্‌ অব্রবীত্ ।২৭।
অর্থ- যখন অর্জুন সকল রকমের বন্ধু এবং আত্মীয় স্বজনদের যুদ্ধক্ষেত্রে অবস্থিত দেখলেন তখন তিনি অত্যন্ত কৃপায়াবিষ্ট ও বিষন্ন হয়ে বললেন।
অর্জুন উবাচ
দৃষ্টা ইমম্‌ স্বজনম্‌ কৃষ্ণ যুযুঃসুম সমুপস্থিতম্‌ ।
সীদন্তী মম্‌ গাত্রাণী মুখম্‌ চ পরিশুষ্যতি ।২৮। ।
অর্থ- অর্জুন বলিলেন হে প্রিয়বর কৃষ্ণ আমার সমস্ত বন্ধু বান্ধব এবং আত্মীয় স্বজনদের এমন ভাবে যুদ্ধাভিলাষি হয়ে আমার সামনে অবস্থান করতে দেখে আমার অঙ্গ প্রতঙ্গ অবশ হয়ে আসছে এবং মুখ শুস্কহয়ে উঠছে।
বেপথুঃ চ শরীরে মে রোমহর্ষ চ জায়তে ।
গান্ডীবম্‌ স্রংসতে হস্তাত্ ত্বক চ এব পরিদহ্যতে ।২৯।
অর্থ- আমার সর্ব শরির কম্পিত ও কেশাগ্র রোমাচিত হচ্ছে। হাত থেকে গান্ডিব খসে পরছে এবং ত্বক যেন জ্বলে যচ্ছে।
ন চ শক্লোমি অবস্থাতুম্‌ ভ্রমতী ইব চ মে মনঃ ।
নিমিত্তানি চ পশ্যামি বিপরীতানি কেশবঃ ।৩০।
অর্থ- হে কেশব আমি এখন স্থির থাকতে পারছি না। আমি বিভ্রান্তী বোধ করছি,আমার চিত্ত উত্ভ্রান্ত হচ্ছে। হে কেশীদৈত্যহন্তা শ্রীকৃষ্ণ আমি কেবলই অমঙ্গ সুচক লক্ষন দর্শন করছি।
ন চ শ্রেয় অনুপশ্যামি হত্বা স্বজনম্‌ আহবে ।
ন কাঙ্ক্ষে বিজয়ম্‌ কৃষ্ণ ন চ রাজ্যম্‌ সুখানি চ ।৩১।
অর্থ- হে কৃষ্ণ আত্মীয় স্বজনদের নিধন করা শ্রেয়স্কর দেখছি না। আমি যুদ্ধে জয়লাভ করতে চাইনা রাজ্যসুখ ভোগের কামনা করিনা।
কিম্‌ ন রাজ্যম্‌ গোবিন্দ কিম্‌ ভোগৈঃ জীবিতেন বা ।
যেষাম্‌ অর্থে কাঙ্খিতম্‌ নঃ রাজ্যম্‌ ভোগাঃ সুখানি চ ।৩২।।
তে ইমে অবস্থিতাঃ যুদ্ধে প্রানান ত্যাক্তা ধনানি চ ।
আচার্য্যাঃ পিতরঃ পুত্রাঃ তথা এব চ পিতামহাঃ ।৩৩।।
মাতুলা শ্বশুরাঃ পৌত্রাঃ শ্যালাঃ সম্বন্ধিনঃ তথা ।
এতান্‌ ন হন্তুম্‌ ইচ্ছামি ঘ্নতঃ অপি মধুসুদন ।৩৪।।
অপি ত্রৈলোক্য রাজ্যস্য হেতোঃ কিম্‌ নু মহীকৃতে ।
অর্থ- হে গবিন্দ আমাদের রাজ্যে কি প্রায়োজন, আর সুখভোগ বা জীবন ধারনেই বা কী প্রোয়োজন, যখন দেখছি যাদের জন্য রাজ্য ও ভোগ সুখের কামনা, তারা সকলেই এই রণক্ষেত্রে উপস্থিত? হেমধুসুদন যখন আচার্য্য পিত্রিব্য পুত্র, মাতুল শ্বশুর পৌত্র শ্যালক আত্মীয়স্বজন ,প্রান ও ধনাদির আশা পরিত্যাগ করে আমার সামনে যুদ্ধে উপস্থিত হয়েছে, তখন তারা আমাকে বধ করলেও আমি তাদের হত্যা করতে চাইব কেন? হে সর্বজীবসত্তার প্রতিপলক জনার্দন, পৃথিবীর তো কথাই নাই এমন কি ত্রিভুবনের বিনিময়েও আমি যুদ্ধ করতে প্রস্তুত নই। ধৃতরাষ্টের পুত্রদের নিধন করে কি সন্তোষ আমরা লাভ করতে পারব?
পাপম্‌ এব আশ্রয়েত্ অস্মান্‌ হত্বা এতান আততায়িনঃ ।
তস্মাত্ ন অর্হা বয়ম্‌ হন্তুম্‌ ধার্তরাষ্ট্রান সবান্ধবান ।
স্বজনম্‌ হি কথম্‌ হত্বা সুখিনঃ স্যাম মাধবম্‌ ।৩৬।
অর্থ- এই ধরনের আততায়িদের বধ করলে মহাপাপ আমাদের আচ্ছন্ন করবে। সুতরাং ধৃতরাষ্টের পুত্রদের সংহার করা আমাদের উচিত্ হবে না। হে শ্রীকৃষ্ণ লক্ষ্মীপতি মাধব আত্মীয় স্বজনদের হত্যা করে কিলাভ হবে।এবং তা থেকে কেমন করে আমরা সুখী হব।
যদি অপি এতে ন পশ্যতি লোভ উপহত চেতসা ।
কুলক্ষয় কৃতম্‌ দোষম্‌ মিত্রদ্রোহে চ পাতকম্‌ ।৩৭।
কথম্‌ ন জ্ঞেয়ম্‌ অস্মাভিঃ পাপাত্ অস্মাত্ নিবর্তিতুম্‌ ।
কুলক্ষয় কৃতম্‌ দোষম্‌ প্রপশ্যদ্ভিঃ জনার্দন ।৩৮।
অর্থ- হে জনার্দন যদিও এরা রাজ্যলোভে অভিভুত হয়ে কুলক্ষয় জনিত দোষ ও মিত্রদোহ নিমিত্ত পাপ লক্ষ করছে না, কিন্তু আমরা কুলক্ষয় জনিত দোষ লক্ষ্য করেও এই পাপ কাজে কেন প্রবৃত্ত হব।
কুলক্ষয়ে প্রণশ্যতি কুলধর্মাঃ সনাতনাঃ ।
ধর্মে নষ্টে কুলম্‌ কৃত্স্নম অধর্মঃ অভিভবতি উত ।৩৯।
অর্থ- কুলক্ষয় হলে সনাতন কুলধর্ম বিনষ্ট হবে এবং তা হলে সমগ্র বংশ অধর্মে অভিভুত হবে।
অধর্ম অভিভবাত্ কৃষ্ণ প্রদুষ্যন্তি কুলস্ত্রীয় ।
স্ত্রীষু দুষ্টাষু বাষ্ণেয় জায়তে বর্ন সংঙ্করঃ ।৪০।
অর্থ- হে কৃষ্ণ অধর্মের দ্বারা অভিভুত হলে কুলবধুগন ব্যভিচারে প্রবৃত্ত হয় এবং হে বাষ্ণেয় কুলস্ত্রীগন অসত্ চরিত্রা হলে অবাঞ্চিত প্রজাতি উত্পন্ন হয়।
সঙ্করঃ নরকায় এব কুলঘ্নানাম্‌ কুলস্য চ ।
পতন্তি পিতরঃ হি এষাম্‌ লুপ্ত পিন্ড উদকক্রিয়াঃ ।৪১।
অর্থ- অবাষ্ণিত বর্ন সঙ্কর সন্তান উত্পাদন বৃদ্ধি হলে কুল ও কুলঘাতকেরা নরকগামী হয়। সেই কুলে পিন্ডদান ও তর্পনক্রিয়া লোপ পওয়ার ফলে তাদের পিতৃ পুরুষরাও নরকে অধঃপাতিত হয়।
দোষৈঃ এতৈঃ কুলঘ্নানাম বর্নসঙ্কর কারকৈঃ ।
উত্সাদ্যন্তে জাতিধর্মাঃ কুলধর্মাঃ চ শাশ্বতাঃ ।৪২।
অর্থ- যারা বংশের ঐতিয্য নষ্ট করে এবং তার ফলে অবাষ্ণিত সন্তানাদি সৃষ্টি করে,তাদের কুকর্মজনিত দোষের ফলে সর্বপ্রকার জাতীয় উন্নয়ন প্রকল্প এবং বংশের কল্যানধর্ম উত্সন্নে যায়। ফলে সনাতন জাতিধর্ম ও কুলধর্মও বিনষ্ট হয়।
উত্সন্ন কুলধর্মানাম্‌ মনুষ্যনাম জনার্দন ।
নরকে নিয়তম্‌ বাসঃ ভবতী ইতি অনুশুশ্রুম্‌ ।৪৩।
অর্থ- হে জনার্দন যাদের কুলধর্ম নষ্ট হয়েছে তাদের নিয়ত নরকে বাস করতে হয়, আমি পরস্পরাক্রমে শুনেছি।


অহো বত মহত্ পাপম্‌ কর্তুম্‌ ব্যাবসিতা বয়ম্‌ ।
যত্ রাজ্যম্‌ সুখলোভেন হন্তুম্‌ স্বজনম্‌ উদ্যতাঃ ।৪৪।
অর্থ- হায়! কী দঃখের বিষয় যে রাজ্য সুখের লাভের আশায় স্বজনদের হত্যা করতে উদ্যত হয়ে মহাপাপে প্রবৃত্ত হইতেছি।
যদি মাম্‌ অপ্রতিকারম্‌ অশস্ত্রম্‌ শস্ত্রপানয়ঃ ।
ধার্তরাষ্ট্রাঃ রনে হন্যুঃ তত্ মে ক্ষেমতরম ভবেত্ ।৪৫।
অর্থ- প্রতিরোধ রহিত ও নিরস্ত্র অবস্থায় আমাকে যদি শস্ত্রধারী ধৃতরাষ্টের পুত্রেরা যুদ্ধে বধ করে তাহা হলে আমার অধিকতর মঙ্গল হবে।
সঞ্জয় উবাচ
এবম্‌ উক্তাঃ অর্জুন সংখ্যে রথোপস্থ উপবিশত্ ।
বিশৃজ্য সশরম চাপম্‌ শোক সংবিগ্ন মানসঃ ।৪৬।
অর্থ- সঞ্জয় বললেন রনক্ষেত্রে এই কথা বলে অর্জুন ধনুর্বান ত্যাগ করে শোকভারাক্রান্ত চিত্তে রথোপরি উপবেশন করিলেন। বলে অর্জুন ধনুর্বান ত্যাগ করে শোকভারাক্রান্ত চিত্তে রথোপরি উপবেশন করিলেন।
ওং তত্সদিতি শ্রীমদ্ভগবদ্গীতাসূপনিষত্সু ব্রহ্মবিদ্যাযাং যোগশাস্ত্রে শ্রীকৃষ্ণার্জুনসংবাদে
অর্জুনবিষাদযোগো নাম প্রথমোঽধ্যাযঃ ॥১॥

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

বিষ্ণু দশ অবতারের পরিচয়

বেদের চনৎকার কিছু শ্লোক।

হিন্দুদের দৈনিক প্রার্থনার মন্ত্র